শ্রমিক অধিকার ও সুরক্ষায় কাজ করবে বেপজা ও আইএলও
Published: 19th, May 2025 GMT
রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা বা ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিতে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। সংস্থা দুটি শ্রমিকের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে শ্রম আইন সংস্কার, শ্রম আইন প্রয়োগ, শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষায়ও একসঙ্গে কাজ করবে সংস্থা দুটি।
রাজধানীর গ্রিনরোডে বেপজা কার্যালয়ে আজ সোমবার এ বিষয়ে সংস্থা দুটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী দুই বছরে বেপজার আওতাধীন ইপিজেডের শ্রম প্রশাসন, দায়িত্বশীল ব্যবসা কার্যক্রম ও কর্মসংস্থানজনিত দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণে আলাদাভাবে কাজ করবে বেপজা ও আইএলও।
বেপজা বলছে, এই চুক্তির ফলে বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগের আস্থা বাড়বে। এ ছাড়া বেপজার আওতাধীন ইপিজেডগুলোয় কর্মরত শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও সহযোগিতা করবে আইএলও। চুক্তিতে বলা হয়, শ্রম প্রশাসন খাতের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক শ্রম মানের (আইএলএস) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইপিজেড শ্রম আইনের খসড়া প্রস্তুত, শিল্প ব্যবস্থাপনা নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ ও শ্রমিকের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে গবেষণা করা হবে। এ ছাড়া দায়িত্বশীল ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি ইপিজেডকে মডেল জোন হিসেবে তৈরি করা হবে। যেখানে শ্রম প্রশাসন উন্নয়নে বেপজার সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মকর্তাদের শ্রম অধিকার ও নীতিমালার ওপর প্রশিক্ষণ, অংশীজনদের আলোচনার সুবিধার্থে বেপজার একজন ফোকাল পয়েন্ট মনোনয়ন, শ্রম অধিকার, পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল ও শিল্পসম্পর্কিত বিষয়ে শ্রমিক ও মালিকদের মৌলিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করবে সংস্থা দুটি।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেপজার অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক নাজমুল ইসলাম ও আইএলওর প্রযুক্তি কর্মকর্তা ছায়ানিচ থামপরিপাত্রা। স্বাগত বক্তব্য দেন বিনিয়োগ উন্নয়ন বিভাগের সদস্য মো.
অনুষ্ঠানে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘একসময় এমন একটা মনোভাব তৈরি হয়েছিল যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএলও ভেবে নিয়েছিল যে আমরা সহযোগিতা করতে চাই না। তবে আমরা শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইএলও কনভেনশনগুলোর সঙ্গে একটি দেশ হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। এই সমঝোতা চুক্তি আমাদের শিল্পের পরিবেশ ও শ্রমিকের অধিকার দুই ক্ষেত্রেই একটি আদর্শ মানদণ্ড হিসেবে কাজ করবে। ’
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, এই চুক্তি শ্রমিকের নিরাপদ ও সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ তৈরি মাধ্যমে বাংলাদেশে শ্রম মানদণ্ড উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। টেকসই শিল্প খাত গড়ে তুলতে ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে এই চুক্তি।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন বলেন, ‘আমাদের এই কর্মপরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো শ্রম আইন ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি শ্রমিকদের সুরক্ষায় তাঁদের অভিযোগ কাঠামোর সক্ষমতা বাড়ানো। যাতে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চুক্তির আওতায় কর্মসংস্থানজনিত দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ কর্মসূচি বা এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিমের (ইআইএস) নামে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হবে। যেখানে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ মামলা যাচাই ও অনুমোদনের জন্য বেপজার পক্ষ থেকে একটি কমিটি করা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও আইএলও অন ষ ঠ ন ক জ করব পর ব শ স রক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামী-স্ত্রী ছিলেন কারখানায়, আগুন লাগার পর দুজনই নিখোঁজ
ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়ির আরএন ফ্যাশনস ভবনে আগুন নেভাতে যখন ফায়ার সার্ভিস কাজ করছিল, তখন বাইরে আরও অনেকের সঙ্গে আহাজারি করছিলেন ইয়াসমিন বেগম। তার হাতে মেয়ে মার্জিয়া সুলতানা ও জামাতা মোহাম্মদ জয়ের ছবি।
পাঁচতলা ওই ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা নিয়ে ছিল আরএন ফ্যাশন। সেখানে একসঙ্গে কাজ করতেন জয় ও মার্জিয়া। জয় অপারেটর, আর মার্জিয়া হেলপার।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তাঁরা নিখোঁজ। বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে আহাজারি করতে দেখা যায় মার্জিয়ার মা ইয়াসমিন বেগমকে। তিনি বলছিলেন, ‘আল্লারে তুমি আমার মাইয়া আর তার জামাইডারে বাঁচাই দাও আল্লাহ। তাগো তুমি রক্ষা কইরো আল্লাহ।’
প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় মার্জিয়ার বাবা মোহাম্মদ সুলতানের। তিনি বলেন, দুপুর ১২টার একটু আগে আগুন লাগার খবর শুনে প্রথমে তিনি ফোন করেন মেয়েজামাই জয়কে। কিন্তু জয় ফোন ধরেননি। পরে মেয়ে মার্জিয়াকে ফোন করেন। মেয়ে ফোন ধরলেও বিস্তারিত বলতে পারেননি।
সুলতান বলেন, ‘মেয়েরে জিগাইলাম, আম্মু তুমি কই? আগুন নাকি লাগসে? মেয়ে কানতে কানতে কইল, আগুন লাগসে অফিসে। বের হতে পারছি না। অনেক ধোঁয়া, অন্ধকার। বের হওয়া পথ পাচ্ছি না।’
মেয়ের সঙ্গে এটুকুই কথা হয় সুলতানের। এরপর দৌড়ে গার্মেন্টেসের কাছে চলে আসেন। এসে দেখেন, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এর পর থেকে মেয়ে আর জামাতার মুঠোফোনে কল করে গেলেও তা বন্ধই পাচ্ছেন।
সুলতান জানান, জয় আর মার্জিয়ার বিয়ে হয় ছয় মাস আগে। এই কারখানায় কাজের সুবাদেই দুজনের পরিচয় হয়, তা থেকে পরিণয়। স্বামী-স্ত্রী দুজন একসঙ্গে কারখানায় আসা-যাওয়া করতেন।
মেয়ে ও জামাতার খোঁজ না পেয়ে উদ্বেগ নিয়ে কারখানার সামনে অপেক্ষায় ছিলেন সুলতান।
ফায়ার সার্ভিস অগ্নিকাণ্ডের পর ১৬টি মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে। তবে দেহগুলো এতটাই পুড়েছে যে কোনো লাশই শনাক্ত করা যায়নি।
ভবনটিতে আগুন লাগার পর কারখানা ভবন থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। তবে ছাদের গেট বন্ধ থাকায় অনেকে আটকা পড়েন। তাঁদের অনেকের খোঁজ এখনো মেলেনি।