সাত সীমান্ত দিয়ে ১০৭ জনকে ঠেলে পাঠাল ভারত
Published: 23rd, May 2025 GMT
সাত জেলার সীমান্ত দিয়ে গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ১০৭ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। এর মধ্যে ফেনী ও কুমিল্লায় ৫২, পঞ্চগড়ে ২১, লালমনিরহাটে ২০, মৌলভীবাজারে ৭, খাগড়াছড়িতে ৫ ও ঠাকুরগাঁওয়ে ২ জন রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঠেলে পাঠানোরা ১০ থেকে ২০ বছর ধরে ভারতে বসবাস করছেন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩০ নারী রয়েছেন। এতে ৪৬ শিশুও রয়েছে। ফেরত আসা ব্যক্তির অধিকাংশ বাংলাদেশের নাগরিক। তবে সঙ্গে থাকা শিশুর অনেকের জন্ম ভারতে। গত ৪ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪৫৩ জনকে ঠেলে পাঠানোর খবর পাওয়া গেল।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কুমিল্লা সেক্টরের অধীন (কুমিল্লা ও ফেনী) এলাকা দিয়ে বুধবার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত ৫২ জনকে পুশইন করা হয়েছে। কুমিল্লায় পুশইন করাদের মধ্যে ৭ শিশু ও তিন নারী রয়েছে।
কুমিল্লা-১০ বিজিবির অধিনায়ক লে.
ফেনী সীমান্ত দিয়ে গতকাল ভোরে ২৪ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। তারা কুড়িগ্রামের বাসিন্দা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এর মধ্যে ছয়জন পুরুষ, পাঁচ নারী ও ১৩ শিশু রয়েছে। আটকদের ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বিজিবি-৪ ফেনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে, পঞ্চগড়ের বড়বাড়ী সীমান্তে ২১ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। গতকাল ভোরে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন হাড়িভাসা ইউনিয়ন সীমান্ত দিয়ে তাদের ঠেলে পাঠায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আটকদের মধ্যে ছয় নারী, দুই পুরুষ ও ১৩ শিশু রয়েছে। ভারতীয় পুলিশ তাদের গুজরাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করে বিমানযোগে কলকাতা নিয়ে আসে। বুধবার রাতে ভারতের ৯৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের টিয়াপাড়া ক্যাম্পে হস্তান্তর করে। রাতেই বড়বাড়ী সীমান্ত দিয়ে পুশইন করে। জয়ধরভাঙা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের আটক করেন।
অন্যদিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা সীমান্ত দিয়ে ২০ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। গত বুধবার রাত ও গতকাল ভোরে ১১ নারী, ২ পুরুষ ও ৭ শিশুকে পুশইন করা হয়।
পাটগ্রাম সদর ইউনিয়নের রহমতপুর গাটিয়ারভিটা সীমান্ত দিয়ে মধ্যরাতে ভারতের কোচবিহার রাজ্যের মেখলিগঞ্জ ৯৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের গোমতি ক্যাম্পের সদস্যরা ১১ জনকে পুশইন করে। শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালঙ্গী পকেট সীমান্ত দিয়ে গতকাল ভোরে বিএসএফের মহানদী ক্যাম্পের সদস্যরা ৯ জনকে পুশইন
করে। আটকরা জানায়, এক মাস ধরে গুজরাটের জেলহাজতে রাখার পর সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘তাদের নাগরিকত্ব যাচাই করা হচ্ছে।’
অন্যদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে সাতজনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। গতকাল সকাল ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিজিবি জানায়, পুশইনের পর তুতবাড়ীসংলগ্ন স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা ওই সাতজনকে আটক করেন। এর মধ্যে দুই পুরুষ, দুই নারী ও তিন শিশু রয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্ত দিয়ে এক পরিবারের পাঁচ সদস্যকে পুশইন করেছে বিএসএফ। বিজিবি তাদের আটক করে। তাদের রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এক নারী ও তিন শিশু রয়েছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, পুলিশ তাদের ঠিকানা যাচাই করছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সীমান্ত থেকে বুধবার রাতে পুশইনের পর দুই নারীকে আটক করেছে বিজিবি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প শইন গতক ল ভ র ব এসএফ
এছাড়াও পড়ুন:
জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক
জঙ্গি সন্দেহে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিক। মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে ওই বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গয়েশপুর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে। এরপর তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে এসে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে।
ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভারত থেকে নিজের দেশে ফিরে যাননি মাসুদ। তিনি অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কাটাগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি তার বেশ কিছু কর্মকান্ডে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরই মাসুদকে ইসলামী উগ্রপন্থী বলে দাবি করে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। যেহেতু তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাই পুলিশ তাকে একজন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
বিষয়টি সামনে আসার পরই যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের পক্ষে কিছুই জানানো হয়নি।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় ভারত বাংলাদেশের দিনাজপুর সীমান্ত ও ভোমরা ঘোজাডাঙা সীমান্তে এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরো ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক।
পুলিশ ও বিএসএফের যৌথ অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক বাংলাদেশি নাগরিককে। আটককৃতে ওই ব্যক্তির নাম পঞ্চানন পাল। তিনি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গা থানার বাসিন্দা। ভারতে তিনি পরিচয় বদল করে রূপায়ণ পাল নামে বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ। তার কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াও ভারতের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও এমনকি ভারতীয় পাসপোর্ট পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে।
একইদিনে ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে ঘোজাডাঙ্গা ভোমরা সীমান্তের কাছে সরুপনগর এলাকার তারালি সীমান্ত থেকে বিএসএফের ১৪৩নম্বর ব্যাটালিয়নের হাতে আটক হয়েছেন আরো বাংলাদেশি নাগরিক।
সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে আটকের পর তাদের স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে তিন শিশু, তিনজন পুরুষ ও চারজন নারী। এর সবাই বাংলাদেশের সাতক্ষীরা এবং খুলনার বাগেরহাটের বাসিন্দা।
সুচরিতা/শাহেদ