শারজাহর মাঠ ছোট, বৈশ্বিক বিবেচনায় আরব আমিরাত প্রতিপক্ষ হিসেবেও ছোট। এই দুই ছোটর বিপক্ষেও প্রথম ম্যাচে দল হিসেবে ঝড় তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। পারভেজ হোসেন ইমন ৫৩ বলে ১০০ রান না করলে লো স্কোরিং ম্যাচ হয়ে যেত। কারণ ইমনের দিনে বাকি ব্যাটাররা ভালো খেলেননি। তাওহীদ হৃদয়ের ২০ রানই ছিল ইনিংসে দ্বিতীয় ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। 

সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ম্যাচে দলীয় পারফরম্যান্সের ওপরই ফোকাস থাকবে বেশি। কোচ ফিল সিমন্স ব্যাটারদের কাছ থেকে ইমপ্যাক্ট ইনিংস চান। প্রথম ম্যাচে ইমন ছাড়া কারও ব্যাটে ইমপ্যাক্ট ছিল না। একাদশে উদীয়মানদের সুযোগ দেওয়া হলেও তারা রান করতে পারেননি। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম, লিটন কুমার দাস, জাকের আলী, শামীম হোসেন পাটোয়ারীরা ব্যর্থ হন। ব্যাটিং ভালো না হলেও বোলিং দারুণ ছিল। 

তিন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ ও তানজিম সাকিব ভালো করেন। স্পিনে বাঁহাতি তানভির ইসলাম এক উইকেট পেলেও ইকোনমি ছিল চোখে পড়ার মতো। সে তুলনায় খরুচে ছিলেন সহঅধিনায়ক অফ স্পিনার শেখ মেহেদী। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আনা হতে পারে। মুস্তাফিজের জায়গায় দেখা যেতে পারে বাঁহাতি শরিফুল ইসলাম বা নাহিদ রানাকে। খেলতে পারেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।  

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচই বাংলাদেশ চাইবে ম্যাচ জিতে আজ সিরিজ নিশ্চিত করতে। অন্যদিকে স্বাগতিক সংযুক্ত আমিরাত চাচ্ছে দারুণ একটি কামব্যাকের মধ্য দিয়ে সিরিজ বাঁচাতে এবং সমতায় ফিরতে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ফয়জুন্নেছার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ভ্রমণ, পাঠ্যবইয়ে জীবনী অন্তর্ভুক্তির দাবি

কুমিল্লা নগর থেকে লাকসামে অবস্থিত উপমহাদেশের একমাত্র নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। প্রায় ১৫২ বছর আগে তিনি কুমিল্লা নগরের বাদুড়তলা এলাকায় নিজ নামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ওই বিদ্যালয়ের ২৪০ শিক্ষার্থী আজ সোমবার লাকসামের পশ্চিমগাঁওয়ে নবাববাড়ি পরিদর্শনে যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন প্রধান শিক্ষকসহ সাত শিক্ষক।

সকাল ৯টায় কুমিল্লা নগর থেকে বাসযোগে যাত্রা করে দলটি। বেলা দুইটা পর্যন্ত তারা নবাব ফয়জুন্নেছার স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন এ বাড়ি ঘুরে দেখে এবং তাঁর কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানায়। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা।

বাড়ি পরিদর্শনের সময় শিক্ষার্থীরা নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানায়। এ ছাড়া নবাববাড়িতে প্রবেশের একটি ঐতিহাসিক পথ বন্ধ করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি জমি দখল করে নবাববাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব পাশের ফটকের সামনে প্রাচীর নির্মাণ করছেন, ফলে ঐতিহাসিক চলাচলের পথটি বন্ধ হয়ে গেছে।

১৮৩৪ সালে লাকসামের পশ্চিমগাঁওয়ে জন্ম নেওয়া নবাব ফয়জুন্নেছা ছিলেন প্রজাহিতৈষী জমিদার, সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী। ১৮৭৩ সালে, বেগম রোকেয়ার জন্মের ৭ বছর আগে, তিনি কুমিল্লা নগরের বাদুড়তলায় মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং নিজ বাড়ির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ২০০৪ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

এসএসসি পরীক্ষার্থী আদিবা বিনতে আজাদ বলে, নবাববাড়ি ঘুরে দেখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। নবাব ফয়জুন্নেছার জীবনী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে, তাই সেটি দ্রুত পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আরেক শিক্ষার্থী আফরা ইসলাম বলে, সহপাঠীদের সঙ্গে দিনটি দারুণ কেটেছে। প্রতিষ্ঠাতার কবর জিয়ারত করে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে ভালো লেগেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, ‘আজকের প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা তাদের বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার বাড়ি ঘুরে দেখে মুগ্ধ হয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে, বেগম রোকেয়ার আগেই নবাব ফয়জুন্নেছা নারী শিক্ষার সূচনা করেছিলেন। তাঁর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত ছিল অনেক আগেই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছি।’

রাশেদা আক্তার আরও বলেন, ‘নবাববাড়ির যে ঐতিহাসিক ফটক দিয়ে ফয়জুন্নেছা হাতি ও ঘোড়া নিয়ে চলাচল করতেন, সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। আমরা দ্রুত পথটি উন্মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফয়জুন্নেছার নামে কুমিল্লা বা লাকসামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও দাবি জানিয়েছে।

জাতীয় জাদুঘরের আওতায় থাকা নবাববাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ ও দর্শনার্থীদের তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব পালন করেন মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে আসায় নবাববাড়ি প্রাঙ্গণ দিনভর মুখর ছিল।

কুমিল্লার ইতিহাস–গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতিবিজড়িত দৃষ্টিনন্দন এই বাড়ি অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। তাঁর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা কুমিল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ