ক্রেগ ব্রাফেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট অধিনায়ক থেকে সরে দাঁড়ান গত মার্চে। তখন শাই হোপকে টি–টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব দেওয়া হলেও টেস্ট অধিনায়কের নাম ‘কিছুদিনের মধ্যে’ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছিল ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সিডব্লুআই)। মাঝের এই সময়ে টেস্ট অধিনায়ক বানাতে ছয়জনের সাক্ষাৎকার নেয় তারা। জন ক্যাম্পবেল, টেভিন ইমলাচ, জশুয়া দা সিলভা, জাস্টিন গ্রিভস, জোমেল ওয়ারিক্যান ও রোস্টন চেজের সাক্ষাৎকার এবং তাঁদের নেতৃত্বগুণ পর্যালোচনার পর শেষের জনকে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছে সিডব্লুআই।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়: সেই তারকারা এখন কে কোথায়১ ঘণ্টা আগে

গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক্স হ্যান্ডলে টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে চেজের নাম ঘোষণা করে সিডব্লুআই। ৩৩ বছর বয়সী এই স্পিন অলরাউন্ডারকে অধিনায়কত্ব দেওয়ার বিষয়ে ক্যারিবিয়ান বোর্ডের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশদ পর্যালোচনাপ্রক্রিয়া, যার মধ্যে রয়েছে নেতৃত্বগুণ, আচরণ এবং এই ভূমিকায় কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন, সেসব বিশ্লেষণ করতে সাইকোমেট্রিক পরীক্ষার পর’ চেজকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সিডব্লুআইয়ের এই বিশদ পরীক্ষায় সম্ভবত একটি বিষয় বাদ পড়েছে কিংবা বিবেচনাই করা হয়নি—নিয়মিত টেস্ট খেলা।

চেজ সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০২৩ সালের মার্চে। এর মধ্যে ১৩টি টেস্ট খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাদা বলের সংস্করণে নিয়মিত দেখা যায় চেজকে। ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টিতে এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কও ছিলেন চেজ। টেস্টে অনিয়মিত হলেও সেই চেজকেই এই সংস্করণে অধিনায়ক বানাল সিডব্লুআই।

আরও পড়ুননিজামের শহরে বাংলাদেশের সেই প্রথম ওয়ানডে জয়১৭ মে ২০২২

অধিনায়ক হিসেবে চেজের প্রথম সিরিজ জুনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন টেস্ট। ব্রিজটাউনে ২৫ জুন শুরু হবে প্রথম টেস্ট। অর্থাৎ দুই বছরের বেশি সময় আগে জোহানেসবার্গে ক্যারিয়ারের ৪৯তম টেস্ট খেলেছিলেন চেজ। দক্ষিণ আফ্রিকার ২৮৪ রানের জয়ের সেই ম্যাচ ৮ মার্চ শুরু হয়ে শেষ হয়েছিল ১১ মার্চ। তার পর থেকে আগামী জুনে শুরু হতে যাওয়া ব্রিজটাউন টেস্টের মাঝে কেটে যাবে ২ বছর ৩ মাস ১৩ দিন। শুধু দিনের হিসাব করলে ৮৩৬ দিন পর টেস্ট খেলতে নামবেন চেজ, যেখানে আবার তিনি হবেন অধিনায়ক এবং সেটি হবে তাঁর ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্টও। বাঁহাতি স্পিনার ওয়ারিক্যান থাকবেন চেজের সহকারীর ভূমিকায়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক হোপ টেস্ট সংস্করণে অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে বিবেচনা না করার অনুরোধ জানান বোর্ডকে। নিজের বর্তমান দায়িত্বই তিনি আরও ভালোভাবে পালন করতে চান।

আরও পড়ুনআইপিএলে মোস্তাফিজ ও পিএসএলে সাকিবের খেলা কবে১৪ ঘণ্টা আগে

চেজের টেস্ট অধিনায়ক হওয়া নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ড্যারেন স্যামি বলেছেন, ‘এই নিয়োগে আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। আমাদের নতুন অধিনায়ক তাঁর সতীর্থদের সম্মান অর্জন করেছেন, এই পদের দায়দায়িত্বও তিনি বোঝেন এবং নেতৃত্বগুণও দেখিয়েছেন।’

চেজের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ক্রেগ ব্রাফেট ৩৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দেন। ১০ জয়ের পাশাপাশি ২২ ম্যাচে হার এবং ৭ ড্র। চেজের নেতৃত্বের মাধ্যমে ২০২৫–২৭ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্র শুরু করবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান এ পর্যন্ত ৪৯ টেস্টে ২৬.

৩৩ গড়ে ২২৬৫ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ৫টি, ফিফটি ১১টি। টেস্ট অধিনায়ক হয়ে চেজের প্রথম কাজই হবে সম্ভবত এই সংস্করণে ব্যাটিংয়ে আরও ধারাবাহিক হওয়া। ৭২ ইনিংসে বোলিং করে ৮৫ উইকেট নিয়েছেন চেজ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স স করণ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

দোষ বিয়ারিং প্যাডের নয়, যারা লাগিয়েছে কিংবা বুঝে নিয়েছে, তাদের: ডিএমটিসিএল এমডি

মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এর মধ্যে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে একজন পথচারী মারা গেছেন। এবার নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করব। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।’

এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে আরেকটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।

বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’

ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না? যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’

আরও পড়ুনবৃষ্টির পানি ঢোকে, এসি বিকল হয়, মেট্রোরেল ব্যবস্থায় ৪৫ সমস্যা০২ নভেম্বর ২০২৫

এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনো আমরা বুঝে নিইনি।’

ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এ জন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব কটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।

আরও পড়ুনমেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড কী, খুলে পড়ার কারণ কী হতে পারে২৬ অক্টোবর ২০২৫

চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল দাবি করে ফারুক আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পর ছয় থেকে সাত বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় তিন বছর।

২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।

নতুন মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’

আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ