শাহরিয়ার হত্যার বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হবে: ডিএমপি কমিশনার
Published: 17th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার তদন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে এই মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো.
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন শাহরিয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন শাহরিয়ার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এই মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। অভিযোগপত্র দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি বলতে চাই, আমরা চেষ্টা করব এ অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটন করতে। সেই তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হবে।’
এ সময় ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এ ঘটনার তদন্ত একটি জটিল কাজ। ঘটনাটি গভীর রাতে ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকেই অসুস্থ ছিলেন। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে হেফাজতে নিই। পরে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী সাত দিনে তদন্ত শেষ করে চেষ্টা করব পুলিশের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ ব্রিফ দিতে।’
পুলিশের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই জানিয়ে শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, ‘আমরা অনেক দূর এগিয়েছি; কিন্তু তদন্তের খাতিরে সব বলতে পারছি না। তবে মনে করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এটার মূল ঘটনা উদ্ঘাটিত হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে। রোববার বিকেল তিনটায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে এ–সংক্রান্ত একটি বিশেষ সভা হবে।
আরও পড়ুনশাহরিয়ার হত্যায় গ্রেপ্তার তিনজন ৬ দিনের রিমান্ডে৭ ঘণ্টা আগেএর আগে উপাচার্যের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, কলা অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ, ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলমসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য তদন ত ড এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল
গত ৪৮ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে প্রায় ৩ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক গাজা শহরের দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তর।
শনিবার (১৭ মে) এক বিবৃতিতে তারা এই তথ্য জানায়। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েলের রক্তাক্ত ইতিহাসে আরও একটি ভয়াবহ অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। শুধু উত্তর গাজা গভর্নরেটেই গত দুই দিনে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের এই ধারাবাহিকতা স্পষ্টতই গণহত্যারই অংশ।”
গাজার মিডিয়া দপ্তর আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা ওই অঞ্চলের এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি, ৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে গাজা শহরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে তাদের আশ্রয় দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামোই নেই।
বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ইসরায়েলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাম্বুলেন্স ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের হামলার স্থানে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। ফলে প্রায় ১৪০ জনের লাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
এছাড়া উত্তর গাজার জাবালিয়ার তেল আল-জাতার এলাকা, বাইত লাহিয়া শহর ও আশপাশের এলাকায় শরণার্থীদের জন্য স্থাপন করা শত শত তাঁবু পুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি ড্রোনগুলো। গাজার মিডিয়া অফিস বলছে, এই ঘটনার সময় আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা ও নির্লজ্জ সহযোগিতা গভীর উদ্বেগজনক।
গাজা শহরের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিডিয়া অফিস। সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র বা তাঁবুর ঘাটতির কারণে হাজার হাজার পরিবারকে রাস্তায় বসবাস করতে হচ্ছে, বিশেষ করে আল-জালাআ স্ট্রিট ও আল-সাফতাউই এলাকায়। খাদ্য, পানি ও ওষুধের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি এবং টানা অবরোধ ও বিমান হামলার মধ্যে তারা চরম মানবিক সংকটে রয়েছেন।
এমন অবস্থায় জরুরিভিত্তিতে গণহত্যা বন্ধ করতে, উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক দল পাঠাতে, অবরোধ খুলে মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করতে এবং ইসরায়েলি নেতাদের আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক চার দিনের উপসাগরীয় দেশগুলোতে সফরের সময় ইসরায়েলি বাহিনী ৩৭৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর আগের চার দিনে এই সংখ্যা ছিল ১০০ জনের কাছাকাছি, অর্থাৎ ট্রাম্পের সফরকালীন নিহতের সংখ্যা প্রায় চারগুণ বেড়েছে — গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে আনাদোলু এই হিসাব পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রেখেছে। এরপর গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় গাজায় হামলা শুরু করে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।