রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলসহ ১২টি স্থাপনার নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৯তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ইফতিখারুল আলম মাসউদ। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এর সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত১৫ ঘণ্টা আগে

গতকাল মধ্যরাতে রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসউদ হোয়াটসঅ্যাপে এক বার্তায় জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি স্থাপনার মধ্যে কিছু স্থাপনার পুনর্নামকরণ, পরিবর্তন ও নতুন নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল ও শহীদ কামারুজ্জামান হলের নাম চালুর আগে পরিবর্তন করা হবে। কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এখন পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না।

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘জুলাই-৩৬ হল’, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের পরিবর্তে ‘প্রশাসন ভবন-১ ’, মনসুর আলী প্রশাসন ভবনের পরিবর্তে ‘প্রশাসন ভবন-২ ’, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের পরিবর্তে ‘সিনেট ভবন’ নামকরণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া শেখ কামাল স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম’, ড.

কুদরত-ই-খুদা একাডেমিক ভবনের পরিবর্তে ‘জাবির ইবনে হাইয়ান ভবন’, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের পরিবর্তে ‘জামাল নজরুল ভবন’, কৃষি অনুষদ ভবনের পরিবর্তে ‘কৃষি ভবন’, শেখ রাসেল মডেল স্কুলের পরিবর্তে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মডেল স্কুল’, কাজলা গেটের পরিবর্তে ‘শহীদ সাকিব আঞ্জুম গেট’ এবং বিনোদপুর গেটের পরিবর্তে ‘শহীদ আলী রায়হান গেট’ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সব নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াললিখন মুছে দিতে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

ওই সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের পরিবর্তে ‘শহীদ আলী রায়হান হল’, শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে ‘ফাতিমা আল-ফাহরিয়া হল’ ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘নবাব ফয়জুন নেসা চৌধুরানী’ নাম দিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন। এ ছাড়া শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ‘রিয়া গোপ মডেল স্কুল’ নাম দেন তাঁরা।

ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের সমালোচনা

নতুন নামকরণের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এর সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা। ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে সাফায়েত মোস্তাকিম অনিক নামের একজন মন্তব্যে লিখেন, ‘ড. কুদরত-ই-খুদা এই দেশের একজন পথিকৃৎ বিজ্ঞানী ছিলেন। ইবনে হাইয়ান হিস্টোরিক্যাল ফিগার কিন্তু এই ক্ষেত্রে নাম পরিবর্তনটা একদমই বেখাপ্পা লাগছে। ড. ওয়াজেদও সর্বজন সম্মানিত ছিলেন। আর গেটগুলোর নাম মানুষ ওই বিনোদপুর, কাজলা গেটই বলবে, অযথা কন্ট্রোভার্সি ক্রিয়েট করা।’

ইয়াকুব সরকার নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ড. এম মনসুর আলী এই নামগুলো কাগজে-কলমেই মুছতে পারবেন, ইতিহাসের পাতা থেকে নয়!’

নাজমুল হোসাইন নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘কয়েকটা নামের পরিবর্তন ছাড়া বাকিগুলো স্পষ্টই মুক্তিযুদ্ধ বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ। বোঝায় যাচ্ছে, এসব নাম কাদের প্রস্তাবিত।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘আইন লঙ্ঘন করে সিনেটকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীপন্থী সিন্ডিকেট সদস্যদের অপসারণের দাবি জানিয়ে ফলাফল আসেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি সালেহ্ হাসান নকীব স্যার চালাক ছাগলের পিঠে চড়ে বসছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এসব পুনর্নামকরণ! স্যার আরও কিছু নাম দিলে ষোলোকলা পূর্ণ হয়ে যেত!’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন হল র ফ সব ক ন ভবন

এছাড়াও পড়ুন:

দুদককে চিঠি দেওয়ার বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

বিটিসিএলের ৫জি রেডিনেস প্রকল্প চালিয়ে নিতে দুদককে চিঠি দেওয়ার বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার টেলিযোগাযোগ বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেছেন, ব্যক্তিস্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থেই দুদকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কারণ প্রকল্পটি থমকে গেলে সরকারের ৬০০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে। 

আজ সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ সুবিধায় টেলিকম ব্যবসায়ীরা ১২ বছরে ৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি করেছে। তিনি বলেন, নতুন টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স নীতিমালা নিয়ে স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়েছেন। দেশি কোম্পানি বন্ধ হবে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. জহিরুল ইসলাম।

দেশের স্বার্থেই এই উদ্যোগ 
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, বিটিসিএল ফাইবার নেটওয়ার্ক বাড়ানোর প্রকল্পটি গত সরকারের আমলের। সে সময়ই দরপ্রক্রিয়া প্রভাবিত করা হয়েছে এবং একটা এলসিও করা হয়েছিল। আমি এবং নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার আগে সেই এলসির ২৯০ কোটি পরিশোধ করা হয়ে গেছে। এই সব কিছু আমলে নিয়ে আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি নিজে ওনার অফিসে গিয়েছি। আমি বলেছি, যেহেতু ২৯০ কোটি টাকা চলে গেছে তাই প্রকল্পটি চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বিটিসিএলের সক্ষমতা বৃদ্ধির আরও একটি ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প শেষ হয়েছে। ৫জি রেডিনেস প্রকল্পটি শেষ না হলে ওই প্রকল্পটি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত না হলে বিটিসিএল দুর্বল হয়ে মার্কেট আউট হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী বেসরকারি কোম্পানিগুলো এটাই চাইছে। তাই দেশের স্বার্থে বিটিসিএলের প্রকল্প এগিয়ে নিতে বলিষ্ঠ উদ্যোগ নিয়েছি। 

কারো লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হবে না
নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিমালা কার্যকর হলে আইসিএক্স, আইজিডব্লিউসহ দেশীয় বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি করা হচ্ছে- এ প্রশ্নের জবাবে বিশেষ সহকারী বলেন,  এটা সম্পূর্ণ একটা অপব্যাখ্যা। আমরা বলেছি, কারো লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হবে না। যেটা হবে, যেহেতু এই লাইসেন্সগুলো আন্তর্জাতিক স্তরের বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নেই। আর এত স্তর থাকার জন্য গ্রাহকের প্রতি কলে খরচ বেড়ে যায়। নতুন লাইসেন্স ব্যবস্থায় এ গুলো আর থাকবে না। তাদের নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে লাইসেন্স নিয়ে নতুনভাবে ব্যবসা করতে হবে। এক্ষেত্রে পুরনো উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এর বাইরে যেসব আইসিএক্স, আইজিডব্লিউর লাইসেন্স ২০২৭ সালের দিকে শেষ হবে; তারা চাইলে আউটসোর্সিং হিসেবে বিদ্যমান লাইসেন্সে কাজ করার সুযোগ পাবে। সুতরাং এটা সম্পূর্ণ অপব্যাখ্যা যে দেশীয়দের ব্যবস্থা বন্ধ করা হচ্ছে। 

সরকারের ক্ষতি ৮ হাজার কোটি টাকা
টেলিযোগাযোগ খাতে বিগত সরকারের অনিয়ম দুর্নীতির উল্লেখ করে ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, ‘২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর আইওএফ নামে একটি সংগঠন গঠন করে। বিটিআরসি এবং টেলিযোগাযোগ বিভাগ আইওএফকে বৈধতা দিতে এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু করে, যা প্রায় ১২ বছরব্যাপী পরীক্ষামূলকই ছিল। মোবাইল অপারেটরদের সরাসরি আন্তর্জাতিক কল আনতে নিষিদ্ধ করা হয়। এদিকে আইওএফ প্রতি মিনিটে ০.০৩ ডলারে কল টার্মিনেট করলেও রাজস্ব ঘোষণা করত মাত্র ০.০০৬ ডলার। ২০২৪ সাল নাগাদ প্রকৃত আন্তর্জাতিক টার্মিনেশন রেট ০.০০১ ডলারে নেমে এলেও আইওএফ প্রতি মিনিটে মাত্র ০.০০০৪ ডলারই ঘোষণা করতে থাকে। এইভাবে গত ১২ বছরে সরকারের ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ক্ষতির কারণ হয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতির পুরোটাই সালমান এফ রহমান গংদের পকেটে ঢুকেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিলেমিশে দুই ইজারাদারের সরকারি বালু আত্মসাৎ
  • জুলাই স্মরণে শহীদ জুনায়েদ চত্বর ও শহীদ আনাস সড়ক উদ্বোধন
  • জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শামিম আহমদ আর নেই
  • দুদককে চিঠি দেওয়ার বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
  • দুদক চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চেয়েছি, কোনো নির্দেশ দিইনি: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
  • ডিআরইউ এর সাবেক সভাপতি শামীম আহমেদ মারা গেছেন
  • সাংবাদিক শামীম আহমেদ মারা গেছেন
  • টাঙ্গাইলে মিনি স্টেডিয়াম নিহত ফারুকের নামে করার দাবি
  • হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক গ্রেপ্তার
  • যারা পিআর পদ্ধতির কথা বলে, তাদের ভোট নেই: সালাহউদ্দিন আহমদ