সাত জেলার সীমান্ত দিয়ে গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ১০৭ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। এর মধ্যে ফেনী ও কুমিল্লায় ৫২, পঞ্চগড়ে ২১, লালমনিরহাটে ২০, মৌলভীবাজারে ৭, খাগড়াছড়িতে ৫ ও ঠাকুরগাঁওয়ে ২ জন রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঠেলে পাঠানোরা ১০ থেকে ২০ বছর ধরে ভারতে বসবাস করছেন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩০ নারী রয়েছেন। এতে ৪৬ শিশুও রয়েছে। ফেরত আসা ব্যক্তির অধিকাংশ বাংলাদেশের নাগরিক। তবে সঙ্গে থাকা শিশুর অনেকের জন্ম ভারতে। গত ৪ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪৫৩ জনকে ঠেলে পাঠানোর খবর পাওয়া গেল।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কুমিল্লা সেক্টরের অধীন (কুমিল্লা ও ফেনী) এলাকা দিয়ে বুধবার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত ৫২ জনকে পুশইন করা হয়েছে। কুমিল্লায় পুশইন করাদের মধ্যে ৭ শিশু ও তিন নারী রয়েছে।

কুমিল্লা-১০ বিজিবির অধিনায়ক লে.

কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, অনুপ্রবেশের সময় বিজিবির টহল দল ৫২ জনকে আটক করেছে। ৪, ১০ ও ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পৃথক টহল দল তাদের আটক করে। এর মধ্যে জেলার ৬০ বিজিবির আওতাধীন গোলাবাড়ী দিয়ে ১৩ জন, ১০ বিজিবির অধীন ফেনীর নোয়াপাড়া দিয়ে ১৫ জন এবং ৪ বিজিবি ফেনী সীমান্ত দিয়ে ২৪ জনকে পুশইন করা হয়েছে। প্রত্যেকের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ফেনী সীমান্ত দিয়ে গতকাল ভোরে ২৪ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। তারা কুড়িগ্রামের বাসিন্দা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এর মধ্যে ছয়জন পুরুষ, পাঁচ নারী ও ১৩ শিশু রয়েছে। আটকদের ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বিজিবি-৪ ফেনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে, পঞ্চগড়ের বড়বাড়ী সীমান্তে ২১ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। গতকাল ভোরে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন হাড়িভাসা ইউনিয়ন সীমান্ত দিয়ে তাদের ঠেলে পাঠায়। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, আটকদের মধ্যে ছয় নারী, দুই পুরুষ ও ১৩ শিশু রয়েছে। ভারতীয় পুলিশ তাদের গুজরাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করে বিমানযোগে কলকাতা নিয়ে আসে। বুধবার রাতে ভারতের ৯৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের টিয়াপাড়া ক্যাম্পে হস্তান্তর করে। রাতেই বড়বাড়ী সীমান্ত দিয়ে পুশইন করে। জয়ধরভাঙা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের আটক করেন।

অন্যদিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা সীমান্ত দিয়ে ২০ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। গত বুধবার রাত ও গতকাল ভোরে ১১ নারী, ২ পুরুষ ও ৭ শিশুকে পুশইন করা হয়।

পাটগ্রাম সদর ইউনিয়নের রহমতপুর গাটিয়ারভিটা সীমান্ত দিয়ে মধ্যরাতে ভারতের কোচবিহার রাজ্যের মেখলিগঞ্জ ৯৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের গোমতি ক্যাম্পের সদস্যরা ১১ জনকে পুশইন করে। শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালঙ্গী পকেট সীমান্ত দিয়ে গতকাল ভোরে বিএসএফের মহানদী ক্যাম্পের সদস্যরা ৯ জনকে পুশইন 
করে। আটকরা জানায়, এক মাস ধরে গুজরাটের জেলহাজতে রাখার পর সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘তাদের নাগরিকত্ব যাচাই করা হচ্ছে।’

অন্যদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে সাতজনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। গতকাল সকাল ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

বিজিবি জানায়, পুশইনের পর তুতবাড়ীসংলগ্ন স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা ওই সাতজনকে আটক করেন। এর মধ্যে দুই পুরুষ, দুই নারী ও তিন শিশু রয়েছে।

এদিকে খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্ত দিয়ে এক পরিবারের পাঁচ সদস্যকে পুশইন করেছে বিএসএফ। বিজিবি তাদের আটক করে। তাদের রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এক নারী ও তিন শিশু রয়েছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, পুলিশ তাদের ঠিকানা যাচাই করছে।

এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সীমান্ত থেকে বুধবার রাতে পুশইনের পর দুই নারীকে আটক করেছে বিজিবি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প শইন গতক ল ভ র ব এসএফ

এছাড়াও পড়ুন:

‘প্লেনে, গাড়িতে কইরা আইনা কোন বর্ডার পার করে দিছে জানি না’

প্রায় ২০ বছর আগে কাজের উদ্দেশে৵ স্বামীর সঙ্গে ভারতের গুজরাটে পাড়ি দিয়েছিলেন এক নারী (৫৫)। সেখানে তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। তিনি জানান, এক পর্যায়ে তাঁদের দুই ছেলেও বিয়ে করে স্ত্রীদের নিয়ে ভারতে যান। ছেলেরা সেখানে শাড়ির দোকানে কাজ নেন। পারিবারিক কলহে স্বামী অন্যত্র চলে গেছেন। সম্প্রতি স্ত্রী–সন্তানদের রেখে বাংলাদেশে আসেন বড় ছেলে। এরই মধ্যে ভারতে এক ছেলে, দুই পুত্রবধূ ও চার নাতি–নাতনিসহ ওই নারী গুজরাট পুলিশের হাতে আটক হন।

এরপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা গতকাল বুধবার দিবাগত গভীর রাতে তাঁদের পঞ্চগড় সদর উপজেলার জয়ধরভাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ ইন)। সীমান্ত অতিক্রম করে এপাশে আসার পর ওই নারী ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ মোট ২১ জনকে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে আটক করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। যদিও বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকে ঠেলে পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএসএফ।

আটক ২১ জনকে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে পঞ্চগড় সদর থানায় হস্তান্তর করেছে বিজিবি। এ সময় ৫৫ বছর বয়সী ওই নারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘পুলিশ (ভারতীয়) আমাদের ধইরা আট দিন চৌকিতে আটকে রাখছে। কালকে (বুধবার) প্লেনে (উড়োজাহাজ) কইরা আমাদের নিয়া বিকেল পাঁচটায় কোন জায়গায় নামায় দিছে বলতে পারি না। পরে আবার গাড়িতে করে রাত ১২টা সাড়ে ১২টার দিকে আইনা কোন বর্ডার পার করে দিছে জানি না। আমরা তো পথ চিনি না, পরে হাঁটতে হাঁটতে ভোরে যখন আজান দেয়, তখন এ পাশে আমাদের আটক করছে।’ ওই নারী আরও বলেন, ‘ওখানে (গুজরাট) সব তাড়িয়ে দিচ্ছে, বলছে ‘‘বাঙালি একটাও রাখবো না, তোমরা সব চলে যাও।’’’

আরও পড়ুন৬ জেলার সীমান্তে ১০৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ৩ ঘণ্টা আগে

আটকদের মধ্যে ২২ বছর বয়সী একজন তরুণ, তিন মাস থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ জন শিশু-কিশোর এবং ১৯ বছর থেকে ৫৫ বছর বয়সী ছয়জন নারী আছেন। তাঁদের বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা ও নড়াইল জেলায় বলে পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার দিবাগত গভীর রাতে বিজিবির জয়ধরভাঙ্গা বিওপির আওতাধীন সীমান্তের ৭৫৭ নম্বর মেইন পিলারে ১০ নম্বর সাবপিলার–সংলগ্ন সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ী এলাকায় সীমান্ত পার হয়ে কিছু মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন বলে খবর পায় বিজিবি। পরে তারা সেখানে অভিযান চালিয়ে নারী ও শিশুসহ ২১ জনকে আটক করে। ভারতের ৯৩ বিএসএফ ব্যটালিয়নের টিয়াপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের সীমান্তে এনে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে (পুশ ইন করে) বলে জানা গেছে।

নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, সীমান্তে তাঁদের পুশ ইন করেছে বিএসএফ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জয়ধরভাঙ্গা সীমান্তে ভারতের ৯৩ বিএসএফ ব্যটালিয়নের টিয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিজিবির জয়ধরভাঙ্গা বিওপির প্রতিনিধিদের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিএসএফ পুশইনের বিষয়টি অস্বীকার করছে। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়েও বলা হয়েছে। আটকদের পঞ্চগড় সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। এ ছাড়া শিশুদের বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচ এস এম সোহরাওয়ার্দী বলেন, বিজিবি সীমান্তে আটক নারী–শিশুসহ ২১ জনকে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে।

আরও পড়ুনবিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৮ জনকে কোস্টগার্ডে হস্তান্তর, কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন১১ মে ২০২৫আরও পড়ুনপুশ ইন বা পুশ ব্যাক কোনো আইনসম্মত পদ্ধতি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা১৭ মে ২০২৫আরও পড়ুনঢাকার অনুরোধে সাড়া নেই, ২৪৬১ জনকে ফেরতে দিল্লির চিঠি১০ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আরো ২০ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • ‘প্লেনে, গাড়িতে কইরা আইনা কোন বর্ডার পার করে দিছে জানি না’
  • পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ২০ জনকে পুশইন
  • পঞ্চগড়ে নারী-শিশুসহ ২১ জনকে পুশইন
  • ফেনী সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ২৪ জনকে পুশ-ইন করেছে বিএসএফ
  • পঞ্চগড় সীমান্তে আরো ২১ জনকে পুশ-ইন করল ভারত
  • কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্তে ৫২ জনকে পুশইন করল বিএসএফ
  • কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্তে ৫২ জনকে পুশইন
  • টাঙ্গাইলে বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা