দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর সংবাদ সম্মেলন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির নেতারা। আজ সোমবার বিকেলে নগরের মুন্সিপাড়ায় সংগঠনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতারা দাবি করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মকে বিতর্কিত করতে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, সদস্যসচিব আশফাক আহমেদ, মুখপাত্র ইয়াসির আরাফাত ও মুখ্য সংগঠক রিফাত হাসান। নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর পক্ষে সাফাই গাইলেও সংবাদ সম্মেলনে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি নেতারা।

এর আগে গতকাল রোববার রাতে জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর ও জেলা কমিটির ১৬ নেতা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ এই জরুরি সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য দেন সংগঠনের মুখপাত্র ইয়াসির আরাফাত। তিনি বলেন, সংগঠনের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৫ মে জেলা কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমানকে তাঁরা অব্যাহতি দেন। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের নামে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পদত্যাগ করেন মাহমুদুর। এরপর সংগঠনের অন্য সদস্যদের কাছে বিষয়টি ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনরংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৬ জনের পদত্যাগ২২ ঘণ্টা আগে

জেলা কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল রংপুর নগরের ঘাঘটপারে গ্রামীণ মেলার নামে জুয়া পরিচালনার লোকজনের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা নেওয়ার। এই অভিযোগটির ব্যাখ্যা দেন সদস্যসচিব আশফাক আহমেদ। তিনি উল্টো দাবি করেন, তাঁরা জুয়া বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন লোকজনের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু সফল হননি। টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা।

রংপুর সিটি করপোরেশনে ২৫ জনের চাকরি পুনর্বহাল নিয়ে জেলা আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকেরা। এ বিষয়ে আশফাক আহমেদ বলেন, বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে ওই কর্মচারীদের পক্ষে তাঁরা কথা বলেছেন। এখানে টাকা লেনদেনের প্রশ্ন আসবে কেন।

নগরের ক্রিকেট গার্ডেন মাঠে চলমান কুটিরশিল্প মেলা থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে। এই টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ইমরান আহমেদের সঙ্গে কমিটির এক যুগ্ম আহ্বায়কের অডিও রেকর্ড আছে—এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান দুই রকম বক্তব্য দেন। প্রথমে বলেন, তিনি টাকা নেননি। এসব তথ্য বানোনো। এখন এআই দিয়ে অনেক কিছু বানানো সম্ভব। আবার বলেন, তাঁদের কাছে যে কেউ ফান্ডিং (অর্থায়ন) করতে পারেন।

গত বছর ফেনীর বন্যার সময় উদ্বৃত্ত ত্রাণ তহবিলের ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়নি বলে দাবি করেন ইমরান আহমেদ। এই টাকা জেলা ও মহানগর কমিটি ভাগ করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আগামী বন্যায় এই টাকায় ত্রাণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া মিঠাপুকুরের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে চাঁদা আদায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নিয়োগ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

সংগঠনের নেতাদের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, বিভিন্ন অভিযোগে তাঁরা সংগঠনের সদস্যদের অব্যাহতি নিতে পারেন। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগুলোর বিষয়ে কে ব্যবস্থা নেবেন। এই প্রশ্নের উত্তর দেন মুখ্য সংগঠক রিফাত হাসান। তিনি বলেন, কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। জেলার শীর্ষ নেতাদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া নেতারা বলছেন, বিপ্লবী আন্দোলনের যে মূল্যবোধ ও আদর্শকে ধারণ করে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছিলেন, তা আজ গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁদের স্পষ্ট অবস্থান, এসব অপকর্মের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁরা এই অন্যায়ের দায় নিতে বাধ্য নন। এ কারণে পদত্যাগ করছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইমর ন আহম দ সদস যসচ ব পদত য গ স গঠন র কম ট র য গ কর সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

সাভারে গ্যারেজের মিস্ত্রিকে গুলি করে হত্যা 

সাভারে গাড়ির গ্যারেজের এক রং মিস্ত্রিকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার রাতে পৌর এলাকার এমপির ঢাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

নিহত যুবকের নাম মো. শাহিন (৩০)। তিনি সাভারের বলিয়াপুর কোটাপাড়া এলাকার কবির হোসেনের ছেলে। সাভার পৌর এলাকার রেডিও কলোনি মহল্লায় ভাড়া থেকে ঘটনাস্থলের পাশেই কামনা অটোমোবাইল গ্যারেজে রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। হত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

গ্যারেজের কর্মচারী আব্দুর রব বলেন, ‘শাহীন দুই বছর ধরে আমাদের সঙ্গে কাজ করতেন। তার সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল না। সোমবার সারাদিন তিনি গ্যারেজে কাজ করেছেন, সন্ধ্যায়ও গ্যারেজে ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে গ্যারেজ থেকে বের হলে সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।’ 

নিহতের ছোট ভাই আরিফ বলেন, ‘আমার ভাই তো কারও কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে কেন তাকে হত্যা করা হলো। এখন তার একমাত্র শিশু পুত্র এবং স্ত্রীর কী হবে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’ 

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া জানান, হত্যার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছি। তবে কী কারণে, কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ