নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে বলিউডের সাড়া জাগানো অন্যতম অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী। চার বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে ২২টি সিনেমা উপহার দিয়ে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেন। ‘সাত সামুন্দার পার’ অথবা ‘অ্যায়সে দিওয়ানে হি’ গান শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে এই মিষ্টি নায়িকার মুখ।

দিব্যার ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনে নাটকীয়তার শেষ নেই। অষ্টাদশী দিব্যার প্রেম-বিয়ে, ধর্মান্তর এবং রহস্যজনক মৃত্যু তার জীবনের জার্নিতে নানা লেয়ার তৈরি করেছে। রূপসী ও মুগ্ধতা ছড়ানো এই অভিনেত্রীর এসব জার্নি নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন—
 
সিয়াসাতের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৯৯২ সালের ২৩ জানুয়ারি মুক্তি পায় দিব্যা ভারতী অভিনীত ‘শোলা আউর শবনম’ সিনেমা। এ সিনেমার শুটিং সেটে পরিচয় হয় চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার সঙ্গে। অভিনেতা গোবিন্দর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার সুবাদে ‘শোলা আউর শবনম’ সিনেমার শুটিং চলাকালীন বেশ কয়েকবার তাদের দেখা হয়। সেখান থেকেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তা প্রেমে রূপ নেয়। ১০ মাস ডেট করেন তারা। এরপর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন এই যুগল।

১৯৯২ সালের ১০ মে, সাজিদের মুম্বাইয়ের বাড়িতে গোপনে বিয়ে করেন তারা। দিব্যার বয়স তখন মাত্র ১৮ বছর। বিয়ের খবর গোপন রাখেন। বিশেষ করে দিব্যার বাবার কাছে। কারণ এতে করে দিব্যার ক্যারিয়ার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন এই অভিনেত্রী। বিয়েতে মাত্র কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন— বিয়ের কাজী, দিব্যার বন্ধু সন্ধ্যা এবং তার হেয়ার স্টাইলিস্ট। তবে বিয়ের আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন দিব্যা। নাম বদলে রাখেন সানা নাদিয়াদওয়ালা। ইসলামি রীতিতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করেন তারা।

১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল দিব্যা ভারতী মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১৯ বছর। দিব্যা-সাজিদের সংসার জীবন ছিল মাত্র ১০ মাস ২৬ দিনের। দিব্যার অকাল প্রয়াণ নিয়ে তৈরি হয় নানা জটিলতা। দানা বাঁধে রহস্য। প্রশ্ন উঠে— এটি নিছক দুর্ঘটনা না কি পরিকল্পিত হত্যা?

জানা যায়, দিব্যার মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ডিজাইনার নীতা লুলা ও তার স্বামী ডা.

শ্যাম লুলা। ওই দিন দিব্যার বাড়িতে এসেছিলেন তারা। সে সময় দিব্যার স্বামী প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা বাড়িতে ছিলেন না। বিষণ্ন দিব্যা সেদিন মদ পান করেছিলেন। লুলা দম্পতির সঙ্গে কথা বলতে বলতে রান্না ঘরে যান দিব্যা; এরপর হল রুমে ফিরে আসেন। তারপর টিভি চালু করে ব্যালকনির ওপরের অংশে বসেন। দিব্যা প্রায়ই সেখানে বসতেন। কিন্তু সেদিন দুর্ভাগ্যক্রমে পিছলে নিচে পড়ে যান। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।    

দিব্যা ভারতীর ভক্তরা এটিকে দুর্ঘটনা মানতে নারাজ। তাদের মতে, এটি পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড। এর কিছু কারণও আছে। ২০১১ সালে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ এক প্রতিবেদনে জানায়, মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। “দিব্যাকে গুলি করে মারা হয়েছে”— হঠাৎ এই খবরে অনেকেই হতবাক হন! বলা হয়েছিল, আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসূত্র রয়েছে এই ঘটনায়। কিন্তু খবরটি গুজব জানার কয়েক ঘণ্টা পরই নতুন করে জানা যায়, সত্যি সত্যি দিব্যা ভারতী আর এই পৃথিবীতে নেই!

সেই সময় দিব্যার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু স্টারডাস্ট-কে বলেন, “মৃত্যুর আগে দিব্যা অনেক বিষণ্ণ ছিল। মৃত্যুর আগের রাতে পার্টি থেকে কিছুটা মদ্যপ অবস্থায় ফেরেন। রাতে সাজিদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। কারণ বাড়িতে তখন সাজিদ ছিলেন না। দিব্যা ফোনে তাকে বলেছিলেন, ‘যদি দশ মিনিটের মধ্যে না ফেরো তাহলে আমাকে আর দেখতে পাবে না।’ কিন্তু সাজিদ স্ত্রীর কথার গুরুত্ব দেননি।”

স্টারডাস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিয়ে নিয়ে দিব্যা ও সাজিদের মধ্যে সমস্যা চলছিল। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সাজিদের মেলামেশা দিব্যা পছন্দ করেননি। আবার অনেকে বলেন, বিয়ের বিষয়টি আর গোপন করতে চাইছিলেন না এই অভিনেত্রী। কিন্তু সাজিদ চাচ্ছিলেন না বিয়ের খবর এখনই সবাই জানুক। এ-ও শোনা যায়, প্রযোজক ভিকি ও নায়ক কমল সাদানার সঙ্গে দিব্যার ঘনিষ্ঠতা মেনে নিতে পারছিলেন না সাজিদ।

এক সাক্ষাৎকারে দিব্যার বাবা ওম প্রকাশ ভারতী বলেছিলেন, “আমি জানি না আধ ঘণ্টায় মানুষ কতটা মদ খেতে পারে? তবে বিষণ্ন হওয়ার মতো মেয়ে দিব্যা ছিল না। সে ব্যালকনির রেলিংয়ে বসেছিল, ভারসাম্য হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। অন্যদিন নিচে গাড়ি থাকত কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেদিন ছিল না। সে সরাসরি মাটিতে গিয়ে পড়ে এবং মারা যায়। এই সত্য আমাদের মেনে নিতে হবে।”

এরপরও দিব্যার মত্যু নিয়ে জল বহুদূর গড়ায়। বিশেষ করে সাজিদের কিছু মন্তব্য, দিব্যাকে বিয়ের কথা অস্বীকার ভক্তদের মনে সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়। এমনকি দিব্যার শেষকৃত্য মুসলিম নাকি হিন্দু রীতিতে হবে এ নিয়েও অনেক জল ঘোলা হয়েছিল। যদিও হিন্দু রীতিতেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তার। এরপর দিব্যার মৃত্যুর তদন্ত অনেক দিন চলে। ১৯৯৮ সালে মুম্বাই পুলিশ দিব্যার মৃত্যুকে ‘দুর্ঘটনাজনিত’ বলে ফাইলটি বন্ধ করে দেয়।

১৯৯০ সালের ৫ জুলাই তামিল ভাষার ‘নীলা পেন্নি’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি জগতে অভিষেক ঘটে দিব্যার। ১৯৯২ সালে ‘বিশ্বাত্মা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটে। এ সিনেমা মুক্তির পর বলিউডে আলোড়ন ফেলে দেন দিব্যা। একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিওয়ানা’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতে নেন এই অভিনেত্রী। শুধু তাই নয়, সিনেমাটির ‘তেরা নাম রাখ দিয়া’ গানের জনপ্রিয়তায় বর্ষসেরা সিনেমার তকমাও পায় ‘দিওয়ানা’।  

মিষ্টি হাসি আর অভিনয় দক্ষতার জন্য অল্প সময়ের মধ্যে শাহরুখ খান, গোবিন্দ, ঋষি কাপুর, সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রায় ১৩টি বাণিজ্যিক সিনেমা উপহার দিয়ে প্রশংসা কুড়ান দিব্যা। একেবারে সব্যসাচীর মতো তেলেগু-হিন্দি সিনেমায় সমানভাবে রাজত্ব করতে থাকেন। তার আকস্মিক মৃত্যুর কারণে অসমাপ্ত রয়ে যায় বেশ কটি সিনেমা। পরে প্রতিটি সিনেমায় নতুন নায়িকাদের নিয়ে সিনেমার কাজ শেষ করেন নির্মাতারা।

ঢাকা/শান্ত

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎমিস্ত্রিকে পিটিয়ে হত্যা

রাজধানীতে হাত ও পা বেঁধে রড দিয়ে পিটিয়ে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে যাত্রাবাড়ীর কাউন্সিল শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির একটি কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বিদ্যুৎমিস্ত্রি ছিলেন আনোয়ার হোসেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল পুরান ঢাকার সদরঘাটে। পারিবারিক সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে রাজধানীর মাতুয়াইলের মৃধাবাড়ি এলাকায় থাকতেন।

আনোয়ারের ভাই দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভোরে আনোয়ার বাসা থেকে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বের হন। পরে খবর পান, তাঁর ভাইকে কাউন্সিল উত্তর শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির গ্যারেজে নিয়ে হাত–পা বেঁধে রাখা হয়েছে। এরপর সেখানে গিয়ে আনোয়ারের হাত–পা বাঁধা ও রক্তাক্ত মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান তাঁর মা।

লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়েছে বলে মৃত্যুর আগের তাঁর মাকে জানিয়েছিলেন আনোয়ার। তাঁর ভাই এ কথা জানিয়ে বলেন, এর কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থলেই আনোয়ারের মৃত্যু হয়। এরপর যাত্রাবাড়ীর থানা-পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।

গতকাল সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভোরে সঙ্গী সুমনকে নিয়ে আনোয়ার বাসের কাঠামো তৈরির কারখানায় চুরি করতে যান। এ সময় সেখানে থাকা লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। তাঁর সঙ্গী সুমন পালিয়ে যান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
  • শাহরুখকে ‘কুৎসিত’ বলেছিলেন হেমা মালিনী, এরপর...
  • প্রথম দেখায় প্রেম নাকি ঝগড়া? আসছে ইয়াশ–তটিনীর ‘তোমার জন্য মন’
  • জেমিনিতে যুক্ত হলো গুগল স্লাইডস তৈরির সুবিধা, করবেন যেভাবে
  • নড়াইলে ৩ দিন ধরে স্কুলছাত্রী নিখোঁজ
  • রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়
  • নাজমুলই থাকছেন টেস্ট অধিনায়ক
  • বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
  • সিলেটে বাসদ কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান, আটক ২২
  • যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎমিস্ত্রিকে পিটিয়ে হত্যা