‘ছয়ডা গাই বাছুর আছিলো। পোলাপাইনের মতো যত্ন কইরা পালতাম। এইর মইধ্যে দুইডা গরু ৫ কেজি কইরা ১০ কেজি দুধ দিত। হেই দুধ বেইচ্চা আমাগো সংসার চলতো, দুই পোলামাইয়ার পড়ালেহা চলতো। গরু পানিতে ডুইব্বা আমাগো সব শেষ হইয়া গেলো!’

বিলাপ করে আজ শনিবার সকালে কথাগুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রামের বাসিন্দা রিমা বেগম। তিনি একই এলাকার মহসিন মিয়ার স্ত্রী। গতকাল শুক্রবারও এই দম্পতির গোয়ালঘরে বিভিন্ন বয়সী ছয়টি গরু ছিল। গতকাল বিকেলে খালে জোয়ারের পানি ও কচুরিপানার চাপে তাঁদের ৫টি গরুসহ মোট ২৯টি গরু মারা গেছে। গরু হারিয়ে জীবন–জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে কয়েকটি পরিবার।

আরও পড়ুনজোয়ারের পানিতে খালে ভেসে গেল অর্ধশতাধিক গরু, ২৬টি মৃত অবস্থায় উদ্ধার১৯ ঘণ্টা আগে

আজ সকালে রিমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা গোয়ালঘরে ছোট্ট একটি বাছুরকে ধরে বসে বসে কাঁদছেন। একপর্যায়ে রিমা বলেন, ‘৮-১০ বছর অন্য মানুষের গরু বর্গা আইন্না পালছি। ধারদেনা কইরা একটা গরু কিনছিলাম। ওই গরু দিয়া তিল তিল কইরা ঘরটা ভইরা ফালাইছিলাম। চাইরজনের সংসার, দুই পোলাপাইনের সব খরছ গরুর রোজগার দিয়াই চলতো। এই গুলাই আমাগো সম্পদ আছিলো। চোখের সামনেই সব শেষ হইয়া গেলো।’

রিমা-মহসিন দম্পতির মতোই নিজেদের এক বা একাধিক গরু হারিয়ে এখন দিশাহারা গ্রামটির আরও ১৮টি পরিবার। শুক্রবার খাল পার হতে গিয়ে কচুরিপানার চাপ আর জোয়ারের পানিতে ডুবে স্থানীয় বাসিন্দা নাহিদ ইসলাম ও ইয়ানূর হোসেনের ৩টি করে মোট ৬টি, এম আর হোসেনের দুটি, মাসুম মিয়ার একটি, আবুল হোসেনের ৩টি, শাহজালালের ৩টি, কবির হোসেন খানের ৩টি, শরিফ হোসেনের ৩টি, তরিকুল ইসলামের ২টিসহ মোট ২৯টি গরুর মৃত্যু হয়েছে।

রোজগারের একমাত্র অবলম্বন একটি গাভি মারা যাওয়ায় শূন্য গোয়ালঘর দেখিয়ে কাঁদছিলেন এম আর হোসেন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার-নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইলেন জামায়াত আমির

জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আমরা সংস্কার ও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছি। তবে সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেঁধে দেননি।”

শনিবার (২৪ মে) রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

শফিকুর রহমান বলেন, “প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা বলেছি জনগণের ভোগান্তি যেন না হয়, সে সময়ে নির্বাচন দিতে। এর আগে সংস্কার ও বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হবে। আরেকটি দল জুলাই ঘোষণার বিষয়ে কথা বলেছে। এটা তাদের ব্যাপার।”

আরো পড়ুন:

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি বিএনপির

বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন দাবি বিএনপির

তিনি বলেন, “গত পরশুদিন প্রধান উপদেষ্টা একটা মেসেজ দিতে চেয়েছিলেন। যদিও তিনি দেননি। তারপরও দেশবাসী জেনে গেছে। তিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। যতটুকু জানা গেছে, বিভিন্ন দাবিসহ সাম্প্রতিক আন্দোলনে কিছুটা মনোক্ষুণ্ণ ছিলেন তিনি। তাই এমনটা শোনা গিয়েছিল। আমরা মনে করি, দেশ ভালো থাকলে সবাই ভালো থাকবে।”

জামায়াত আমির বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের থাকবেন না। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে কিছু কথা উঠেছে। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি।আমরা অংশগ্রহণমূলক ভোট চাই। তবে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেননি প্রধান উপদেষ্টা।”

কোনো উপদেষ্টার পদত্যাগ চান কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা কারো পদত্যাগ চাইনি। আমাদের চাওয়ার প্রেক্ষিতে আজকে এই বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমি যেনতেনভাবে থাকতে চাই না। সবার নিয়ে থাকতে চাই।”

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ