আইপিএল মানেই রান-উৎসব। প্রতিবছর রান তোলায় এই টুর্নামেন্টে নতুন নতুন রেকর্ড দেখা যায়। এবার যেমন আইপিএলে দেখা গেল দলীয় ২০০ রান তোলার রেকর্ড।

সর্বশেষ ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ২৩১ রান তুলেছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, যা ছিল এবারের আইপিএলে দলীয় ইনিংসে ন্যূনতম ২০০ রান তোলার ৪২তম ঘটনা। আইপিএলের ইতিহাসে এক মৌসুমে এর চেয়ে বেশিবার দলীয় ইনিংসে ২০০ রান এর আগে দেখা যায়নি।

আইপিএলের চলতি মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। এখনো ম্যাচ বাকি ৯টি। এই ৯ ম্যাচে আর কতবার ২০০ বা এর চেয়ে বেশি রান ওঠে, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। এর আগে গত মৌসুমে দলীয় ২০০ রানের কোটায় দলগুলো পৌঁছেছিল ৪১ বার। এত দিন সেটিই ছিল রেকর্ড। ২০২৩ সালে দলীয় ২০০ রান দেখা গেছে ৩৭ বার আর ২০২২ সালে ১৮ বার।

৭আইপিএলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার ২০০ রান তুলেছে গুজরাট টাইটানস।

এবারের আইপিএলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার ২০০ রান তুলেছে গুজরাট টাইটানস—৭ ইনিংসে। পাঞ্জাব কিংস তুলেছে ৬ ইনিংসে। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস ও রাজস্থান রয়্যালস ৫ বার ২০০ রান তুলেছে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের হয়ে টি–টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি শূন্যের রেকর্ড সাকিবের১ ঘণ্টা আগে

৪ বার করে ২০০–এর ক্লাব ছুঁয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। বেঙ্গালুরু ২০০ রান তুলেছে ৩ বার। চেন্নাই সুপার কিংস এবং মোস্তাফিজুর রহমানের দিল্লি ক্যাপিটালস দুবার করে ২০০ রান করতে পেরেছে।

আইপিএলে প্লে-অফের চার দল এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছে। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে গুজরাট, পাঞ্জাব দুইয়ে বেঙ্গালুরু তিনে এবং মুম্বাই চারে।

আরও পড়ুনপ্রথম পরীক্ষায় ‘এ’ গ্রেড রিশাদের২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০০ র ন ত ল ছ ব র ২০০ র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিবন্ধী শিশুরাও আসুক একীভূত শিক্ষায়

প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের জন্য একীভূত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সমাজে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, প্রতিটি বিদ্যালয়েই যেন প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাভাবিকভাবে শিখতে পারে, সে জন্য সরকার, উন্নয়ন সংস্থা ও বিভিন্ন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরকে টেকসই ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার ইউকেএইডের ইনক্লুসিভ ফিউচারের উদ্যোগে এডিডি, সেন্স, সাইটসেভারস ও প্রথম আলো আয়োজিত ‘বাড়ি থেকে বিদ্যালয়: প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একীভূত শিক্ষার অগ্রগতি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভূত শিক্ষার আওতায় আনতে বিদ্যালয়গুলোয় সেই কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। সেখানে সরকারের সমাজ সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সহায়তা থাকতে হবে। তবে এ কাজে চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য দেশে কমিউনিটি–ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালুর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিবার, সমাজ—সব পক্ষের জন্যই সহায়ক হবে। এ সময় এডিডি ইন্টারন্যাশনাল, সেন্স ইন্টারন্যাশনাল ও সাইটসেভারসের ‘শিখব সবাই’ প্রকল্পকে সাধুবাদ জানান তিনি। যুক্তরাজ্যের এফসিডিওর সহযোগিতায় ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্টের (ডিআইডি) আওতায় ইনক্লুসিভ ফিউচার উদ্যোগের অধীনে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বৈঠকে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান। তিনি বলেন, এনজিও বা উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কোনো প্রকল্প শেষ হওয়ার পর সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তাই বিভিন্ন সফল প্রকল্পকে সরকারিভাবে গ্রহণ করে মূলধারায় নেওয়া প্রয়োজন।

বৈঠকে সাইটসেভারসের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও তাঁদের ‘শিখব সবাই’ প্রকল্পের আওতায় গুরুতর ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নেওয়া বাড়িভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের ইতিবাচক ফল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের ফল হিসেবে অনেক গুরুতর প্রতিবন্ধী শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছে এবং তাদের ঝরে পড়া রোধ করা গেছে।

অমৃতা রেজিনা রোজারিও বলেন, তাঁরা স্থানীয় পর্যায়ে দেখিয়েছেন সমন্বিত উদ্যোগে কীভাবে কোনো প্রতিবন্ধী শিশু উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এটি সরকারের জাতীয় নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাইটসেভারসের গ্লোবাল টেকনিক্যাল লিড হামিশ হিগিংসন বলেন, ‘শিখব সবাই’ নামক ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট (ডিআইডি) প্রকল্পটি ছিল প্রোটোটাইপ ডিজাইনের উদ্যোগ। এখন বাংলাদেশের সুযোগ রয়েছে এই প্রোটোটাইপকে নিজেদের বাস্তবতায় রূপান্তর করার, উন্নয়ন করার, বিস্তৃত করার। এই মডেলকে জেলায়, উপজেলায়, ক্লাস্টারে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের নিজস্ব বাস্তবতা অনুযায়ী সেটিকে অভিযোজন করতে হবে।

প্রত্যেক প্রতিবন্ধী শিশুরই শিক্ষা গ্রহণের অধিকার আছে বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনের সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা তাহেরা জাবীন। গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একীভূত শিক্ষার প্রতি যুক্তরাজ্যে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শুরু থেকেই সহায়তা নিশ্চিত করা, পরিবার ও কমিউনিটির সম্পৃক্ততা এবং বিদ্যালয়ে ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভূত শিক্ষার পথে বড় চ্যালেঞ্জ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. সারওয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এখনো অনেক শিক্ষিত মানুষও বিশ্বাস করেন না যে প্রতিবন্ধী শিশুরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা করতে পারে। এই মানসিকতার পরিবর্তনে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক এ কিউ এম শফিউল আজম বলেন, ‘অনেক শিক্ষক ভাবেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবন্ধী শিশু সমস্যা হতে পারে। এই মানসিকতা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের শ্রেণিকক্ষে ভিন্নভাবে পড়াতে হবে, সে যেন নিজেকে সেই পরিবেশে স্বাভাবিকভাবে মিশিয়ে নিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্টের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নাজমুল বারী বলেন, ‘শিশুর প্রতিবন্ধিতার ধরন ও তীব্রতার ভিত্তিতে তার শিক্ষার পদ্ধতিও ভিন্ন হতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে হোম বেজড এডুকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হিসেবে সামনে এসেছে। আমরা অনেক সময় এমন শিশুদের দেখি, যারা কখনো স্কুলে যাওয়ার স্বপ্নই দেখে না কিংবা দেখার সুযোগ পায় না। তাদের জন্য বাসাভিত্তিক শিক্ষা একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে।’

এডিডি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ প্রোগ্রামের টিম লিডার গোলাম ফারুক হামিম বলেন, বিদ্যালয়গুলোয় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য যেসব ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, সেগুলোয় অনেক ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে স্কুলের প্রবেশগম্যতা, ওয়াশ ব্লক ব্যবহার, শ্রেণিকক্ষে বসা, সহায়ক উপকরণের ব্যবহার এবং শিক্ষকের কাছ থেকে পর্যাপ্ত নির্দেশনা গ্রহণ—এসব ক্ষেত্রে এখনো বাস্তবায়নের জায়গায় বড় ফাঁক রয়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষাগত ও মানসিক চাহিদা অনুযায়ী আলাদা পরিকল্পনা থাকা জরুরি। দেশের শিক্ষকদের আন্তরিকতা আছে, সরকারিভাবে এটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হলে তাঁরা আরও উদ্দীপ্ত হবেন।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইটসেভারসের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন কো–অর্ডিনেটর খন্দকার সোহেল রানা। বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সমন্বিত শিক্ষা) মো. জয়নাল আবেদীন ও সহকারী পরিচালক রুখসানা পারভীন, আইসিইভিআইর বাংলাদেশ প্রতিনিধি খন্দকার জহুরুল আলম, ব্লাইন্ড এডুকেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. সাইদুল হক, ইউনিসেফ বাংলাদেশের এডুকেশন ম্যানেজার জন ইকাজু, সাইটসেভারসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার লুসি রিভি, স্পন্দনের সিএসটি সদস্য ওয়াদুদ হাসান, আলোর প্রদীপ প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থার (সিরাজগঞ্জ) আল আমিন শেখ, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (নরসিংদী) মাসুদুল হাসান তাপস, নরসিংদী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিরঞ্জন কুমার রায়, সিরাজগঞ্জের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ, ফারুক আজিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরসিংদীর প্রধান শিক্ষক জয়শ্রী সাহা প্রমুখ। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ