বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আজ শনিবার সকাল থেকে আবার নগর ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন করপোরেশনের কর্মচারীরা। তাঁরা বলছেন, ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।

১৪ মে এ কর্মসূচি শুরু করার পরদিন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবন থেকে সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো নগর ভবনের ফটকগুলোর তালা খোলা হয়নি। এ ভবনেই স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয় অবস্থিত। সেটিও ১৫ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ওই দিন থেকে নগর ভবনে এসে আর অফিস করতে পারছেন না।

ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চলমান আন্দোলন পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। সে সময় পার না হলেও দক্ষিণ সিটির কর্মচারীরা আজ বেলা ১১টা থেকে আবার অবস্থান নিয়ে নগর ভবনের নিচতলায় বিক্ষোভ শুরু করেছেন। ঢাকাবাসীর ব্যানারে শুরু করা হয় এ কর্মসূচি।

কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমানের কাছে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আজ বেলা আড়াইটার দিকে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে যে কর্মসূচি শুরু করা হয়েছিল, সেটা স্থগিত করা হয়নি। যত দিন তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া না হচ্ছে, তত দিন এ কর্মসূচি চলবে।

গত ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো.

নুরুল ইসলাম ২০২০ সালের ডিএসসিসি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা করেন এবং ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। ডিএসসিসি এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রশীদ ১৪ মে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে ট্রাইব্যুনালের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন।

রিট করার পর ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা নগর ভবন অবরোধ করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন এবং তাঁকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন।

গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট খারিজ করে দেন।

ইশরাক হোসেন বলেন, ‘হাইকোর্টে একটি রিট করে আমাকে মেয়র পদে শপথ গ্রহণ থেকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। সবশেষে আইনের শাসনের বিজয় হয়েছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আমরা আশা রাখব, অন্তর্বর্তী সরকার আর এক দিনও কালক্ষেপণ না করে অবিলম্বে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে তাদের আগামী দিনের এজেন্ডা জনগণের কাছে তুলে ধরবে।’

সরকার যদি শপথ পড়ানো নিয়ে টালবাহানা করে, তবে আবার আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ইশরাক। সে অনুযায়ী তাঁর বেঁধে দেওয়া সময় আজ বিকেলে শেষ হচ্ছে। তাই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে ইশরাক ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।

নাগরিক ভোগান্তি অব্যাহত

নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলছে আগের মতোই। কর্মচারীরা আজও নগর ভবনের নিচতলায় ব্যানার, ফেস্টুন টানিয়ে এবং মাইকের শব্দ আর স্লোগানে তাঁতিয়ে রেখেছেন পুরো চত্বর।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির পরিচ্ছন্নতা শাখার একজন কর্মচারী বলেন, ‘আমরা এই শহর পরিষ্কার করি, আমরা জানি কারা শহরের জন্য কাজ করতে পারে। ইশরাক ভাইকে নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই।’

কর্মসূচির কারণে নগর ভবনের কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এ ভবন থেকে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, বিল পরিশোধ, নির্মাণকাজের অনুমোদনসহ প্রাথমিক নাগরিক সেবাগুলো ১৫ মে থেকে আজ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। ফটকের তালা না খোলায় সেবাপ্রত্যাশীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

গোপীবাগ থেকে আসা এক বাসিন্দা বলেন, ‘মেয়রের জন্য আন্দোলন হতেই পারে, কিন্তু জনগণের অফিস তো বন্ধ রাখা যায় না!’

আরও পড়ুনশপথ কেবল একটা ফরমালিটি: ইশরাক হোসেন২৩ মে ২০২৫‘বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন উপদেষ্টা’

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন, ইশরাকের শপথ গ্রহণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা। তাঁদের অভিযোগ, শুরু থেকে সময়ক্ষেপণ, চিঠি চালাচালি আর ব্যাখ্যার জালে ইশরাকের শপথ গ্রহণ আটকে রাখা হচ্ছে।

ডিএসসিসির এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জানি, কারা ইচ্ছা করে বিলম্ব করছে। আজ যদি উপদেষ্টা চান, কাল সকালেই শপথ হয়ে যায়।’

আরও পড়ুনকাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দিলেন ইশরাক২২ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন নগর ভবন র উপদ ষ ট ড এসস স অবস থ ন র জন য বন ধ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতরে মিলল ২৩টি ককটেল, আটক ১

মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতর তিনটি প্লাস্টিকের বালতিতে লুকিয়ে রাখা ২৩টি ককটেল উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের বোনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে তারা। পাশাপাশি মোহাম্মদ হাসান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

রবিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈখর অনির্বাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ড্রেন থেকে ককটেলগুলো উদ্ধার হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম সাইফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

অভয়নগরে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা, আহত ৩

দিনাজপুরে পুকুর পাড় থেকে গ্রেনেড উদ্ধার 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের ঢাকনা খোলেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা প্লাস্টিকের বালতিতে তুষ দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় কিছু বস্তু দেখতে পান। পাশাপাশি তিনটি ড্রেনের ঢাকনা খুলে তারা একই চিত্র দেখেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেনের ভেতর থেকে তিনটি বালতিতে রাখা ২৩টি তাজা ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

আটক হাসান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারীর ভাগ্নি জামাই বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ককটেলগুলো উদ্ধার করে। এ সময় মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারির বোন সেলিনা বেগমের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসান নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ঢাকা/রতন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ