প্রতি জেলার একটি নদী দখলমুক্তের পরিকল্পনা নিয়েছি: রিজওয়ানা হাসান
Published: 19th, May 2025 GMT
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, প্রতি জেলায় একটি নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ৫৩-৫৪ বছরে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ না করে নদীর ওপর অবকাঠামো গড়ে এবং এক ধরনের জেদ করে যে ক্ষতিটা আমরা করেছি, তা এক-দেড় বছরের সরকারের পক্ষে পুরোটা সমাধান করা সম্ভব না। তবে রূপরেখা করে যাওয়া সম্ভব।
সোমবার রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা ও নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আটঘরিয়ায় বড়াল নদী ও স্লুইসগেট পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বড়াল নদী খনন, স্লুইসগেট অপসারণ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
বড়াল নদীকে রক্ষা করতে গেছেন জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এ জন্য বড়াল নদী খনন করতে হবে এবং চারঘাট ও আটঘরিয়ায় বড়াল নদীতে স্লুইসগেটের আর দরকার নেই। সমন্বিত উদ্যোগে নদী খননসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু প্রকল্পের স্বার্থে নদীর প্রবাহে আর বাধা রাখা যাবে না। তিনি দায়িত্বে থাকতেই বড়াল নদীর স্লুইসগেট অপসারণ করা হবে বলেও জানান।
এদিকে পরিকল্পনা নিলেও প্রতি জেলার একটি নদী সম্পূর্ণ উদ্ধার করা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বল্প সময়ে শেষ করা সম্ভব নয় জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এ জন্য আমরা প্রতিটি বিভাগে একটি হিসেবে আটটি, কক্সবাজারের একটি এবং ঢাকার চারটি নদী নিয়ে পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। আগামী বাজেটে বরাদ্দ এনে এই কাজ শুরুর চেষ্টা করা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহিনুল হাসান, নাটোর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপার) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট স ল ইসগ ট পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
সাইকেল মেকানিকের ছেলে আশিক এখন বিসিএস ক্যাডার
৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন পাবনার সাইকেল মেকানিক শফিকুল ইসলামের ছেলে মো. আশিকুর রহমান (২৮)। এ সাফল্যের পেছনে বাবা ও ভাইয়ের অবদান আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিসিএস পরীক্ষায় ভাল ফল করতে আশিকুর রহমানের পরামর্শ—সব সময় সৎ ও ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আনা যাবে না।
আশিকুর রহমানের বাড়ি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের গোকুলনগর গ্রামে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি।
আশিকু রহমান বলেছেন,“আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা সাইকেল মেকানিক ছিলেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেশকিছু দূরে খিদিরপুর বাজারে গিয়ে সাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। যা আয় করতেন, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলত। আমাদের ভাই-বোনদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে ২০০২ সালে মা মারা যান। তখন বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বাবা আমাকে আগলে রাখতেন। কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেননি।”
আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন আশিকুর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।
এর পর থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতির পাশাপাশি চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন আশিকুর রহমান। ২০২৪ সালের ২০ জুন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এবার ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।
এই সাফল্যের পেছনে কার অবদান বেশি, জানতে চাইলে আশিকুর রহমান বলেন, “আমার সাফল্যে সবচেয়ে বেশি অবদান বাবার। সাইকেল মেরামতের কাজ করে আমার পড়ালেখার সব খরচ যুগিয়েছেন। কোনো অভাব রাখেননি। মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। আর একজন আমার মেঝো ভাই আমিরুল ইসলাম সবুজ। ডিপ্লোমা শেষ করে তিনি ঢাকায় চলে যান অভাবী সংসারের হাল ধরতে। নিজের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এই দুইজন মানুষ আমার সাফল্যের পেছনে মূল কারিগর।”
বাবার সঙ্গে ভাল লাগার স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে আশিকুর বলেন, “ছোটবেলা থেকেই আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। আবার আমি খুব দুরন্ত ছিলাম। বাবা সারাদিন কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফিরতেন। আমার যেদিন শ্বাসকষ্ট হতো, তখন কিভাবে যেন তিনি টের পেতেন। তখন রসুন দিয়ে সরিষার তেল গরম করে আমার বুকে মালিশ করে দিতেন বাবা। আমি সুস্থ হয়ে যেতাম।”
তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকে আমার লেখাপড়ার বিষয়ে বাবাকে কখনো কিছু ভুলে যেতে দেখিনি। খাতা, কলম যখন যেটা আনতে বলতাম, তিনি ঠিকই নিয়ে আসতেন। তিনি বাড়ির প্রয়োজনীয় অনেক কিছু আনতে ভুলে গেলেও আমার লেখাপড়ার কোনো জিনিস আনতে তাকে কখনো ভুলে যেতে দেখিনি। এটা আমার খুবই অবাক লাগে।”
চাকরিপ্রত্যাশীদের পরামর্শ দিতে গিয়ে আশিকুর রহমান বলেন, “সব সময় সৎ আর পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে যে, আমি পারবই, আমাকে পারতেই হবে। নেগেটিভ কোনো চিন্তা মাথায় আনা যাবে না।”
বাবা সাইকেল মেকানিক ছিলেন, এ পরিচয় দিতে কখনো সংকোচ বোধ করেন না আশিকুর রহমান। দেশের জন্য, দরিদ্র মানুষদের জন্য কাজ করতে চান তিনি। এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন আশিকুর রহমান।
ঢাকা/শাহীন/রফিক