নগর ভবনে আজ থেকে আবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন কর্মচারীরা, বন্ধ রয়েছে নাগরিক সেবা
Published: 24th, May 2025 GMT
বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আজ শনিবার সকাল থেকে আবার নগর ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন করপোরেশনের কর্মচারীরা। তাঁরা বলছেন, ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।
১৪ মে এ কর্মসূচি শুরু করার পরদিন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবন থেকে সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো নগর ভবনের ফটকগুলোর তালা খোলা হয়নি। এ ভবনেই স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয় অবস্থিত। সেটিও ১৫ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ওই দিন থেকে নগর ভবনে এসে আর অফিস করতে পারছেন না।
ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চলমান আন্দোলন পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। সে সময় পার না হলেও দক্ষিণ সিটির কর্মচারীরা আজ বেলা ১১টা থেকে আবার অবস্থান নিয়ে নগর ভবনের নিচতলায় বিক্ষোভ শুরু করেছেন। ঢাকাবাসীর ব্যানারে শুরু করা হয় এ কর্মসূচি।
কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমানের কাছে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আজ বেলা আড়াইটার দিকে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে যে কর্মসূচি শুরু করা হয়েছিল, সেটা স্থগিত করা হয়নি। যত দিন তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া না হচ্ছে, তত দিন এ কর্মসূচি চলবে।
গত ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো.
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। ডিএসসিসি এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রশীদ ১৪ মে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে ট্রাইব্যুনালের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন।
রিট করার পর ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা নগর ভবন অবরোধ করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন এবং তাঁকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন।
গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট খারিজ করে দেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘হাইকোর্টে একটি রিট করে আমাকে মেয়র পদে শপথ গ্রহণ থেকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। সবশেষে আইনের শাসনের বিজয় হয়েছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আমরা আশা রাখব, অন্তর্বর্তী সরকার আর এক দিনও কালক্ষেপণ না করে অবিলম্বে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে তাদের আগামী দিনের এজেন্ডা জনগণের কাছে তুলে ধরবে।’
সরকার যদি শপথ পড়ানো নিয়ে টালবাহানা করে, তবে আবার আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ইশরাক। সে অনুযায়ী তাঁর বেঁধে দেওয়া সময় আজ বিকেলে শেষ হচ্ছে। তাই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে ইশরাক ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
নাগরিক ভোগান্তি অব্যাহতনগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলছে আগের মতোই। কর্মচারীরা আজও নগর ভবনের নিচতলায় ব্যানার, ফেস্টুন টানিয়ে এবং মাইকের শব্দ আর স্লোগানে তাঁতিয়ে রেখেছেন পুরো চত্বর।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির পরিচ্ছন্নতা শাখার একজন কর্মচারী বলেন, ‘আমরা এই শহর পরিষ্কার করি, আমরা জানি কারা শহরের জন্য কাজ করতে পারে। ইশরাক ভাইকে নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই।’
কর্মসূচির কারণে নগর ভবনের কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এ ভবন থেকে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, বিল পরিশোধ, নির্মাণকাজের অনুমোদনসহ প্রাথমিক নাগরিক সেবাগুলো ১৫ মে থেকে আজ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। ফটকের তালা না খোলায় সেবাপ্রত্যাশীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
গোপীবাগ থেকে আসা এক বাসিন্দা বলেন, ‘মেয়রের জন্য আন্দোলন হতেই পারে, কিন্তু জনগণের অফিস তো বন্ধ রাখা যায় না!’
আরও পড়ুনশপথ কেবল একটা ফরমালিটি: ইশরাক হোসেন২৩ মে ২০২৫‘বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন উপদেষ্টা’আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন, ইশরাকের শপথ গ্রহণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা। তাঁদের অভিযোগ, শুরু থেকে সময়ক্ষেপণ, চিঠি চালাচালি আর ব্যাখ্যার জালে ইশরাকের শপথ গ্রহণ আটকে রাখা হচ্ছে।
ডিএসসিসির এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জানি, কারা ইচ্ছা করে বিলম্ব করছে। আজ যদি উপদেষ্টা চান, কাল সকালেই শপথ হয়ে যায়।’
আরও পড়ুনকাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দিলেন ইশরাক২২ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন নগর ভবন র উপদ ষ ট ড এসস স অবস থ ন র জন য বন ধ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১৪ দেশে ফের শুল্ক আরোপ, বাণিজ্যে অস্থিরতার শঙ্কা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিত্র দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও ১৪ দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এসব দেশকে আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করবে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এর খারাপ প্রভাব পড়বে।
শুল্ক আরোপ করা হয়েছে এমন অন্য দেশগুলো হলো– বাংলাদেশ, মিয়ানমার, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, সার্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কাজাখস্তান, তিউনিসিয়া ও মালয়েশিয়া।
মিয়ানমার ও লাওসের ওপর সবচেয়ে বেশি ৪০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। মিয়ানমার যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও সামুদ্রিক খাবার এবং লাওস ট্রেক্সটাইল পণ্যসহ জুতা, কাঠের আসবাব, ইলেকট্রনিক উপাদান ও অপটিক্যাল ফাইবার রপ্তানি করে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া ৩৬ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়েছে। কম্বোডিয়া যুক্তরাষ্ট্রে টেক্সটাইল, পোশাক, জুতা ও সাইকেল এবং থাইল্যান্ড কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, রাবার পণ্য ও রত্নপাথর রপ্তানি করে। সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা এবং গাড়ির টায়ার রপ্তানি করে থাকে।
ইন্দোনেশিয়া ৩২ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। দেশটি পাম অয়েল, কোকো মাখন ও সেমিকন্ডাক্টর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বসনিয়ার প্রধান রপ্তানি অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা প্লাটিনাম, হীরা, যানবাহন এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ রপ্তানি করে।
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, তিউনিসিয়া ও মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। জাপান যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও ইলেকট্রনিকস পণ্য; দক্ষিণ কোরিয়া যানবাহন, যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিকস পণ্য; কাজাখস্তান তেল, ইউরেনিয়াম, ফেরোঅ্যালয় ও রুপা এবং মালয়েশিয়া ইলেকট্রনিকস ও বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিউনিসিয়ার প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো, প্রাণী ও উদ্ভিজ্জ চর্বি, পোশাক, ফল ও বাদাম। বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপ হয়েছে ৩৫ শতাংশ। দেশটি বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে।
শুল্ক আরোপের চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই দেশগুলোর সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। তবে তা হতে হবে ন্যায্য ও সুষম বাণিজ্যের মাধ্যমে। তিনি হুমকি দিয়েছেন, কোনো দেশ প্রতিশোধমূলক পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিলে, তাদের ওপর আরও উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হবে। আর বাণিজ্য বাধা দূর করতে আলোচনা চাইলে সেই পথ খোলা আছে। সোমবার শুল্ক আরোপের সময়সীমা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, সময়সীমার ঘোষণাটি শতভাগ মানা হবে তা নয়। কেউ আলোচনা চাইলে পথ খোলা।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করবেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় বলেছে, সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসবে। খবর রয়টার্স ও বিবিসির।