মেসি-রোনালদো দ্বৈরথ: অতীতের সোনালি অধ্যায়ের মূল্যায়নে মুখ খুললেন মেসি
Published: 18th, May 2025 GMT
ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম দীর্ঘ ও তুমুল আলোচিত দ্বৈরথ—লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। দু’জনের ক্যারিয়ারজুড়ে চলা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে নানা সময়ে আলোচনা হয়েছে বিশ্বজুড়ে। এবার সেই প্রসঙ্গে নিজেই মুখ খুললেন আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসি।
সম্প্রতি ব্যালন ডি’অর আয়োজকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছেন, রোনালদোর সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রতিযোগিতা ছিল ‘স্বাস্থ্যকর এবং ইতিবাচক’, যা দু’জনকেই পারফরম্যান্সে সেরা হতে সহায়তা করেছে।
“এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমাদের দুজনের মধ্যেই ছিল না, এটি ফুটবল বিশ্বকে এক অন্যরকম আনন্দ দিয়েছে। সে সবসময় জিততে চাইত, আমিও। একে অপরের উপস্থিতি আমাদের নিজের সেরাটা বের করে আনতে বাধ্য করেছে,” — বলছিলেন মেসি।
আরো পড়ুন:
গোল বন্যার ম্যাচে নিষ্প্রভ মেসি, জয়বঞ্চিত মায়ামি
মায়ামিতে সবচেয়ে বড় হারের স্বাদ পেলেন মেসি
২০০৮ সালে রোনালদোর প্রথম ব্যালন ডি’অর জয়ের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার শুরু। ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে রোনালদোর চুক্তি সেই উত্তাপকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কারণ, তখনই এল ক্লাসিকোতে শুরু হয় আধুনিক যুগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দ্বৈরথ—বার্সেলোনার মেসি বনাম রিয়ালের রোনালদো।
পরিসংখ্যান বলছে, দু’জনের হাতে রয়েছে সম্মিলিতভাবে ১৩টি ব্যালন ডি’অর; মেসির ৮টি ও রোনালদোর ৫টি। ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জিতেছেন মেসি ৬ বার। আর বার্সেলোনার হয়ে করেছেন ৬৭২ গোল। অন্যদিকে রোনালদো চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা (১৪০ গোল) এবং তিনবার হয়েছেন ইউরোপের বর্ষসেরা ফুটবলার।
মেসি বলেন, “অনেকেই বলেন শীর্ষে ওঠা সহজ, কিন্তু সেখানে দীর্ঘসময় টিকে থাকা কঠিন। আমরা সেটাই করেছি—বছরের পর বছর নিজের সেরাটা দিয়ে গেছি। এটা আমাদের পরিশ্রম আর প্রতিশ্রুতির ফল।”
বর্তমানে যদিও তারা খেলছেন দুই ভিন্ন মহাদেশে—রোনালদো সৌদি আরবের আল নাসরে এবং মেসি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামিতে—তবু তাদের নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হলেই ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে ফিরে আসে সেই সোনালি যুগের স্মৃতি।
এটা নিছক এক প্রতিযোগিতা ছিল না; এটা ছিল সময়ের সাক্ষী হয়ে ওঠা ফুটবল ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়। মেসি-রোনালদো যুগ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও থাকবে কিংবদন্তির মতো।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।