চট্টগ্রাম মেডিকেলে জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট, কিনে দিতে হয় ক্যানুলা, সিরিঞ্জও
Published: 17th, May 2025 GMT
মো. নাজমুলের স্ত্রী কাজল বেগম চার দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৩ নম্বর প্রসূতি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। প্রতিদিনই তাঁকে জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী ক্যানুলা, সিরিঞ্জ ইত্যাদি কিনতে হয়। সঙ্গে গজ–ব্যান্ডেজ, ইউরিন ব্যাগ, কিছু ওষুধপত্রও কিনতে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নাজমুলের সঙ্গে কথা হয় হাসপাতালের নিচতলায় ন্যায্যমূল্যের দোকানের সামনে। এ সময় তিনি কিছু চিকিৎসাসামগ্রী কিনে প্রসূতি বিভাগে ফিরছিলেন।
নাজমুল বিল দেখিয়ে বলেন, ‘আমার স্ত্রী গর্ভপাত–সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে। আজ ৯৭৭ টাকার ওষুধপত্র কিনেছি। গতকাল কিনেছিলাম ৮০০ টাকার। প্রতিদিনই কিনতে হচ্ছ। সামান্য সিরিঞ্জ, ক্যানুলা—সবকিছু বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর তীব্র সংকট চলছে। মাসখানেক ধরে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সিরিঞ্জ, হ্যান্ড গ্লাভস, ক্যানুলাসহ জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী কিনে আনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। কখনো কখনো এ নিয়ে স্বজনদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
আমার স্ত্রী গর্ভপাত–সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে। আজ ৯৭৭ টাকার ওষুধপত্র কিনেছি। গতকাল কিনেছিলাম ৮০০ টাকার। প্রতিদিনই কিনতে হচ্ছ। সামান্য সিরিঞ্জ, ক্যানুলা—সবকিছু বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে।মো.নাজমুল
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে–পরে বেশ কিছুদিন সময়মতো দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। যাঁরা আগে চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করতেন, তাঁরাও সময়মতো তা দিতে পারেননি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমান সংকটের মূল কারণ ঠিকাদারেরা কিছু সামগ্রীতে অস্বাভাবিক মূল্য দাবি করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগের দামের ১০ শতাংশের বেশি মূল্যে সামগ্রী কিনতে পারে না। যার জন্য চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসামগ্রীর কার্যাদেশ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এক মাসের বেশি সময় ধরে সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২ হাজার ২০০ শয্যার। কিন্তু এখানে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী থাকে। হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৩ লাখ ক্যানুলা, ৫০ হাজার ইউরিন ব্যাগ, ৮ লাখ সিরিঞ্জ দরকার হয়। বর্তমানে চাহিদার ২৫ শতাংশের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি ওয়ার্ডেই সংকট চলছে। মেডিসিন, শিশুস্বাস্থ্য, সার্জারি, নিউরোসার্জারি, অর্থোপেডিক, প্রসূতি বিভাগে এসব সামগ্রীর ব্যবহার বেশি হয়।
বাঁশখালীর শাহীন সুলতানা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মাসখানেক ধরে অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। ভর্তির পর থেকে কিছু ওষুধপত্র হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়। কিন্তু জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী কিনে নিতে হচ্ছে দোকান থেকে। শাহীনের মা তাহেরা বেগম ওষুধের ব্যাগ হাতে বিভাগে ঢুকছিলেন। তিনি বলেন, দু দিন পরপর ইনজেকশন, ব্যান্ডেজ, স্যালাইন ইত্যাদি কিনতে হয়। গতকাল এক হাজার টাকার ওষুধপত্র কিনেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমান সংকটের মূল কারণ ঠিকাদারেরা কিছু সামগ্রীতে অস্বাভাবিক মূল্য দাবি করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগের দামের ১০ শতাংশের বেশি মূল্যে সামগ্রী কিনতে পারে না। যার জন্য চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসামগ্রীর কার্যাদেশ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এক মাসের বেশি সময় ধরে সংকট আরও তীব্র হয়েছে।বিষয়টি স্বীকার করে অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্রসহ নানা জটিলতায় সরবরাহ ঘাটতি হলে কিছু সামগ্রী বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। আবার সরবরাহ ঠিক হলে সংকট কেটে যায়।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস খালেদ জানান, তাঁদের বিভাগে ২০ ও ২২ সাইজের আইভি ক্যানুলার সংকট রয়েছে। রোগীর স্বজনদের এগুলো নিয়ে আসতে হচ্ছে।
কয়েক মাস ধরে সিরিঞ্জ আইভি ক্যানুলা ছাড়া আমরা দরপত্রের কার্যাদেশ দিচ্ছি। আমাদের শতাধিক সামগ্রী একসঙ্গে দরপত্র দিতে হয়। একক সামগ্রী দরপত্র করার উপায় নেই। তাই শতাধিক সামগ্রীর মধ্যে যেসব বেশি চলে, সেগুলোর দাম তারা (ঠিকাদারেরা) বেশি দিয়ে রেখেছে। যার কারণে আমরা নিতে পারি না। ১০ শতাংশের বেশি দরে নিলে অডিট আপত্তির মুখে পড়তে হবে।হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীনএ সংকটের কারণে হাসপাতালের ন্যায্যমূল্যের দুটি দোকানেও ভিড় দেখা গেছে। রোগীর স্বজনেরা ওষুধ ও জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর জন্য চাহিদাপত্র (স্লিপ) নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা মাত্র সিরিঞ্জ নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছিলেন মো. আলমগীর। তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী কাউছার বেগম প্রসূতি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। একটা সিরিঞ্জের জন্য পঞ্চমতলা থেকে নিচে এসেছেন তিনি। এটা নিয়ে গেলে ইনজেকশন দেবে।
জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে সিরিঞ্জ আইভি ক্যানুলা ছাড়া আমরা দরপত্রের কার্যাদেশ দিচ্ছি। আমাদের শতাধিক সামগ্রী একসঙ্গে দরপত্র দিতে হয়। একক সামগ্রী দরপত্র করার উপায় নেই। তাই শতাধিক সামগ্রীর মধ্যে যেসব বেশি চলে, সেগুলোর দাম তারা (ঠিকাদারেরা) বেশি দিয়ে রেখেছে। যার কারণে আমরা নিতে পারি না। ১০ শতাংশের বেশি দরে নিলে অডিট আপত্তির মুখে পড়তে হবে।’
হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, এ কারণে সিরিঞ্জ, আইভি ক্যানুলা ছাড়া কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে। তাই সংকট হচ্ছে কিছুটা। তবে এই জিনিসগুলোর দাম কম। তারপরও কীভাবে সমাধান করা যায় চেষ্টা করা হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দরপত র প রস ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।