বিশ্বজুড়ে ব্যক্তিগত তথ্য ও আর্থিক তথ্য চুরির সঙ্গে জড়িত শক্তিশালী ম্যালওয়্যার ‘লুমা স্টিলারের’ বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান চালিয়েছে মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অন্তত ৩ লাখ ৯৪ হাজার উইন্ডোজ কম্পিউটার এই ম্যালওয়্যারে সংক্রমিত হয়েছে।

২১ মে মাইক্রোসফটের প্রকাশিত এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়, তাদের ডিজিটাল ক্রাইমস ইউনিটের (ডিসিইউ) নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, ইউরোপোল, জাপানের সাইবার ক্রাইম কন্ট্রোল সেন্টারসহ বিভিন্ন দেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। অভিযানে লুমা স্টিলার ম্যালওয়্যারের নিয়ন্ত্রণকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি জব্দ করা হয়েছে অন্তত ২ হাজার ৩০০টি ডোমেইন। মাইক্রোসফট জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে সাইবার অপরাধীরা তথ্য ও অর্থ চুরির জন্য বর্তমানে যে সফটওয়্যারগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছেন, ‘লুমা স্টিলার’ তাদের মধ্যে অন্যতম।

‘লুমা স্টিলার’ মূলত একটি ‘ম্যালওয়্যার অ্যাজ আ সার্ভিস’ বা সেবারূপে সরবরাহযোগ্য ম্যালওয়্যার। যা যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অর্থের বিনিময়ে সরবরাহ করা হয়। ম্যালওয়্যারটি সহজে বিতরণযোগ্য এবং প্রচলিত সাইবার সুরক্ষাব্যবস্থা এড়িয়ে চলার সক্ষমতা থাকায় এটি সাইবার অপরাধীদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সাধারণত লক্ষ্য স্থির করে পাঠানো ফিশিং ই-মেইল (সফিস্টিকেটেড স্পিয়ার ফিশিং) এবং ভুয়া বিজ্ঞাপন (ম্যালভারটাইজিং) ব্যবহার করে এই ম্যালওয়্যার ছড়ানো হয়। কখনো কখনো মাইক্রোসফটসহ পরিচিত ব্র্যান্ডের ছদ্মবেশ ধারণ করেও লুমা স্টিলার ছড়ানো হয়। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ‘এডিটপ্রো’ নামের একটি ভুয়া এআই ভিডিও এডিটিং টুলের মাধ্যমে ম্যালওয়্যারটি ছড়ানোর ঘটনা ধরা পড়ে। ওই টুল ব্যবহারকারীর ডিভাইসে ইনস্টল হওয়ার পর লুমা স্টিলার গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে তা দূরবর্তী হ্যাকারদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। চলতি বছরের শুরুতে একটি ফিশিং অভিযানে ‘বুকিং ডটকম’-এর নাম ব্যবহার করে ভুয়া ই-মেইল পাঠানো হয়। সেখানে লুমা স্টিলারসহ একাধিক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়।

লুমা স্টিলার মূলত গুগল ক্রোম, মাইক্রোসফট এজ ও মজিলা ফায়ারফক্সের মতো জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজারে সংরক্ষিত তথ্যকে টার্গেট করে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর সংরক্ষিত পাসওয়ার্ড, ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটের তথ্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ, ক্রেডিট কার্ড নম্বরসহ নানা ধরনের সংবেদনশীল তথ্য চুরি করা হয়। ২০২২ সালে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ম্যালওয়্যার পরবর্তীকালে একাধিক র‍্যানসমওয়্যার হামলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।

মাইক্রোসফটের অভিযানে শুধু ম্যালওয়্যারের প্রযুক্তিগত কাঠামো ও এর ব্যবসায়িক বিতরণব্যবস্থাও ব্যাহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, তারা লুমা স্টিলারের মূল নিয়ন্ত্রণ কমান্ড ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার জব্দ করেছে। পাশাপাশি অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোও শনাক্ত ও বন্ধ করা হয়েছে, যেখানে ম্যালওয়্যারটি কেনাবেচা হতো। মাইক্রোসফট বলছে, বিশ্বজুড়ে ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা এই ধরনের ম্যালওয়্যার চক্রের বিরুদ্ধে আরও অভিযান পরিচালনা করবে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীদের হালনাগাদ অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারের পাশাপাশি অচেনা ই-মেইল ও লিংক খোলায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম য লওয় য র ব যবহ র কর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।

মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।

সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়ন

টিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।

উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।

বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’

হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান

অবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’

হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।

জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’

জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।

চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’  

হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • ৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে