ছয় ধরনের পণ্য আমদানিতে ভারতের বিধিনিষেধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি ৪০ শতাংশ কমেছে। লোকসানের মুখে বন্দরের রপ্তানি ব্যবসা। এতে প্রতিদিন বন্দরে ৪০ লাখ টাকার লোকসান হচ্ছে। গত পাঁচ দিনে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্দরে আগের মতো আর কর্মব্যস্ততা নেই।

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ভারতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে স্থলবন্দরের রপ্তানি ব্যবসা বিরাট হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত দুই অর্থবছর বন্দর দিয়ে ৮৮০ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বিধিনিষেধ আরোপ করা পণ্যের কোনো গাড়ি এখন পর্যন্ত বন্দরে আসেনি। তবে ভারতের নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপনের কারণে বন্দরে ৪০ শতাংশ রপ্তানি কমেছে।

গত শনিবার স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের ছয় ধরনের পণ্য আমদানির বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে তৈরি পোশাক; ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয় ও কোমল পানীয়; প্রক্রিয়াজাত খাদ্য; প্লাস্টিক পণ্য; সুতা ও সুতার উপজাত এবং আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। নিষিদ্ধ করা পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক ও কাঠের আসবাব বাদে বাকি সব ধরনের পণ্য আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি করা হয়। এই বন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার আগতলায় পণ্য যায়।

আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে একেক দিন একেক ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। সে হিসেবে বিস্কুট প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৫ টন ও মাসে ১০ থেকে ১৫ টন; কোমল পানীয় প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ টন ও মাসে গড়ে ১০০ টন; প্লাস্টিকের পণ্য আড়াই থেকে তিন টন ও মাসে ৭০ টন; প্লাস্টিকের দরজা মাসে গড়ে ২০ গাড়িতে ৪০ টন, প্লাস্টিকের পাইপ মাসে গড়ে ৮-১০ গাড়িতে ২৫ থেকে ৩০ টন এবং মাসে ৩০ থেকে ৪০ গাড়িতে ১৩৫ থেকে ১৮০ টন সুতা আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি করেন ব্যবসায়ীরা।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্য ভারতে বেশি রপ্তানি করেন আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মেসার্স জে আর ট্রেডিং ও মেসার্স পূর্বা অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আবু সুফিয়ান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিস্কুট প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ টন, কোমল পানীয় জুস মাসে ৭০ থেকে ৮০ টন, প্লাস্টিকের পণ্য মাসে ৪০ থেকে ৫০ টন, প্লাস্টিকের দরজা মাসে ১৬ থেকে ১৮ টন, প্লাস্টিকের পাইপ মাসে দুই থেকে আড়াই টন এবং ১৩৫ থেকে ১৮০ টন সুতা ভারতে রপ্তানি করি। এখন সব বন্ধ।’

স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দেশের প্রধান রপ্তানিমুখী বন্দর। সিমেন্ট, তাজা মাছ, শুঁটকি মাছ, পাথর, বর্জ্য তুলা, আমের পানীয়, প্লাস্টিকের আসবাব, মেলামাইন সামগ্রী, পিভিসি পাইপ ও দরজা, থ্রেসিং মেশিন ও ডিফরমেট বার জাতীয় পণ্য রপ্তানি করা হয়। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৪২৯ কোটি টাকার ৫৪ হাজার ৪৪২ টন পণ্য এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৪৫৩ কোটি টাকার ৩৮ হাজার ৮৮৭ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

মিতু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি নিছার উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের বিধিনিষেধের কারণে রপ্তানি বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার লোকসান হচ্ছে।

এদিকে রাজস্ব খাত সংস্কার নিয়ে জারি করা অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে আন্দোলন করছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিচ্ছেন তাঁরা। রপ্তানিমুখী কার্যক্রম এই আন্দোলন তথা কর্মসূচির আওতাভুক্ত নয়। তাই এর কোনো প্রভাব পড়ছে না।

আখাউড়া স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আন্দোলনের আওতামুক্ত। বন্দরের কার্যক্রমে স্বাভাবিক আছে এবং কোনো প্রভাব পড়ছে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন