আবাসিক হলসহ ১২ স্থাপনার নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত, ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের সমালোচনা
Published: 23rd, May 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলসহ ১২টি স্থাপনার নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৯তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ইফতিখারুল আলম মাসউদ। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এর সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত১৫ ঘণ্টা আগেগতকাল মধ্যরাতে রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসউদ হোয়াটসঅ্যাপে এক বার্তায় জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি স্থাপনার মধ্যে কিছু স্থাপনার পুনর্নামকরণ, পরিবর্তন ও নতুন নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল ও শহীদ কামারুজ্জামান হলের নাম চালুর আগে পরিবর্তন করা হবে। কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এখন পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘জুলাই-৩৬ হল’, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের পরিবর্তে ‘প্রশাসন ভবন-১ ’, মনসুর আলী প্রশাসন ভবনের পরিবর্তে ‘প্রশাসন ভবন-২ ’, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের পরিবর্তে ‘সিনেট ভবন’ নামকরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া শেখ কামাল স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম’, ড.
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সব নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াললিখন মুছে দিতে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
ওই সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের পরিবর্তে ‘শহীদ আলী রায়হান হল’, শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে ‘ফাতিমা আল-ফাহরিয়া হল’ ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘নবাব ফয়জুন নেসা চৌধুরানী’ নাম দিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন। এ ছাড়া শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ‘রিয়া গোপ মডেল স্কুল’ নাম দেন তাঁরা।
ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের সমালোচনানতুন নামকরণের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এর সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা। ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে সাফায়েত মোস্তাকিম অনিক নামের একজন মন্তব্যে লিখেন, ‘ড. কুদরত-ই-খুদা এই দেশের একজন পথিকৃৎ বিজ্ঞানী ছিলেন। ইবনে হাইয়ান হিস্টোরিক্যাল ফিগার কিন্তু এই ক্ষেত্রে নাম পরিবর্তনটা একদমই বেখাপ্পা লাগছে। ড. ওয়াজেদও সর্বজন সম্মানিত ছিলেন। আর গেটগুলোর নাম মানুষ ওই বিনোদপুর, কাজলা গেটই বলবে, অযথা কন্ট্রোভার্সি ক্রিয়েট করা।’
ইয়াকুব সরকার নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ড. এম মনসুর আলী এই নামগুলো কাগজে-কলমেই মুছতে পারবেন, ইতিহাসের পাতা থেকে নয়!’
নাজমুল হোসাইন নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘কয়েকটা নামের পরিবর্তন ছাড়া বাকিগুলো স্পষ্টই মুক্তিযুদ্ধ বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ। বোঝায় যাচ্ছে, এসব নাম কাদের প্রস্তাবিত।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘আইন লঙ্ঘন করে সিনেটকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীপন্থী সিন্ডিকেট সদস্যদের অপসারণের দাবি জানিয়ে ফলাফল আসেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি সালেহ্ হাসান নকীব স্যার চালাক ছাগলের পিঠে চড়ে বসছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এসব পুনর্নামকরণ! স্যার আরও কিছু নাম দিলে ষোলোকলা পূর্ণ হয়ে যেত!’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ন হল র ফ সব ক ন ভবন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করবেন না।
তিনি বলেছেন, তার ক্ষমতার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য অধ্যাপক ইউনূসের দরকার আছে।
আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না।
অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস এর ক্ষমতা প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্রেটিক ট্রাঞ্জিশনের জন্য ড. ইউনূস স্যার এর দরকার আছে।
বরং ক্যাবিনেটকে আরও গতিশীল হতে হবে। সরকারকে আরও বেশি ফাংশনাল হতে হবে, উপদেষ্টাদের আরও বেশি কাজ করতে হবে, দৃশ্যমান অগ্রগতি জনতার সামনে উপস্থাপন করতে হবে—এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। আমাদেরকে দেখাতে হবে যে গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তীকালে জনতার সম্মতিতে ক্ষমতায় এসে প্রফেসর সাফল্য দেখিয়েছেন।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সম্মান আছে, এটা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
আমি মনে করি, সরকারকে এখন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আরও নিবিড়ভাবে আলোচনায় বসতে হবে, নিয়মিত বসে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত চাইতে হবে। কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতা কাম্য নয়।
পাশাপাশি সেনাবাহিনীও রাজনীতিতে নাক গলাতে পারবে না। আজকের দুনিয়ায় কোনো সভ্য দেশের সেনাবাহিনী রাজনীতি করে না। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বক্তব্যে সেনাপ্রধান জুরিশডিকশনাল কারেক্টনেস রক্ষা করতে পারেননি। তবে সেনাবাহিনীকে প্রাপ্য সম্মান দেখাতে হবে, আস্থায় রাখতে হবে। সেনাবাহিনী প্রশ্নে হুট করে কিছু করা যাবে না, হঠকারী কিছু করা যাবে না। তেমনি, ইনক্লুসিভনেসের নাম করে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনও চাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব এবং আস্থার জায়গা—সেটা কেউ ভঙ্গ করবে না।
দরকারি প্রস্তুতি শেষ করে নির্বাচন এপ্রিল-মে’র কোনো সময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলেই আশা করি, তবে এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। এ সময়ে সকল যৌক্তিক সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে, করতে হবে জুলাই সনদ। তবে ডিসেম্বর থেকে জুনে দেওয়া রোডম্যাপ মতে, নির্বাচনের এক্সাক্ট ডেট ঘোষণার এখতিয়ার শুধু স্যারের। স্যারের এখতিয়ার অন্য কেউ হাইজ্যাক করতে পারবে না। স্যারকে যখন আনা হয়েছে, তখন বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে স্যার বলেছেন, আমার কথা শুনতে হবে।
জুলাই-আগস্ট ’২৫–এ আমরা জাতীয়ভাবে দুই মাস জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির উদ্যাপন করব, ইনশা আল্লাহ এবং আগস্টের মধ্যেই স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার বিচারের প্রথম রায়টি আলোর মুখ দেখতে পাবে বলেও আশা প্রকাশ করি।
ইনশা আল্লাহ আমরা হারব না, আমাদের হারানো যাবে না।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
প্রফেসর ইউনূস জিন্দাবাদ।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’