বাংলাদেশে তরুণ কর্মক্ষম লোকের হার অনেক বেশি। তাঁদের একটা বড় অংশই আবার বেকার। এ সমস্যা দূর করার জন্য দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন আজ সোমবার সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি ২০১৮ সালের ৪ জুন আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে এ দেশে যোগ দেন। প্রায় সাত বছর দায়িত্ব পালনের পর বাংলাদেশে তাঁর শেষ কর্মদিবস হবে ৩১ মে।

আইএলওর আঞ্চলিক কার্যালয় অর্থাৎ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডেপুটি আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে শিগগিরই যোগ দিতে যাচ্ছেন টুমো পুটিআইনেন। তাঁর বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আইএলও ঢাকা কার্যালয়।

সংবাদ সম্মেলনে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, কারিগরি শিক্ষায় বিনিয়োগে সরকারের মনোযোগ দরকার। যাতে শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করা সহজ হয়।

টুমো পুটিআইনেন বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে যান, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের কাজের নিশ্চয়তা থাকে না। বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রেও থাকে অস্বচ্ছতা। টাকাও নেওয়া হয় অনেক বেশি। দক্ষ শ্রমগোষ্ঠী গড়ে তুলতে পারলে এসব বিষয়ে বিদেশগামী লোকেরা অধিকতর সচেতন থাকতে পারবেন।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করার ব্যাপারেও বাংলাদেশের মনোযোগ চান আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর। তিনি বলেন, যাঁরা কোনো চাকরিতে নিয়োজিত আছেন, তাঁদের হয়তো সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার আওতায় থাকার দরকার নেই। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে যেতে হবে।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর বাংলাদেশের পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর। তিনি বলেন, বিপুল শ্রমিক নিয়োজিত আছেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে ধীরে ধীরে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে রূপ দিতে হবে। তখন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বেশি কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে।

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ করে টুমো পুটিআইনেন শ্রমিকের স্বার্থে বিদ্যমান শ্রম আইন সংশোধনের তাগিদ দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন আইএলওর ক ন ট র প ট আইন ন

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রমিক অধিকার ও সুরক্ষায় কাজ করবে বেপজা ও আইএলও

রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা বা ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিতে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। সংস্থা দুটি শ্রমিকের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে শ্রম আইন সংস্কার, শ্রম আইন প্রয়োগ, শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষায়ও একসঙ্গে কাজ করবে সংস্থা দুটি।

রাজধানীর গ্রিনরোডে বেপজা কার্যালয়ে আজ সোমবার এ বিষয়ে সংস্থা দুটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী দুই বছরে বেপজার আওতাধীন ইপিজেডের শ্রম প্রশাসন, দায়িত্বশীল ব্যবসা কার্যক্রম ও কর্মসংস্থানজনিত দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণে আলাদাভাবে কাজ করবে বেপজা ও আইএলও।

বেপজা বলছে, এই চুক্তির ফলে বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগের আস্থা বাড়বে। এ ছাড়া বেপজার আওতাধীন ইপিজেডগুলোয় কর্মরত শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও সহযোগিতা করবে আইএলও। চুক্তিতে বলা হয়, শ্রম প্রশাসন খাতের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক শ্রম মানের (আইএলএস) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইপিজেড শ্রম আইনের খসড়া প্রস্তুত, শিল্প ব্যবস্থাপনা নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ ও শ্রমিকের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে গবেষণা করা হবে। এ ছাড়া দায়িত্বশীল ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি ইপিজেডকে মডেল জোন হিসেবে তৈরি করা হবে। যেখানে শ্রম প্রশাসন উন্নয়নে বেপজার সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মকর্তাদের শ্রম অধিকার ও নীতিমালার ওপর প্রশিক্ষণ, অংশীজনদের আলোচনার সুবিধার্থে বেপজার একজন ফোকাল পয়েন্ট মনোনয়ন, শ্রম অধিকার, পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল ও শিল্পসম্পর্কিত বিষয়ে শ্রমিক ও মালিকদের মৌলিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করবে সংস্থা দুটি।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেপজার অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক নাজমুল ইসলাম ও আইএলওর প্রযুক্তি কর্মকর্তা ছায়ানিচ থামপরিপাত্রা। স্বাগত বক্তব্য দেন বিনিয়োগ উন্নয়ন বিভাগের সদস্য মো. আশরাফুল কবীর।

অনুষ্ঠানে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘একসময় এমন একটা মনোভাব তৈরি হয়েছিল যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএলও ভেবে নিয়েছিল যে আমরা সহযোগিতা করতে চাই না। তবে আমরা শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইএলও কনভেনশনগুলোর সঙ্গে একটি দেশ হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। এই সমঝোতা চুক্তি আমাদের শিল্পের পরিবেশ ও শ্রমিকের অধিকার দুই ক্ষেত্রেই একটি আদর্শ মানদণ্ড হিসেবে কাজ করবে। ’

বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, এই চুক্তি শ্রমিকের নিরাপদ ও সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ তৈরি মাধ্যমে বাংলাদেশে শ্রম মানদণ্ড উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। টেকসই শিল্প খাত গড়ে তুলতে ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে এই চুক্তি।

আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন বলেন, ‘আমাদের এই কর্মপরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো শ্রম আইন ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি শ্রমিকদের সুরক্ষায় তাঁদের অভিযোগ কাঠামোর সক্ষমতা বাড়ানো। যাতে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চুক্তির আওতায় কর্মসংস্থানজনিত দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ কর্মসূচি বা এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিমের (ইআইএস) নামে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হবে। যেখানে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ মামলা যাচাই ও অনুমোদনের জন্য বেপজার পক্ষ থেকে একটি কমিটি করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রমিক অধিকার ও সুরক্ষায় কাজ করবে বেপজা ও আইএলও