‘গরু পানিতে ডুইব্বা আমাগো তো সব শেষ হইয়া গেছে’
Published: 24th, May 2025 GMT
‘ছয়ডা গাই বাছুর আছিলো। পোলাপাইনের মতো যত্ন কইরা পালতাম। এইর মইধ্যে দুইডা গরু ৫ কেজি কইরা ১০ কেজি দুধ দিত। হেই দুধ বেইচ্চা আমাগো সংসার চলতো, দুই পোলামাইয়ার পড়ালেহা চলতো। গরু পানিতে ডুইব্বা আমাগো সব শেষ হইয়া গেলো!’
বিলাপ করে আজ শনিবার সকালে কথাগুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রামের বাসিন্দা রিমা বেগম। তিনি একই এলাকার মহসিন মিয়ার স্ত্রী। গতকাল শুক্রবারও এই দম্পতির গোয়ালঘরে বিভিন্ন বয়সী ছয়টি গরু ছিল। গতকাল বিকেলে খালে জোয়ারের পানি ও কচুরিপানার চাপে তাঁদের ৫টি গরুসহ মোট ২৯টি গরু মারা গেছে। গরু হারিয়ে জীবন–জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে কয়েকটি পরিবার।
আরও পড়ুনজোয়ারের পানিতে খালে ভেসে গেল অর্ধশতাধিক গরু, ২৬টি মৃত অবস্থায় উদ্ধার১৯ ঘণ্টা আগেআজ সকালে রিমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা গোয়ালঘরে ছোট্ট একটি বাছুরকে ধরে বসে বসে কাঁদছেন। একপর্যায়ে রিমা বলেন, ‘৮-১০ বছর অন্য মানুষের গরু বর্গা আইন্না পালছি। ধারদেনা কইরা একটা গরু কিনছিলাম। ওই গরু দিয়া তিল তিল কইরা ঘরটা ভইরা ফালাইছিলাম। চাইরজনের সংসার, দুই পোলাপাইনের সব খরছ গরুর রোজগার দিয়াই চলতো। এই গুলাই আমাগো সম্পদ আছিলো। চোখের সামনেই সব শেষ হইয়া গেলো।’
রিমা-মহসিন দম্পতির মতোই নিজেদের এক বা একাধিক গরু হারিয়ে এখন দিশাহারা গ্রামটির আরও ১৮টি পরিবার। শুক্রবার খাল পার হতে গিয়ে কচুরিপানার চাপ আর জোয়ারের পানিতে ডুবে স্থানীয় বাসিন্দা নাহিদ ইসলাম ও ইয়ানূর হোসেনের ৩টি করে মোট ৬টি, এম আর হোসেনের দুটি, মাসুম মিয়ার একটি, আবুল হোসেনের ৩টি, শাহজালালের ৩টি, কবির হোসেন খানের ৩টি, শরিফ হোসেনের ৩টি, তরিকুল ইসলামের ২টিসহ মোট ২৯টি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
রোজগারের একমাত্র অবলম্বন একটি গাভি মারা যাওয়ায় শূন্য গোয়ালঘর দেখিয়ে কাঁদছিলেন এম আর হোসেন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে