গাজায় ইসরায়েলি হামলা: মধ্যরাত থেকে নিহত আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি
Published: 20th, May 2025 GMT
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় মধ্যরাত থেকে কমপক্ষে আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামলার জেরে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৫৩ হাজার ৫০০ জনে পৌঁছেছে। গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩৩৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার পৃথকভাবে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
আল জাজিরা বলছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহর থেকে ফিলিস্তিনিদের পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর মধ্যরাত থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে এবং আরও ৩৮ জনকে হত্যা করেছে।
এদিকে কানাডা, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের নেতারা গাজায় নতুন করে আক্রমণ বন্ধ না করলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে “জোরালো পদক্ষেপ” নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে ২২টি দেশ অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
পৃথক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা আনাদোলু বলছে, গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে আরও ১৩৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩ হাজার ৪৮৬ জনে পৌঁছেছে বলে সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি আক্রমণে আরও ৩৬৪ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৯৮ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৪০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৯ হাজার ৩৫৭ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবর দ ধ ইসর য় ল মন ত র ইসর য য় ইসর
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল: মিডিয়া অফিস
গত দুই দিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাঞ্চলে ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং প্রায় ৩ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক গাজা শহরের দিকে সরিয়ে দিয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) দেওয়া এক বিবৃতিতে গাজার মিডিয়া অফিস বলেছে, “ইসরায়েলের রক্তাক্ত রেকর্ডে আরো একটি অপরাধ যোগ হয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর গাজা গভর্নরেটে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন, ইসরায়েলের ধারাবাহিক গণহত্যায়।”
তুরস্কের বার্তাসংস্থা আনাদোলু রবিবার (১৮ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেনের মতো গাজার পাশেও ইউরোপের দাঁড়ানো উচিত: ম্যাক্রোঁ
গাজা থেকে ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
মিডিয়া অফিস আরো উল্লেখ করেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উত্তর গাজায় এক হাজারের বেশি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে। একইসঙ্গে, তিন লাখেরও বেশি বেসামরিক মানুষকে জোরপূর্বক গাজা শহরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, যেখানে তাদের আশ্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাম্বুলেন্স ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের বোমা হামলার স্থানে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে, যার ফলে প্রায় ১৪০ জনের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি ড্রোনগুলো উত্তর গাজার জাবালিয়া ক্যাম্পের তেল আল-জাতার এলাকা, বাইত লাহিয়া শহর ও এর আশপাশের শরণার্থী শিবিরে স্থাপন করা শত শত তাঁবু পুড়িয়ে দিয়েছে।
গাজার মিডিয়া অফিস এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ও সমর্থনকে গভীর উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে।
গাজা শহরের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে মিডিয়া অফিস বলেছে, “শহরে তাঁবু বা পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব রয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার পরিবার রাস্তায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে, বিশেষ করে আল-জালা স্ট্রিট ও আল-সাফতাউই এলাকায়। খাদ্য, পানি ও ওষুধের অভাব এবং একটানা অবরোধ ও বিমান হামলার মধ্যে তারা চরম মানবিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে।”
গাজার মিডিয়া অফিস ‘গণহত্যা’ বন্ধ করার জন্য তাৎক্ষণিক ও কার্যকর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ, মরদেহ উদ্ধার ও আহতদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক দল পাঠানো, মানবিক, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রবেশের জন্য অবিলম্বে সীমান্ত ক্রসিংগুলো খুলে দেওয়া এবং ইসরায়েলি নেতাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক চার দিনের উপসাগরীয় সফরের সময় ইসরায়েলি বাহিনী ৩৭৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর আগের চার দিনে নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০ জন, যা ট্রাম্পের সফরকালে প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য, পানি ও ওষুধসহ সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ