দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। তারা হোটেল শ্রমিক ছিলেন। 

শুক্রবার (১৬ মে) রাত ১টায় পৌরসভার সামনে ফুলবাড়ী-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফুলবাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন— ফুলবাড়ী পৌর এলাকার চক শাহবাজপুর গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো.

লুৎফর রহমানের ছেলে সোহাগ হোসেন (২৬) এবং বিরামপুর উপজেলার কুর্শাখালী বুকচী গ্রামের মৃত নজমুল হকের ছেলে মো. তোজাম্মেল হক (৩৬)। 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোহাগ হোসেন ফুলবাড়ী পৌর শহরের ঢাকা মোড়ে মজনু হোটেলে কাজ করতেন এবং তোজাম্মেল হক শহরের নিমতলা মোড়ে রাজধানী হোটেলে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে দুজন রাত ১টার দিকে ঢাকা মোড় থেকে মোটরসাইকেলে করে পৌর শহরের পশ্চিম গৌরীপাড়া ভাড়া বাসায় যাচ্ছিলেন। তারা পৌরসভার সামনে এলে বিরামপুর থেকে ছেড়ে আসা অজ্ঞাত একটি ট্রাক পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। সড়কের উপর ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই সোহাগ হোসেনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকৎসক সোহাগকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোজাম্মেল হকও মারা যান। 

ফুলবাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ধাক্কা দেওয়া ট্রাকটি পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় নিহত সোহাগ হোসেনের বড় ভাই রশিদুল ইসলাম বাদী হয়ে সড়ক আইনে অজ্ঞাত সেই ট্রাকের চালক ও সহোযোগীর নামে থানায় একটি এজাহার দাখিল করেছেন। শনিবার সকালে মরদেহ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঢাকা/মোসলেম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৫ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকবিহীন আদমজী এম.ডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আদমজীনগর মার্চেন্ট ওয়ার্কার্স (এম.ডব্লিউ) উচ্চ বিদ্যালয় গত পাঁচ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকবিহীনভাবে চলছে।

রাজনৈতিক প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে অচল হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কাঠামো, যার ফলে শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে বিপর্যস্ত।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সভায় বিদ্যালয়ের বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক গাজী নাজমুল হুদাকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক রওশন আরার একের পর এক হাইকোর্ট রিট দায়ের এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

তথ্য মতে, ২০২১ সালে নন-এমপিভুক্ত কেজি শাখার টিউশন ফি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি অভিযোগে প্রদান শিক্ষক গাজী নাজমুল হুদাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

কিন্তু তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। উল্টো প্রমাণ পাওয়া গেছে, তিনি ৭,৭৭,১৯৪ টাকা বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে জমা দিয়েছেন। এরপর শিক্ষা অধিদপ্তর ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন।

তবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং স্বৈরাচারী ঘরানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রধান শিক্ষক রওশন আরার রিট দায়ের করা, এই দুইয়ের চাপে গাজী নাজমুল হুদা এখনও বিদ্যালয়ে ফিরতে পারেননি।

সর্বশেষ হাইকোর্টের দেওয়া ৬ মাসের রিটের মেয়াদ ১৭ মে শেষ হয়েছে। চতুর্থ বারের মত তার যোগদান ঠেকাতে আবারও রিট দায়ের করা হচ্ছে বলে জানান গাজী নাজমুল হুদা।

এদিকে, বিদ্যালয়ে গত ৯ মাস ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, যিনি নিয়মিত কমিটি না থাকায় কাগুজে দায়িত্ব পালন করলেও কার্যত প্রশাসনিক কার্যক্রম অচল অবস্থায় রয়েছে।

গাজী নাজমুল হুদা বলেন, “আমি পাঁচ বছর ধরে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। বেতন না থাকায় স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মায়ের ভরণপোষণে হিমশিম খাচ্ছি। বিদ্যালয়ে যোগদান করতে পারলেই হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।”

অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির অভিযোগও ক্রমাগত বাড়ছে। রওশন আরার বিরুদ্ধে অডিটের নামে ১০ লক্ষাধিক টাকার অপচয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অর্থ কেটে নেওয়া, এবং অডিট কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করার অভিযোগ উঠেছে।

এক শিক্ষক বলেন, “রওশন আরা আমাদের জানিয়েছেন, অডিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে হলে টাকা লাগবে। এজন্য বেতন থেকে অংশ কেটে নিচ্ছেন।”

অভিভাবকদের অভিযোগ আরও গুরুতর। তাদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে একাধিকবার ‘মানববন্ধনের নাটক’ সাজানো হয়েছে।

এক অভিভাবক বলেন,“আমার সন্তানন জানেই না কেন তাকে মানববন্ধনে দাঁড় করানো হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাপ দিয়ে ওদের নামিয়ে আনে।”

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুরাইয়া আশরাফী বলেন,“ বোর্ডেও নির্দেশ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষককে স্বপদে পুনর্বহাল করা আইনগত এবং মানবিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক অচলাবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

এই পরিস্থিতিতে অভিভাবক ও এলাকাবাসী শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ দাবি করেছেন। তারা দ্রুত সরকারি তদন্ত কমিটি গঠন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, এবং যোগ্য প্রধান শিক্ষককে পুনর্বহালের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ