এনবিআর এখনই বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই: অর্থ মন্ত্রণালয়
Published: 22nd, May 2025 GMT
রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করে জারী করা ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ-২০২৫’ প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
দুটি নতুন বিভাগের জন্য এলোকেশন অফ বিজনেস (কার্যপরিধি নির্ধারণ) এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এ সকল আইনের সাথে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। এগুলো সময়সাপেক্ষ। এ কাজ সম্পাদন না করে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখনি বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১২ মে জারি করা রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ-২০২৫ বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ, সড়ক বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির ৫ সদস্য এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দুজন প্রতিনিধি, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। উপদেষ্টারা ধৈর্য্য ধরে তাদের কথা শোনেন এবং তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। আলোচনায় উত্থাপিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত দেন, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সকল অংশীজনের সাথে বিশদ আলোচনা করে জারী করা অধাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর উক্ত অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে।
ফলপ্রসু আলোচনার পর যে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে তা মেনে না নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ পুনরায় অসহযোগ আন্দোলনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অধ্যাদেশটি জারী করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ যেমন, দুটি বিভাগের নতুন করে সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন, পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, সচিব কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন ইত্যাদি শেষ করতে হবে। যা সময়সাপেক্ষ।
এ ছাড়া দুটি নতুন বিভাগের জন্য এলোকেশন অফ বিজনেস এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এ সকল আইনের সাথে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে। এ কাজগুলোও সময়সাপেক্ষ। যেহেতু এই কাজগুলো শেষ না করে অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনি বিলুপ্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজস্ব বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত দুজন সদস্যের মধ্যস্ততায় সারাদিনব্যাপী দফায় দফায় আলোচনার একপর্যায়ে তাদের পাঠানো সমঝোতা প্রস্তাব সম্পূর্ণ মেনে নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে:
১.
২, বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে প্রণীত হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও গুরুত্বপূর্ণ সকল অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।
৩. বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে।
৪. কাস্টমস ও কর ক্যাডার সদস্যদের পদ-পদবি কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বরং সংস্কার কাজ সম্পাদন হলে তাদের পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সচিব পদে নিয়োগসহ পদোন্নতির সুযোগ আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থবছরের শেষ সময়ে জাতীয় বাজেট কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিস সময়ে দপ্তরে উপস্থিত থেকে তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালু এবং করাদাতাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেগবান করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সময়স প ক ষ উপদ ষ ট ক স টমস ব যবস থ র জন য সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁয় আম পাড়া উৎসব শুরু, এখনো জমেনি আমের হাট
আম পাড়ার সময়সূচি নির্ধারিত ছিল নওগাঁয়। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার থেকে গুটি আম পাড়া যাবে। সে অনুযায়ী আজ থেকে নওগাঁর কিছু কিছু বাগানে গুটি আম নামানো শুরু হয়েছে। তবে শুরুর দিনটা তেমন জমেনি নওগাঁর আমের হাটগুলোয়।
নওগাঁ শহরের পৌর কাঁচাবাজার–সংলগ্ন পাইকারি আমের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে তেমন ভিড় নেই। নেই ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। সকাল ৯টা পর্যন্ত আম বিক্রির পরিমাণ মাত্র কয়েক মণ।
জান্নাত ফল ভান্ডারের মালিক মারুফ হোসেন বলেন, নওগাঁর বাণিজ্যিক বাগানগুলোয় এখনো আম পাড়া শুরু হয়নি। বাসাবাড়ির আশপাশে চাষ হওয়া বিভিন্ন জাতের গুটিজাতের আম পাকতে শুরু হয়েছে। ওই সব চাষি বিক্রি করতে আনছেন, তবে পরিমাণে খুব কম। গুটি আম ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। নওগাঁতে ভালো জাতের সুমিষ্ট আম এখনো পাড়া শুরু হয়নি। তবে সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় গোপালভোগ ও হিমসাগর আম পাড়া শুরু হয়েছে। ওই সব এলাকার আম নওগাঁর বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।
নওগাঁর সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহার আমের হাট। বেলা ১১টার দিকে সাপাহার আমের হাটে গিয়ে দেখা যায়, আম বেচাকেনা তেমন জমেনি। আড়তে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। দু-একজন করে আম বিক্রেতা সাইকেল ও ভ্যানে করে আম বিক্রি করতে আসছেন। প্রথম দিনেই ৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এ কারণে আমচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সাপাহার আমের হাটের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নওগাঁয় আগাম জাতের গুটি জাতের আম, গোপালভোগ ও হিমসাগর তেমন চাষ হয় না। বাণিজ্যিক বাগানগুলোতে নাক ফজলি, আম্রপালি, বারি আম-৪, হাঁড়িভাঙা ও গৌড়মতি আম বেশি চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় আম্রপালি। জেলায় যে পরিমাণ আম চাষ হয়, তার প্রায় ৬০ শতাংশই আম্র্রপালি। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী, এই আম বাজারে আসবে আগামী ১৮ জুন থেকে। আম্রপালি বাজারে আসা শুরু করলে সাপাহার আমের হাট জমজমাট হবে। তবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে নাক ফজলি, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসবে, তখন হাট ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠবে।
৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম কেনার বিষয়ে ইমাম হোসেন বলেন, আম একটা কাঁচা পণ্য। এই ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরেই আম বেচাকেনার ক্ষেত্রে ঢলতা প্রথা চলে আসছে। এবার আম ব্যবসায়ী ও আমচাষিদের সঙ্গে সভা করে প্রশাসন ক্যারেটসহ ৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম বেচাকেনার নির্দেশনা দিয়েছে। ৪৮ কেজির মধ্যে ক্যারেটের ওজন ৩ কেজি। সে হিসাবে ঢলতা নেওয়া হচ্ছে ৫ কেজি করে।
সাপাহার ছাড়াও পোরশার মিনাবাজার, নোচনাহার ও বদলগাছী সদরে আমের হাট বসে। এসব হাট এখনো জমেনি।
১২ মে নওগাঁ জেলার আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সেই ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, আজ থেকে গুটিজাতের আম এল বাজারে। ২৮ মে থেকে গোপালভোগ ও আগামী ২ জুন থেকে ক্ষীরশাপাতি বা হিমসাগর আম বাজারে আসবে। জিআই পণ্য স্বীকৃতি পাওয়া ‘নওগাঁর নাক ফজলি’ আম সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা, ১৮ জুন আম্র্রপালি, ২৫ জুন ফজলি ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো এবং ১০ জুলাই থেকে বারি আম-৪, গৌড়মতি, আশ্বিনা ও কাটিমন আম সংগ্রহ করা যাবে।
জেলা প্রশাসক আবদুল আউয়াল বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে কোনোভাবেই অপরিপক্ব আম সংগ্রহ কিংবা বাজারে তোলা যাবে না। তবে সময়ের আগে আবহাওয়ার কারণে আম পরিপক্ব হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আমচাষিরা তারিখ পুনর্নির্ধারণ করে সময়ের আগে আম সংগ্রহ করতে পারবেন। আম পাকানো ও সংরক্ষণ বা বাজারজাতে কোনো রাসায়নিক মেশানো যাবে না। আমে ভেজাল ঠেকাতে পরিবহনের আগে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহার উপজেলা সদর বাজার, পোরশার নোচনাহার, সারাইগাছিসহ বিভিন্ন বাজারে বিশেষ নজরদারি রাখবে প্রশাসন।