ময়মনসিংহ নগরীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি ইজারা দিয়ে কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের (মসিক) বিরুদ্ধে। গত বুধবার সকাল ১১টা থেকেই সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এর ৪ ঘণ্টা পরেই মসিকের প্রশাসক ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের টেলিফোনে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেল কর্তৃপক্ষের মতে, ময়মনসিংহ নগরীর ভেতর দিয়ে যে রেললাইন চলমান তার উভয় পাশে ৩০-৫০ ফুট জায়গা রেলওয়ের কেনা সম্পত্তি। তাদের অভিযোগের বেশিরভাগ জায়গা ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেদখল হয়ে গেছে। নগরীর ভেতর সানকিপাড়া ও মিন্টু কলেজ রেললাইনের পাশে বসে ময়মনসিংহের সবচেয়ে জমজমাট ও গুরুত্বপূর্ণ কাঁচাবাজার। এই দুটি বাজারই ইজারা দিয়ে রেখেছে সিটি কর্পোরেশনের বাজার বিভাগ।

পূর্বনির্ধারিত এই উচ্ছেদ অভিযান ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া বাজার এলাকায় শুরু হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) নাসির উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের পূর্বে উচ্ছেদের কথা শোনা গেলেও, এর ব্যাপকতা আঁচ করতে না পারায় অনেকেই তাদের দোকান ও মালামাল সরাতে পারেননি।

উপ-সচিব নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, অভিযান চলাকালে হঠাৎ ফোন আসে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো.

মোখতার আহমেদের কাছ থেকে। পরে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযান তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এর সম্পত্তিগুলো সম্পূর্ণ রেলের জমিতে। এসব জমি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন সূত্র থেকে জানা যায়, সানকিপাড়া রেলগেট বাজারে সর্বশেষ বাংলা ১৪৩১ সালে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়েছে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এর আগের দুই বছর সিটি কর্পোরেশন ইজারা পেয়েছে যথাক্রমে ১৩ লাখ ২৩ হাজার ও ১০ লাখ টাকা।

অপরদিকে জনবহুল আরেক বাজার মিন্টু কলেজ রেলগেইট বাজার থেকে সর্বশেষ বছরে ইজারা পেয়েছে ৪২ হাজার ৬৭০ টাকা, তার আগের ২ বছর ইজারা পেয়েছে ৬৯ হাজার ৬৭০ টাকা ও ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। এর আগে ময়মনসিংহ পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। মসিকের হিসেবে শুধু ২০১৮ সাল থেকেই রেলওয়ের এ দুটি বাজার ইজারা দিয়ে কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে তারা। অথচ নগরীতে এ বাজারগুলো প্রায় ৫০-৬০ বছর আগে থেকেই জমজমাটভাবে পরিচালিত হয়ে আছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব জায়গার মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। সিটি কর্পোরেশন অবৈধভাবে এসব জায়গা ইজারা দিয়েছে। বাজার ও দোকানপাট ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে মসিকের পক্ষ থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। অথচ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিজেরাও জনগণকে জমি ইজারা দিয়ে থাকে।

সানকিপাড়া এলাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে মাংস বিক্রি করেন আবুল কাশেম। সপ্তাহে ৪০০ টাকা ইজারা দেন তিনি। তিনি সমকালকে বলেন, আমরা জানতাম এই জায়গা সিটি কর্পোরেশনের। আমার বাবার আমল থেকে এই বাজারে ইজারা দিয়ে ব্যবসা করে আসছি। হঠাৎ করে দুদিন আগে রেল কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে আমাদের দোকান-পাট সব ভেঙে দেয়। এখন আমরা খোলা আকাশের নিচে দোকান নিয়ে বসেছি।

মাছ ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া জানান, রেললাইনের পাশে সিটি কর্পোরেশন শেড ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। আমরা সেখানে দীর্ঘদিন ইজারা দিয়ে ব্যবসা করছি। রেলের ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে হঠাৎ আমাদের বাজারটি ভেঙে দিয়েছে। পরে শেড ঘরটি ভাঙতে আসলে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ইজারাদাররা বাধা দিলে তারা ফেরত চলে যায়। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।

সানকিপাড়া বাজারের ইজারাদার তানভীরুল ইসলাম টুটুল বলেন, সিটি কর্পোরেশনের শিডিউলে ১৪ লাখ টাকা উল্লেখ থাকলেও ভ্যাটসহ ২৮ লক্ষ টাকা দিয়ে বাজারটি ইজারা নিয়েছি। শুনেছি ১৯৯০ সাল থেকে বাজারটি পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়ে আসছে। সে অনুযায়ী আমরা এবার সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে ইজারা নিয়েছি। হঠাৎ করেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আমাদের ৬০-৭০ টি দোকান ভেঙে দিয়েছে। এতে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। 

রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) নাসির উদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, অভিযান চলাকালে বাধার মুখে পড়ে কিছুটা বিব্রতবোধ করেছি। পরে বিভাগীয় কমিশনারকে অনুরোধ করেছি রেল সচিবের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য। আমাদের পরিকল্পনা ছিল সানকিপাড়া থেকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা। কিন্তু শেডঘরটি ভাঙতে গেলেই প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে থেকে বিভিন্ন নির্দেশ আসতে থাকে। তবে আলোচনা শেষ হলে আমরা আবারও উচ্ছেদ অভিযানে নামবো। 

বিশিষ্ট লেখক ও অধিকারকর্মী আবুল কালাম আজাদের ভাষ্য, রেলওয়ের জায়গা সিটি কর্পোরেশন কোনভাবেই যারা দিতে পারে না। জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ইজারা মূল্যের অল্প কিছু টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা তারা নিজেদের পকেটে ভরেছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের হঠাৎ অভিযানের কারণে শত শত ব্যবসায়ী পথে বসে গেছে। অবৈধভাবে যে টাকাগুলো লেনদেন হয়েছে সেগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। 

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সচিব (উপ-সচিব) সুমনা আল মজিদ বলেন, জায়গাটি রেলের হলেও বাজারটি জনস্বার্থে গড়ে উঠেছে। ঢাকা সিটিতে রেলের ১১টি জায়গায় বাজার ইজারা দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। যেহেতু বাজারে পাবলিক ফাংশন জড়িত, তাই সেখানে নাগরিক সেবার অনেক বিষয় আছে। সেজন্য এ বাজারগুলো সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন থাকাই ভালো। 

তবে মসিকের প্রশাসক মো. মোখতার আহমেদ বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শুধুমাত্র বাজারের জায়গাটুকু যদি আমাদেরকে পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে ইজারাকৃত অংশটি বাদ দিয়ে বাকি অংশটি উচ্ছেদ করতে হবে। জায়গাটি রেলের এটা আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি, কিন্তু ইজারা থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব সরকারি কোষাগারেই জমা হয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ র লওয র লওয় র র ইজ র আম দ র ন ইজ র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহ সীমান্তে বিজিবির টহল বেড়েছে, এলাকাবাসীও সতর্ক

দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সম্প্রতি মানুষজনকে ঠেলে পাঠানো শুরুর পর ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকায় টহল ও নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি কৃষকেরা ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় গরু চরাতেও যাচ্ছেন না।

গত বুধবার দিনভর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে সবার সতর্ক অবস্থান। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা শুরুর পর গুগল মানচিত্র থেকে বিএসএফের ক্যাম্পগুলো মুছে দেওয়া হয়েছে। তবে বিজিবির ক্যাম্পগুলো মানচিত্রে আছে। সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আগের লাল বাতির বদলে সাদা বাতি স্থাপন করছে বলে বিজিবির একটি সূত্র জানিয়েছে।

বুধবার দুপুরে হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া বিজিবি ক্যাম্পের ছয়জন সদস্যকে নীল পতাকা হাতে সীমান্ত এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়। বিপরীতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তোরা জেলার গাছুয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প। গোবরাকুড়া বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার মো. আজিবুল হাসান বলেন, ‘আমাদের জনবল বৃদ্ধি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। বিএসএফ কোনো অপতৎপরতা চালালে তা প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত। আমাদের এলাকা দিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পুশ ইনের ঘটনা ঘটেনি।’

হালুয়াঘাটের গাজীরভিটা ইউনিয়নের বরাক গ্রামে বান্দরাকাটা বিজিবি ক্যাম্প। বিপরীতে ভারতের নামছাড়া বিএসএফ ক্যাম্প। সীমান্ত সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে বিএসএফ ও বিজিবির টহল দেখা যায়। এলাকায় দাঁড়িয়ে কথা হয় বরাক গ্রামের সাইফুল ইসলামের (৪০) সঙ্গে। বলেন, বিএসএফ সদস্যসংখ্যা ও টহল নজরদারি বাড়িয়েছে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে আতঙ্কে থাকলেও এখন যুদ্ধ বন্ধ হওয়ায় আতঙ্ক কমেছে।

বরাক গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন (৩৮) বলেন, ‘আগে গরুকে খাওয়ানোর জন্য বর্ডারে গেলেও বিজিবি মাইকিং করে দিয়েছে আমরা যেন না যাই। তারপর থেকে সীমান্তে গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না।’ একই গ্রামের গিয়াস উদ্দিন (৬০) বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি টহল বাড়িয়েছে, সব সময় লোক আছেই। চাইলেই আমাদের দেশে কেউ ঢুকতে পারবে না। আমরাও সতর্ক আছি।’

ধোবাউড়ার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গাছুয়াপাড়া গ্রামে মাধুপাড়া বিজিবি ক্যাম্প। সীমান্তের ওপারে ভারতের নেত্রী বিএসএফ ক্যাম্প। হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া সীমান্ত সড়ক থেকে ৫ মিনিট সামনে হাঁটলেই পাহাড়ের ওপর বিএসএফের ক্যাম্প দেখা যায়। পাহাড়ের নিচ দিয়ে ভারতীয় যানবাহন চলাচল করছে। সরু একটি খাল পেরোলেই ভারতের সড়ক। হাতে দা নিয়ে খাল পার হয়ে এ পারে আসেন রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ধোবাউড়ার গাছুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

আরও পড়ুনবড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানো ৪৪ জনকে পুলিশে হস্তান্তর করল বিজিবি০৯ মে ২০২৫

রফিকুল বলেন, ‘জঙ্গল পরিষ্কার করার জন্য হাতে দা রাখি। সীমান্ত এলাকায় আমাদের পরিস্থিতি শান্ত আছে। এলাকায় আমরা যারা আছি, তারাও সতর্ক রয়েছি। বিজিবি টহল বাড়িয়েছে এবং আমাদেরও সতর্ক থাকতে বলেছে। সীমান্তে গরু নিতে নিষেধ করেছে।’
সীমান্ত এলাকায় মিনিট পাঁচেক থাকতেই ৩১ বিজিবির অধীনে থাকা মাধুপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা দ্রুত এলাকা ত্যাগ করতে বললেন। দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রমজান আলী বলেন, ‘সীমান্তের মানুষ খুব সতর্ক আছি। কোনো মানুষ এ দিক দিয়ে ভারতে প্রবেশ কিংবা ভারত থেকে আমাদের দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’

ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকায় টহল বাড়িয়েছে বিজিবি। গত বুধবার দুপুরে হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া সীমান্ত এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মহাসড়ক অবরোধ করে গতিরোধক স্থাপনের দাবি
  • ২০ লক্ষাধিক টাকার গাঁজাসহ দুই চিহ্নিত মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
  • নান্দাইলে প্রাইভেটকার চাপায় নিহত ১
  • ময়মনসিংহ সীমান্তে বিজিবির টহল বেড়েছে, এলাকাবাসীও সতর্ক
  • ময়মনসিংহে ছাত্রদল নেতার মাথায় ছুরিকাঘাত
  • ময়মনসিংহে ৬ বছর পর ছাত্রদলের জেলা ও মহানগর কমিটি
  • ময়মনসিংহে ডোবার পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
  • আকস্মিক অভিযানে হতবাক ব্যবসায়ীরা
  • ময়মনসিংহে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, সব হারিয়েছে ব্যবসায়ীরা