কক্সবাজার থেকে হাঁটতে হাঁটতে এভারেস্ট চূড়ায়
Published: 20th, May 2025 GMT
সমুদ্র শহর কক্সবাজারের ইনানি সৈকত থেকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাঁটা শুরু করেছিলেন স্বপ্নবাজ তরুণ ইকরামুল হাসান শাকিল। লক্ষ্য দূর নেপালে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। এর আগে বাংলাদেশ থেকে ছয়জন এভারেস্ট চূড়ায় উঠেছেন। কিন্তু তারা কেউই শাকিলের মতো হেঁটে সেখানে রওনা হননি। ফলে অন্যরকম উদ্দীপনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন শাকিল। অতঃপর নানা চড়াই-উতরাই শেষে ৮৪ দিনে ১৪০০ কিলোমিটার পেরিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ছুঁতে পেরেছেন তিনি। নেপাল সময় গতকাল সোমবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শাকিল পৌঁছান এভারেস্ট চূড়ায়।
সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয় চূড়ায় আরোহণের পাশাপাশি বিরল এক রেকর্ড করে ফেলেছেন শাকিল। ‘সি টু সামিট’ নামে শাকিলের এ অভিযানকে ধরা হচ্ছে হেঁটে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড। শাকিলের আগে আর মাত্র একজন এতে সফল হয়েছিলেন। ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ তাঁর ‘সি টু সামিট এক্সপেডিশন’ অভিযানে হেঁটে ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে ১২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পা রাখেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে। তবে শাকিল তাঁর চেয়েও বেশি পথ হেঁটে পাড়ি দিয়ে সর্বকনিষ্ঠ পর্বতারোহী হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন।
শাকিলের নেপালি ট্রাভেল এজেন্সি ‘এইটকেএক্সপেডিশনস’ এভারেস্ট জয়েল তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গতকাল দুপুরে শাকিলের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তাঁর অভিযানের সমন্বয়করা জানিয়েছেন, শাকিল সামিট শেষ করেছেন এবং সুস্থ আছেন। ক্যাম্প-৪-এ নেমে এসেছেন। নেটওয়ার্ক না থাকায় বিস্তারিত তথ্য এখন দেওয়া যাচ্ছে না।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাগচালা গ্রামের প্রয়াত খবির উদ্দিন ও শিরিন আক্তার দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে শাকিল সবার বড়। স্কুলজীবন থেকেই পাহাড়-পর্বত চুম্বকের মতো টানত শাকিলকে। গাজীপুরের জনতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে উত্তরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষ করে ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিংয়ে পর্বতারোহণের প্রাথমিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। এর আগে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে নেপালের পূর্ব-পশ্চিমে অবস্থিত বিস্তীর্ণ গ্রেট হিমালয়ের ট্রেইলে শাকিল উড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের পতাকা। সেবার ১০৯ দিনে ১৭শ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্বপ্ন ছুঁইয়েছিলেন তিনি।
মাউন্ট এভারেস্টের আগে শাকিল আরও আরোহণ করেছেন ৬ হাজার ১৮৬ মিটার উঁচু মাউন্ট কায়াজো রি পর্বত, ৭ হাজার ১২৭ মিটার উঁচু হিমলুং, ৬ হাজার ৩৩২ মিটারের দোলমা খাংসহ বেশ কিছু পর্বতশৃঙ্গ।
শাকিলের বন্ধু এবি সিদ্দিক জানান, শাকিল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কক্সবাজারের ইনানী সৈকত থেকে হাঁটতে শুরু করেন। হেঁটে ১২ দিনে ঢাকায় পৌঁছান। কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ হয়ে ২৮ মার্চ পৌঁছান পঞ্চগড়ে। বাংলাদেশ থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং হয়ে ৩১ মার্চ পা রাখেন নেপালে। এভাবে প্রায় ১৪শ কিলোমিটার পথ হেঁটে এভারেস্ট বেসক্যাম্পে পৌঁছান তিনি।
শাকিলের এভারেস্ট জয়ের খবরে আনন্দের বন্যা বইছে তাঁর স্বজন ও বন্ধুদের মধ্যে। শাকিলের শিক্ষক পিয়ার আলী কলেজের অধ্যক্ষ একেএম আবুল খায়ের বলেন, ‘পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উড়েছে শাকিলের হাতে লাল সবুজের পতাকা। গর্বে বুকটা ভরে উঠেছে।’
কথা হয় শাকিলের মা শিরিনা আক্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সারাক্ষণ আমি ভয়ের মধ্যেই থাকি। ছেলের দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না। আমার দোয়া আছে ওর সঙ্গে। শাকিলের সঙ্গে আমার গত ১৬ তারিখ রাতে শেষ কথা হয়। ও আমাকে জানায়, মা আমি পাহাড়ের ওপর দিকে যাচ্ছি। তোমরা চিন্তা করো না। ওর জন্য খুব টেনশন করছি। কী জানি কী হয়। এখন মোবাইল ফোনে পাচ্ছি না। তবে কেউ একজন নেপাল থেকে জানিয়েছে, শাকিল নাকি শেষ চূড়ায় উঠেছে।’
শাকিলের ‘সি টু সামিট’ অভিযানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল ‘প্রাণ’। সহযোগী হিসেবে আছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), মিস্টার নুডলস, মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল ও সিস্টেমা টুথব্রাশ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
রাস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
আরো পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা
রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।”
দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।”
তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”
ঢাকা/শান্ত