রাশিয়া কেন ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়
Published: 19th, May 2025 GMT
তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনায় যোগ দিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা গত শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এসেছিলেন। তাঁদের দুই পক্ষের মধ্যকার পার্থক্য ছিল চোখে পড়ার মতো। এক পক্ষকে আত্মবিশ্বাসী ও সুসংগঠিত বলে মনে হয়েছে। তারা তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে একেবারে পরিষ্কার। আর অন্য পক্ষকে অসংগঠিত ও আত্মবিশ্বাসী নয়, এমন মনে হয়েছে।
সম্ভাব্য বন্দোবস্তের সীমারেখা সম্পর্কে রাশিয়ার অবস্থান দীর্ঘদিন ধরেই পরিষ্কার। যদিও ভূখণ্ড–সংক্রান্ত বিষয়টাতে রাশিয়া একটি হিসাবি কৌশলগত অস্পষ্ট অবস্থান বজায় রাখছে। এর কারণ হলো, এটা তাদের চাপ দেওয়ার সুবিধাজনক কৌশল। মস্কো অব্যাহতভাবে ইস্তাম্বুলে চুক্তিতে ফেরার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি, ২০২২ সালের বসন্তে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত চুক্তিটি ভেস্তে যায়।
এর বিপরীতে ইউক্রেনপন্থী জোটের অবস্থান ছিল বিশৃঙ্খল। যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রায় একটা নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। ইউক্রেন আর এর ইউরোপীয় মিত্ররা চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন যেন কিয়েভকে এমন কোনো শান্তিচুক্তির দিকে ঠেলে না দেয়, যেটা তাদের দৃষ্টিতে অপরিপক্ব ও অন্যায্য।
আরও পড়ুনপুতিনের যে সাত সত্যি জানেন না ট্রাম্প২৩ এপ্রিল ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার বলেন, এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারে, এমন যেকোনো পথকে ট্রাম্প প্রশাসন স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। অন্যদিকে ইউক্রেন ও এর ইউরোপীয় অংশীদারেরা শান্তি আলোচনা শুরু করার আগে ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতি প্রয়োজন বলে মনে করছে।
ইস্তাম্বুলে দুই পক্ষের আলোচনা শুরুর ঠিক আগে ইউক্রেন ঘোষণা দেয় যে একটা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা না এলে তারা রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না। ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনের এই দাবির প্রতি সমর্থন দেন। রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দেয়। যাহোক, শুক্রবার বিকেলে ইস্তাম্বুলে সরাসরি আলোচনা শুরুর আগে সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা ছিল ইউক্রেন নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসবে কি না।
আলোচনাস্থল থেকে বেরিয়ে প্রতিনিধিরা যখন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন, তখন তাঁরা এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি। দুই পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। সম্ভবত যুদ্ধবিরতির বিষয়টি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মুখরক্ষার জন্য আলোচনার বিষয় রাখা হয়েছে। তবে রাশিয়া চূড়ান্ত চুক্তির পরিষ্কার পথরেখা ছাড়া যুদ্ধবিরতিতে যেতে নিতান্তই অনিচ্ছুক।
পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ভূখণ্ড দখলকে রাশিয়া শাস্তি দেওয়ার পথ হিসেবে নিয়েছে। রাশিয়া মনে করে, ইউক্রেন অনমনীয়তা দেখাচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সম্প্রতি পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ইউক্রেন যতবার আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, তত তাদের ভূখণ্ড ছোট হয়ে যাবে।’কিন্তু এই যুদ্ধবিরতি খেলার লক্ষ্য কী, সেটা একেবারেই স্বচ্ছ। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে সেটা পরিষ্কার। যুদ্ধবিরতি হলে সেটা পরিষ্কারভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাবে। দর–কষাকষির ক্ষেত্রে রাশিয়ার মূল কৌশলগত সুবিধার জায়গা হচ্ছে ১০০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ সম্মুখরেখায় দেশটির সেনাবাহিনীর ধীরে হলেও ধারাবাহিক অগ্রগতি।
ইউক্রেন ও ইউরোপের পক্ষ থেকে এমনভাবে দাবিগুলোর নকশা করা হয়েছে, যেন সেগুলো প্রত্যাখ্যাত হয়। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো আলোচনাকে ভিন্ন দিকে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ফাটল তৈরি করা। তারা চায় তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলটি (ইউক্রেনকে সামরিকভাবে আরও সহায়তা ও মস্কোর ওপর নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়াকে পরাজিত করার প্রচেষ্টা) আবারও চালু করতে।
এই কৌশলে নতুন কিছু নেই। আর কৌশলটির কারণে তিন বছর ধরে ইউক্রেনকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। ইউক্রেনের বিশাল ভূখণ্ড হারিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ৬৯ লাখ মানুষ (এর বেশির ভাগই নারী ও শিশু) সম্ভবত চিরতরে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
আরও পড়ুনচীন কেন চায় না ইউক্রেন যুদ্ধ থামুক১৩ মে ২০২৫রাশিয়া একে কারসাজি হিসেবে দেখছে। সে কারণে রাশিয়া প্রত্যাশার চেয়ে অপেক্ষাকৃত নিম্ন স্তরের রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলকে পাঠিয়েছিল। তবে প্রতিনিধিদলে শীর্ষ পর্যায়ের সামরিক ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। তাঁরা সম্ভাব্য একটি চুক্তি ক্ষেত্রে সব ধরনের কারিগরি দিক নিয়ে আলোচনা করতে সক্ষম ছিলেন। এখানে বার্তাটি পরিষ্কার—মস্কো একটি বাস্তব দর–কষাকষির জন্য প্রস্তুত।
২০২২ সালে ইস্তাম্বুল আলোচনা সময় একটা মীমাংসায় পৌঁছনোর ক্ষেত্রে রাশিয়ার যে অবস্থান ছিল, সেটা পরিবর্তন হয়নি। রাশিয়া সে সময় একটা নিরপেক্ষ ইউক্রেন ও দেশটির জন্য ছোট আকারের সামরিক বাহিনীর শর্ত দিয়েছিল।
ভূখণ্ডের প্রশ্নে এখন কেবল রাশিয়ার পার্থক্য রয়েছে। ২০২২ সালের চুক্তির রূপরেখা অনুযায়ী, রাশিয়াকে সে বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আগ্রাসন শুরুর আগের নিয়ন্ত্রণরেখায় ফিরে যেতে হতো। কিন্তু রাশিয়া এখন সেই ভূখণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ দাবি করছে, যা তারা সেই চুক্তির পর দখল করেছে। ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার ভূখণ্ড নিয়ে রাশিয়া একধরনের কৌশলগত অস্পষ্টতা বজায় রাখছে। কারণ, একে তারা দর–কষাকষির অস্ত্র হিসেবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।
পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ভূখণ্ড দখলকে রাশিয়া শাস্তি দেওয়ার পথ হিসেবে নিয়েছে। রাশিয়া মনে করে, ইউক্রেন অনমনীয়তা দেখাচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সম্প্রতি পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ইউক্রেন যতবার আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, তত তাদের ভূখণ্ড ছোট হয়ে যাবে।’
তবে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ক্রেমলিনের মূল লক্ষ্য নয়। রাশিয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পশ্চিমা সামরিক জোটের সম্প্রসারণ ঠেকাতে সীমান্তে একটি পরিষ্কার লাল দাগ টেনে দেওয়া। সে কারণে তারা ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান পুনর্বহালের দাবি তুলেছে এবং দেশটির সেনাবাহিনীকে ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বলেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের যোগদানের ব্যাপারে রাশিয়ার আপত্তি তুলনামূলক কম। এর কারণ হলো, বাস্তবে এই সম্ভাবনা খুব একটা নেই। কেননা পোল্যান্ডসহ পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ ইউক্রেনের কৃষি খাতকে নিজেদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।
যুদ্ধক্ষেত্রের বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, এই যুদ্ধের অবসান কেবল রাশিয়ার শর্তেই হতে পারে। আর সেই শর্ত যত কর্কশ আর অন্যায্য হোক না কেন। রাশিয়ান বাহিনীর প্রতিদিনের অগ্রগতি ও ধীরে ধীরে ইউক্রেনের ভূখণ্ড হারানোর ঘটনা এটিকে স্পষ্ট করে তোলে। শান্তি আলোচনা যতই বিলম্বিত হচ্ছে, ইউক্রেনের আকার ততই ছোট হচ্ছে। পুতিন একজন রাজনৈতিক চাঁদাবাজের মতো আচরণ করছেন।
লিওনিদ রাগোজিন লাটভিয়ার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
আল-জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র পর ষ ক র অবস থ ন র র পর র জন য র অবস ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রিটিশ ভারত থেকে হজযাত্রা
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশে হজযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সামাজিক ঘটনা ছিল, যা বাষ্পীয় জাহাজের আগমনের সঙ্গে আরও সংগঠিত ও নিরাপদ রূপ লাভ করে। ব্রিটিশ সরকার এই যাত্রার ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা শুধু ধর্মীয় নয়, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।
বাষ্পীয় জাহাজে
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাষ্পীয় জাহাজের বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হলে হজযাত্রা আরও সহজ ও দ্রুততর হয়। ব্রিটিশ সরকার হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব দেয় সে সময়ের বিখ্যাত পর্যটন কোম্পানি টমাস কুককে। বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং মুসলিমদের ধর্মীয় ভ্রমণ নিরাপদ করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রশাসন হজ এবং ইরাকের কারবালায় ভ্রমণের জন্য নিরাপদ জাহাজ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়।
১৯২৭ সালে হজযাত্রার দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য বোম্বের (বর্তমান মুম্বাই) পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি হজ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি হজযাত্রীদের জন্য পরিবহন, থাকা-খাওয়া এবং অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করে।
মোগল শিপিং লাইনস ও হজযাত্রী পরিবহন
ভারতীয় সমুদ্রবন্দর থেকে হজযাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল ‘মোগল শিপিং লাইনস’-এর। এই কোম্পানি, যার পূর্বনাম ছিল ‘বোম্বে অ্যান্ড পার্শিয়া স্টিম নেভিগেশন কোম্পানি’, ১৮৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাণিজ্যিক কার্যক্রমের পাশাপাশি এটি হজযাত্রীদের জেদ্দায় পরিবহনের দায়িত্ব পালন করে। ১৯২৭ সালে মোগল শিপিং লাইনস ২০ হাজার থেকে ৩৬ হাজার হজযাত্রী পরিবহন করে, এবং ১৯৩০ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ হজযাত্রী তাদের জাহাজে ভ্রমণ করে। বছরের ছয় থেকে সাত মাস ধরে এই কোম্পানির জাহাজ বর্তমান বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের হজযাত্রীদের লোহিত সাগরের জেদ্দা ও এডেন বন্দরে নিয়ে যেত।
বোম্বে থেকে জেদ্দায় যাত্রায় বাষ্পীয় জাহাজগুলো সাধারণত ১০-১২ দিন সময় নিত, যদিও অশান্ত সমুদ্র প্রায়ই যাত্রাকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলত। এই জাহাজে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আশপাশের দেশের হজযাত্রীরাও ভ্রমণ করতেন।
আরও পড়ুনমদিনার হজ কার্যালয় যেন 'বাংলাদেশ'২২ জুন ২০২৪মোগল শিপিং লাইনস তাদের একচেটিয়া ব্যবসার কারণে আগ্রাসী হয়ে ওঠে এবং কলকাতা বন্দর থেকে হজযাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে ভারত সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এর প্রতিক্রিয়ায়, বিশেষ করে বাঙালি মুসলিমরা বিকল্প হিসেবে ভারতীয় মালিকানাধীন ‘সিন্ধিয়া স্টিম নেভিগেশন কোম্পানি’কে পৃষ্ঠপোষকতা করে। সিন্ধিয়ার জাহাজ ‘আল মদিনা’ হজযাত্রীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়।
মোগল শিপিং লাইনস এবং সিন্ধিয়ার মধ্যে হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়। উভয় কোম্পানি টিকিটের মূল্য কমিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে। সিন্ধিয়া প্রায় বিনা মূল্যে হজযাত্রী পরিবহন করে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অন্যদিকে মোগল শিপিং লাইনস বিনা মূল্যে পরিবহনের পাশাপাশি হজযাত্রীদের ছাতা এবং জমজমের পানি বহনের জন্য কনটেইনার উপহার দিত। এই প্রতিযোগিতা তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক মহলে আলোচিত বিষয় হয়ে ওঠে।
প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব স্যার মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খানের উদ্যোগে দুই কোম্পানির মধ্যে একটি সমঝোতা হয়, যেখানে হজযাত্রীপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১১৫ রুপি। তবে মোগল শিপিং লাইনস এই সমঝোতা মেনে চলেনি এবং সিন্ধিয়ার তুলনায় কম ভাড়ায় হজযাত্রী পরিবহন অব্যাহত রাখে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হজযাত্রী পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুনহজ করতে গিয়ে মক্কা মদিনায় হারিয়ে গেলে কী করবেন০৮ মে ২০২৪ব্রিটিশ শাসনের পরে
১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ভারত সরকার বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানিকে রাষ্ট্রায়ত্ত করে, এবং ১৯৬২ সালে মোগল শিপিং লাইনস ভারত শিপিং করপোরেশনের অংশ হয়ে যায়। ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই হজযাত্রীদের জন্য পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলে।
পাকিস্তান সরকার ১৯৫৮ সালে হজযাত্রী পরিবহনের জন্য ‘এম্পায়ার অরওয়েল’, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘সারধানা’, এবং মোগল লাইনসের ‘ইসলামি’ ও ‘মুহাম্মদি’ জাহাজ ভাড়া করে। এর মধ্যে ‘সারধানা’ চট্টগ্রাম ও করাচি বন্দর থেকে জেদ্দায় হজযাত্রী পরিবহন করত। ১৯৬০ সালে প্যান ইসলামিক স্টিমশিপ কোম্পানি চট্টগ্রাম ও করাচি থেকে হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
আরও পড়ুনমদিনার হজ কার্যালয় যেন 'বাংলাদেশ'২২ জুন ২০২৪সমুদ্রপথ থেকে বিমানে
ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বোম্বে-জেদ্দা রুটে ইন্ডিয়া শিপিং করপোরেশনের জাহাজ সার্ভিস ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলে। এর পর থেকে বিমান হজযাত্রার প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে। বিমানযাত্রার সহজলভ্যতা ও দ্রুততার কারণে সমুদ্রপথে হজযাত্রা ক্রমেই বিলুপ্ত হয়।
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশে হজযাত্রা ছিল ধর্মীয়, সামাজিক ও বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। টমাস কুকের মতো এজেন্ট, হজ কমিটি এবং মোগল শিপিং লাইনসের মতো জাহাজ কোম্পানিগুলো এই যাত্রাকে সংগঠিত ও নিরাপদ করতে অবদান রাখে। মোগল শিপিং লাইনস এবং সিন্ধিয়ার প্রতিযোগিতা হজযাত্রীদের জন্য ভাড়া কমালেও ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণ হয়। কালের পরিক্রমায় সমুদ্রপথের পরিবর্তে বিমানযাত্রা হজযাত্রার প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে, তবে ব্রিটিশ আমলের এই ঐতিহ্য ইতিহাসের একটি অমূল্য অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে।
আরও পড়ুনবিরে শিফা: একটি অলৌকিক কুয়ার গল্প০৫ মে ২০২৫