রেলওয়ের জমির ‘লাভ খাচ্ছে’ মসিক, উচ্ছেদে বাধা
Published: 16th, May 2025 GMT
ময়মনসিংহ নগরীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি ইজারা দিয়ে কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের (মসিক) বিরুদ্ধে। গত বুধবার সকাল ১১টা থেকেই সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এর ৪ ঘণ্টা পরেই মসিকের প্রশাসক ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের টেলিফোনে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেল কর্তৃপক্ষের মতে, ময়মনসিংহ নগরীর ভেতর দিয়ে যে রেললাইন চলমান তার উভয় পাশে ৩০-৫০ ফুট জায়গা রেলওয়ের কেনা সম্পত্তি। তাদের অভিযোগের বেশিরভাগ জায়গা ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেদখল হয়ে গেছে। নগরীর ভেতর সানকিপাড়া ও মিন্টু কলেজ রেললাইনের পাশে বসে ময়মনসিংহের সবচেয়ে জমজমাট ও গুরুত্বপূর্ণ কাঁচাবাজার। এই দুটি বাজারই ইজারা দিয়ে রেখেছে সিটি কর্পোরেশনের বাজার বিভাগ।
পূর্বনির্ধারিত এই উচ্ছেদ অভিযান ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া বাজার এলাকায় শুরু হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) নাসির উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের পূর্বে উচ্ছেদের কথা শোনা গেলেও, এর ব্যাপকতা আঁচ করতে না পারায় অনেকেই তাদের দোকান ও মালামাল সরাতে পারেননি।
উপ-সচিব নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, অভিযান চলাকালে হঠাৎ ফোন আসে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো.
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন সূত্র থেকে জানা যায়, সানকিপাড়া রেলগেট বাজারে সর্বশেষ বাংলা ১৪৩১ সালে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়েছে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এর আগের দুই বছর সিটি কর্পোরেশন ইজারা পেয়েছে যথাক্রমে ১৩ লাখ ২৩ হাজার ও ১০ লাখ টাকা।
অপরদিকে জনবহুল আরেক বাজার মিন্টু কলেজ রেলগেইট বাজার থেকে সর্বশেষ বছরে ইজারা পেয়েছে ৪২ হাজার ৬৭০ টাকা, তার আগের ২ বছর ইজারা পেয়েছে ৬৯ হাজার ৬৭০ টাকা ও ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। এর আগে ময়মনসিংহ পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। মসিকের হিসেবে শুধু ২০১৮ সাল থেকেই রেলওয়ের এ দুটি বাজার ইজারা দিয়ে কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে তারা। অথচ নগরীতে এ বাজারগুলো প্রায় ৫০-৬০ বছর আগে থেকেই জমজমাটভাবে পরিচালিত হয়ে আছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব জায়গার মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। সিটি কর্পোরেশন অবৈধভাবে এসব জায়গা ইজারা দিয়েছে। বাজার ও দোকানপাট ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে মসিকের পক্ষ থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। অথচ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিজেরাও জনগণকে জমি ইজারা দিয়ে থাকে।
সানকিপাড়া এলাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে মাংস বিক্রি করেন আবুল কাশেম। সপ্তাহে ৪০০ টাকা ইজারা দেন তিনি। তিনি সমকালকে বলেন, আমরা জানতাম এই জায়গা সিটি কর্পোরেশনের। আমার বাবার আমল থেকে এই বাজারে ইজারা দিয়ে ব্যবসা করে আসছি। হঠাৎ করে দুদিন আগে রেল কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে আমাদের দোকান-পাট সব ভেঙে দেয়। এখন আমরা খোলা আকাশের নিচে দোকান নিয়ে বসেছি।
মাছ ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া জানান, রেললাইনের পাশে সিটি কর্পোরেশন শেড ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। আমরা সেখানে দীর্ঘদিন ইজারা দিয়ে ব্যবসা করছি। রেলের ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে হঠাৎ আমাদের বাজারটি ভেঙে দিয়েছে। পরে শেড ঘরটি ভাঙতে আসলে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ইজারাদাররা বাধা দিলে তারা ফেরত চলে যায়। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।
সানকিপাড়া বাজারের ইজারাদার তানভীরুল ইসলাম টুটুল বলেন, সিটি কর্পোরেশনের শিডিউলে ১৪ লাখ টাকা উল্লেখ থাকলেও ভ্যাটসহ ২৮ লক্ষ টাকা দিয়ে বাজারটি ইজারা নিয়েছি। শুনেছি ১৯৯০ সাল থেকে বাজারটি পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়ে আসছে। সে অনুযায়ী আমরা এবার সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে ইজারা নিয়েছি। হঠাৎ করেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আমাদের ৬০-৭০ টি দোকান ভেঙে দিয়েছে। এতে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) নাসির উদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, অভিযান চলাকালে বাধার মুখে পড়ে কিছুটা বিব্রতবোধ করেছি। পরে বিভাগীয় কমিশনারকে অনুরোধ করেছি রেল সচিবের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য। আমাদের পরিকল্পনা ছিল সানকিপাড়া থেকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা। কিন্তু শেডঘরটি ভাঙতে গেলেই প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে থেকে বিভিন্ন নির্দেশ আসতে থাকে। তবে আলোচনা শেষ হলে আমরা আবারও উচ্ছেদ অভিযানে নামবো।
বিশিষ্ট লেখক ও অধিকারকর্মী আবুল কালাম আজাদের ভাষ্য, রেলওয়ের জায়গা সিটি কর্পোরেশন কোনভাবেই যারা দিতে পারে না। জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ইজারা মূল্যের অল্প কিছু টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা তারা নিজেদের পকেটে ভরেছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের হঠাৎ অভিযানের কারণে শত শত ব্যবসায়ী পথে বসে গেছে। অবৈধভাবে যে টাকাগুলো লেনদেন হয়েছে সেগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সচিব (উপ-সচিব) সুমনা আল মজিদ বলেন, জায়গাটি রেলের হলেও বাজারটি জনস্বার্থে গড়ে উঠেছে। ঢাকা সিটিতে রেলের ১১টি জায়গায় বাজার ইজারা দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। যেহেতু বাজারে পাবলিক ফাংশন জড়িত, তাই সেখানে নাগরিক সেবার অনেক বিষয় আছে। সেজন্য এ বাজারগুলো সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন থাকাই ভালো।
তবে মসিকের প্রশাসক মো. মোখতার আহমেদ বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শুধুমাত্র বাজারের জায়গাটুকু যদি আমাদেরকে পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে ইজারাকৃত অংশটি বাদ দিয়ে বাকি অংশটি উচ্ছেদ করতে হবে। জায়গাটি রেলের এটা আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি, কিন্তু ইজারা থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব সরকারি কোষাগারেই জমা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ র লওয র লওয় র র ইজ র আম দ র ন ইজ র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সংখ্যানুপাতের ভিত্তিতে নয়, জনগণ মার্কা দেখে ভোট দিতে চায়: এমরান সালেহ
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স) বলেছেন, ভোটের সংখ্যানুপাতের ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচনের দাবি করছে কোনো কোনো মহল। কিন্তু জনগণ সংখ্যানুপাতের ভিত্তিতে নয়; সরাসরি প্রার্থী, মার্কা ও দল দেখে ভোট দিতে চায়। অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌক্তিক দাবি করে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা তৈরি না করে জাতীয় ঐক্য বজায় রেখে গণতন্ত্রের লক্ষ্যে নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহ নগরের নতুন বাজারের হরি কিশোর রায় সড়কে বিএনপির কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে এমরান সালেহ এ কথাগুলো বলেন। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৩৬ দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ দেশব্যাপী স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি চলছে। ময়মনসিংহ জেলা ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আয়োজনে রক্তদানের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এমরান সালেহ।
এমরান সালেহ বলেন, ‘ঐক্যের নামে এমন কিছু বিএনপি করতে পরে না, যা এ দেশের গণমানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও রীতিনীতির পরিপন্থী। আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী ১৫ বছরের গণতন্ত্রের লড়াই ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও পঙ্গুত্ববরণকারীরা আমাদের জাতীয় বীর। তাদের যথাযথ স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়া রাষ্ট্র ও জনগণের দায়িত্ব। জনগণের রায় নিয়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও পঙ্গুত্ববরণকারীসহ বিগত ১৫ বছরের গুম–খুনের শিকার ব্যক্তিরা প্রাপ্য মর্যাদা পাবেন।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বুকে ধারণ করেন। নেতা-কর্মীদেরও সেই আকাঙ্ক্ষা বুকে ধারণ করে পরিবর্তনের মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। জনগণ কষ্ট পায় বা পছন্দ করে না—এমন কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।’
জেলা ড্যাবের সভাপতি বদর উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সায়েম মনোয়ারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মুসা শাহিন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে অংশ নেন।