মো. নাজমুলের স্ত্রী কাজল বেগম চার দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৩ নম্বর প্রসূতি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। প্রতিদিনই তাঁকে জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী ক্যানুলা, সিরিঞ্জ ইত্যাদি কিনতে হয়। সঙ্গে গজ–ব্যান্ডেজ, ইউরিন ব্যাগ, কিছু ওষুধপত্রও কিনতে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নাজমুলের সঙ্গে কথা হয় হাসপাতালের নিচতলায় ন্যায্যমূল্যের দোকানের সামনে। এ সময় তিনি কিছু চিকিৎসাসামগ্রী কিনে প্রসূতি বিভাগে ফিরছিলেন।

নাজমুল বিল দেখিয়ে বলেন, ‘আমার স্ত্রী গর্ভপাত–সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে। আজ ৯৭৭ টাকার ওষুধপত্র কিনেছি। গতকাল কিনেছিলাম ৮০০ টাকার। প্রতিদিনই কিনতে হচ্ছ। সামান্য সিরিঞ্জ, ক্যানুলা—সবকিছু বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর তীব্র সংকট চলছে। মাসখানেক ধরে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সিরিঞ্জ, হ্যান্ড গ্লাভস, ক্যানুলাসহ জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী কিনে আনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। কখনো কখনো এ নিয়ে স্বজনদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

আমার স্ত্রী গর্ভপাত–সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে। আজ ৯৭৭ টাকার ওষুধপত্র কিনেছি। গতকাল কিনেছিলাম ৮০০ টাকার। প্রতিদিনই কিনতে হচ্ছ। সামান্য সিরিঞ্জ, ক্যানুলা—সবকিছু বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে।মো.

নাজমুল

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে–পরে বেশ কিছুদিন সময়মতো দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। যাঁরা আগে চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করতেন, তাঁরাও সময়মতো তা দিতে পারেননি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমান সংকটের মূল কারণ ঠিকাদারেরা কিছু সামগ্রীতে অস্বাভাবিক মূল্য দাবি করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগের দামের ১০ শতাংশের বেশি মূল্যে সামগ্রী কিনতে পারে না। যার জন্য চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসামগ্রীর কার্যাদেশ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এক মাসের বেশি সময় ধরে সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২ হাজার ২০০ শয্যার। কিন্তু এখানে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী থাকে। হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৩ লাখ ক্যানুলা, ৫০ হাজার ইউরিন ব্যাগ, ৮ লাখ সিরিঞ্জ দরকার হয়। বর্তমানে চাহিদার ২৫ শতাংশের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি ওয়ার্ডেই সংকট চলছে। মেডিসিন, শিশুস্বাস্থ্য, সার্জারি, নিউরোসার্জারি, অর্থোপেডিক, প্রসূতি বিভাগে এসব সামগ্রীর ব্যবহার বেশি হয়।

বাঁশখালীর শাহীন সুলতানা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মাসখানেক ধরে অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। ভর্তির পর থেকে কিছু ওষুধপত্র হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়। কিন্তু জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী কিনে নিতে হচ্ছে দোকান থেকে। শাহীনের মা তাহেরা বেগম ওষুধের ব্যাগ হাতে বিভাগে ঢুকছিলেন। তিনি বলেন, দু দিন পরপর ইনজেকশন, ব্যান্ডেজ, স্যালাইন ইত্যাদি কিনতে হয়। গতকাল এক হাজার টাকার ওষুধপত্র কিনেছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমান সংকটের মূল কারণ ঠিকাদারেরা কিছু সামগ্রীতে অস্বাভাবিক মূল্য দাবি করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগের দামের ১০ শতাংশের বেশি মূল্যে সামগ্রী কিনতে পারে না। যার জন্য চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসামগ্রীর কার্যাদেশ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এক মাসের বেশি সময় ধরে সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করে অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্রসহ নানা জটিলতায় সরবরাহ ঘাটতি হলে কিছু সামগ্রী বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। আবার সরবরাহ ঠিক হলে সংকট কেটে যায়।

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস খালেদ জানান, তাঁদের বিভাগে ২০ ও ২২ সাইজের আইভি ক্যানুলার সংকট রয়েছে। রোগীর স্বজনদের এগুলো নিয়ে আসতে হচ্ছে।

কয়েক মাস ধরে সিরিঞ্জ আইভি ক্যানুলা ছাড়া আমরা দরপত্রের কার্যাদেশ দিচ্ছি। আমাদের শতাধিক সামগ্রী একসঙ্গে দরপত্র দিতে হয়। একক সামগ্রী দরপত্র করার উপায় নেই। তাই শতাধিক সামগ্রীর মধ্যে যেসব বেশি চলে, সেগুলোর দাম তারা (ঠিকাদারেরা) বেশি দিয়ে রেখেছে। যার কারণে আমরা নিতে পারি না। ১০ শতাংশের বেশি দরে নিলে অডিট আপত্তির মুখে পড়তে হবে।হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন

এ সংকটের কারণে হাসপাতালের ন্যায্যমূল্যের দুটি দোকানেও ভিড় দেখা গেছে। রোগীর স্বজনেরা ওষুধ ও জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর জন্য চাহিদাপত্র (স্লিপ) নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা মাত্র সিরিঞ্জ নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছিলেন মো. আলমগীর। তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী কাউছার বেগম প্রসূতি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। একটা সিরিঞ্জের জন্য পঞ্চমতলা থেকে নিচে এসেছেন তিনি। এটা নিয়ে গেলে ইনজেকশন দেবে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে সিরিঞ্জ আইভি ক্যানুলা ছাড়া আমরা দরপত্রের কার্যাদেশ দিচ্ছি। আমাদের শতাধিক সামগ্রী একসঙ্গে দরপত্র দিতে হয়। একক সামগ্রী দরপত্র করার উপায় নেই। তাই শতাধিক সামগ্রীর মধ্যে যেসব বেশি চলে, সেগুলোর দাম তারা (ঠিকাদারেরা) বেশি দিয়ে রেখেছে। যার কারণে আমরা নিতে পারি না। ১০ শতাংশের বেশি দরে নিলে অডিট আপত্তির মুখে পড়তে হবে।’

হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, এ কারণে সিরিঞ্জ, আইভি ক্যানুলা ছাড়া কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে। তাই সংকট হচ্ছে কিছুটা। তবে এই জিনিসগুলোর দাম কম। তারপরও কীভাবে সমাধান করা যায় চেষ্টা করা হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দরপত র প রস ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যচুক্তি কি আসলেই সম্ভব

হোয়াইট হাউস রোববার ঘোষণা দিয়েছে, যত দিন না একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বিশদ আলোচনা হচ্ছে, তত দিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সাময়িকভাবে একে অপরের ওপর এপ্রিল মাসে আরোপিত আমদানি শুল্ক স্থগিত বা প্রত্যাহার করবে। এই ঘোষণা ব্যবসার জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বস্তি নিয়ে এসেছে এবং বাজারে আস্থা বাড়িয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের উত্তেজনা কিছুটা সংযত করা উচিত।

ব্যবসায়িক পটভূমি থেকে উঠে আসা ট্রাম্প শুল্ককে একটি দর-কষাকষির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি মনে করেন, আগ্রাসীভাবে চাপ বাড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারেরা বড় ধরনের ছাড় দিতে বাধ্য হবে এবং তিনি সেটিকে একটি রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে ঘোষণা করতে পারবেন। কিন্তু একটি বাণিজ্য চুক্তি করা রিয়েল এস্টেট চুক্তি করার মতো বিষয় নয়। এটি অনেক ধীর ও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়, যখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখি। কারণ, চীনের অর্থনীতি অনেক বড় (এবং সে কারণে তাদের প্রচুর প্রভাবও রয়েছে) এবং তারা সহজে ছাড় দিতে চায় না। ট্রাম্পের দাবির কাছে নতিস্বীকার করা চীনের জাতীয় অহমকে আঘাত করতে পারে এবং দেশে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

আবার চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে যদি ট্রাম্প পিছু হটেন, তাহলে এটি ট্রাম্পের বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হতে পারে। চীনা একটি প্রবাদ আছে, ‘একবার বাঘের পিঠে উঠলে নামা কঠিন।’ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই প্রবাদ বেশ প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে।

আমাদের একজন লেখক আগেও লিখেছিলেন, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি খসড়া করা কঠিন এবং তা কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব। ২০১৮-১৯ সালেই আমরা সেটার বাস্তব রূপ দেখেছি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে একটি চুক্তিতে মৌখিকভাবে সম্মত হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত আলোচনা চুক্তির শর্তাবলির নির্দিষ্টতা নিয়ে মতানৈক্যের কারণে তা ভেঙে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল একটি কঠোর ১৫০ পৃষ্ঠার চুক্তি, যেখানে চীনের জাতীয় পার্লামেন্টের মাধ্যমে আইনগত সংস্কারের বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। অন্যদিকে চীন চাইছিল একটি নমনীয়, নীতিনির্ভর কাঠামো, যেটি তারা কম দৃশ্যমান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারবে।

এ ছাড়া চুক্তি কার্যকর করার সমস্যা আছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যখন ‘পর্যায় এক’ বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, ট্রাম্প সেটিকে ঐতিহাসিক বিজয় বলে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, চীন দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ও সেবার ওপর অতিরিক্ত ২০০ বিলিয়ন ডলারের ক্রয় নিশ্চিত করেছে এবং আরও কিছু ছাড় দিয়েছে। কিন্তু ওই চুক্তিতে প্রচলিত বাণিজ্য চুক্তির মতো নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

ট্রাম্প নিজের ব্যবসায় অনিশ্চয়তা বা হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে লাভ করতে পারলেও, এই পদ্ধতি বিশ্ব বাণিজ্যে বড় ধরনের গোলমাল তৈরি করে। কারণ, বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহের পুরো ব্যবস্থা চলে নিয়ম, স্বচ্ছতা আর স্থিরতার ওপর—ধোঁকা বা হঠাৎ বদলের ওপর নয়।

এমনকি এটি এমনও ছিল না যে দুই পক্ষের কাছে শর্ত পূরণ করা শর্ত ভঙ্গের চেয়ে বেশি লাভজনক মনে হবে। ফলে চীন তাদের কেনার লক্ষ্য পূরণ না করলেও তখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের কার্যত কিছুই করার ছিল না।

আজকের দিনে, যদিও স্বল্প মেয়াদে শুল্ক তুলে নেওয়া হতে পারে, তবু চীনের এই বিশ্বাস করার তেমন কোনো কারণ নেই যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বা কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবে। বিশেষ করে ট্রাম্প যে পরিমাণ অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি করেছেন, তা বিবেচনায় রাখলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভরসা রাখা কঠিন।

শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোনো বাণিজ্য চুক্তি হলেও তা খুবই ভঙ্গুর, সীমিত পরিসরের হবে। ফলে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় চলমান বিঘ্নের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।

আসলে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে স্থায়ী ক্ষতি করেছে। খুচরা বিক্রেতারা অর্ডার বাতিল করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে, উৎপাদনকারী ও পরিবেশকেরা দ্রুত বিকল্প পথে পণ্য পাঠানো এবং পণ্য মজুত করতে বাধ্য হয়েছে, আর ব্যবসাগুলো একধরনের অস্থির পরিবেশে কাজ করছে।

এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট যে ছোট ও স্বল্পস্থায়ী পরিবর্তনও অতিরিক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী বিঘ্ন তৈরি করতে পারে। এটিকে সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্লেষকেরা ‘বুলহুইপ এফেক্ট’ বা চাবুকের বাড়ির প্রভাব হিসেবে মনে করেন।

এই প্রভাব এ বছরের বড়দিনের বাজারেও দেখা গেছে। চীনে তৈরি কোনো খেলনা যদি যুক্তরাষ্ট্রের দোকানে বড়দিনের ছুটির আগে পৌঁছায়, তাহলে তার উৎপাদনপ্রক্রিয়া শুরু করতে হয় মার্চ মাসেই; অর্থাৎ যখন খেলনা কোম্পানিগুলো ডিজাইন চূড়ান্ত করে এবং অর্ডার দেয়। সাধারণত এপ্রিল থেকে উৎপাদন শুরু হয়, আর জুলাইয়ের মধ্যে পণ্য চীনা কারখানা থেকে পাঠানো হয়, যাতে তা শরতের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে যায়।

খুচরা বিক্রেতারা এই দীর্ঘ কিন্তু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করেন মৌসুমি চাহিদা পূরণের জন্য।

কিন্তু ওঠানামা করা শুল্ক এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। খরচ অপ্রত্যাশিত হয়ে যাওয়ায় খুচরা বিক্রেতারা অর্ডার দিতে দ্বিধা করে, যার ফলে উৎপাদন ও পণ্য পরিবহন বিলম্বিত হয়। সরবরাহকারীরা তখন নতুন সুযোগ কাজে লাগাতে উৎপাদন লাইন পরিবর্তন করে। ফলে শুধু শুল্ক বাতিল করলেই উৎপাদন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না।

সুতরাং শুল্ক তুলে দিলে চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ ঘাটতি থাকবে, যার ফলে দাম আরও বাড়বে—এমন একটি সম্ভাবনা ট্রাম্প একটি সাম্প্রতিক মন্ত্রিসভা বৈঠকে অবহেলাভরে স্বীকার করেছিলেন।

পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে, পণ্যের উচ্চ মূল্য সরবরাহকারীদের কাছে ভুল সংকেত পাঠাতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে অতিরিক্ত সরবরাহের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে—যে সমস্যা মোকাবিলার জন্য শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। এই ওঠানামার চক্র (যা ‘বুলহুইপ এফেক্টের’ বৈশিষ্ট্য) স্থায়ী অস্থিরতা তৈরি করে।

এই রকম এক পরিস্থিতি আমরা কোভিড-১৯ মহামারির সময় দেখেছিলাম। তখন হঠাৎ কোয়ারেন্টিনের ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাপক ঘাটতি ও পণ্যের অতিরিক্ত মজুত তৈরি হয়েছিল, যার প্রভাব বছরব্যাপী টের পাওয়া গেছে।

তবে এবার এই বিশৃঙ্খলা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জনস্বাস্থ্য–সংকট থেকে আসেনি; এটি একটি ইচ্ছাকৃত নীতির ফল।

ট্রাম্প নিজের ব্যবসায় অনিশ্চয়তা বা হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে লাভ করতে পারলেও, এই পদ্ধতি বিশ্ব বাণিজ্যে বড় ধরনের গোলমাল তৈরি করে। কারণ, বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহের পুরো ব্যবস্থা চলে নিয়ম, স্বচ্ছতা আর স্থিরতার ওপর—ধোঁকা বা হঠাৎ বদলের ওপর নয়।

ট্রাম্প যেভাবে শুল্ক আরোপ করছেন বা তুলে দিচ্ছেন, তাতে শুধু শেয়ারবাজার না, সারা পৃথিবীর কারখানা, বন্দর আর দোকানগুলোতে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। অথচ বিনিয়োগকারী, নীতিনির্ধারক বা সাধারণ মানুষ এখনো পুরোপুরি বুঝতেই পারেননি এই সিদ্ধান্তগুলোর কত বড় প্রভাব পড়তে যাচ্ছে।

অ্যাঞ্জেলা হুয়েই ঝাং ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার আইন বিভাগের অধ্যাপক

এস অ্যালেক্স ইয়াং লন্ডন বিজনেস স্কুলের ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স ও অপারেশনস বিভাগের অধ্যাপক

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে ৯ কোটি টাকার পশুর হাটের দর পড়েছে ৬ কোটি
  • পাল্টা শুল্কের প্রভাবে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে ওয়ালমার্ট
  • পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধে নতুন পরিকল্পনা ভারতের
  •  সোনারগাঁয়ে চলছে ‘পাগলা গাছের মেলা’
  • বন্দরে এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রি'র ভুষি চুরি  মামলায় গ্রেপ্তার ২
  • গাজায় এবার মানবিক সহায়তা কেন্দ্র বানাচ্ছে ইসরায়েল, নেপথ্যে কী, যা দেখা গেল ছবিতে
  • চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট কেন থাকবে
  • এক বছরের কাজ শেষ হয়নি সাড়ে তিন বছরেও
  • যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যচুক্তি কি আসলেই সম্ভব