বন্দি বিনিময়ের পরপরই কিয়েভে রুশ ড্রোন হামলা
Published: 24th, May 2025 GMT
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শনিবার ভোরে চালানো হামলায় শহরটির বিভিন্ন অংশে আগুন লাগে এবং বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় অন্তত আটজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কিয়েভের মেয়র। দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটল।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলায় গুরুতর আহত দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো জানান, সোলোমিনস্কি জেলায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সর্বোচ্চ তলায় আঘাত হানে একটি ড্রোন। এর পর ওই অ্যাপার্টমেন্ট ও পাশের একটি অনাবাসিক ভবনেও আগুন ধরে যায়। কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর কাচেঙ্কো জানান, ডনিপ্রোভস্কি জেলায়ও একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের দুটি তলায় আগুন ধরে যায়। হামলার দুই ঘণ্টার বেশি সময় পরও কিয়েভে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বাজতে শোনা গেছে।
ওডেসা অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ কিপার জানান, শুক্রবার দুপুরে রাশিয়া অঞ্চলটির বন্দর অবকাঠামোয় দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে একজন নিহত ও আটজন আহত হন। শুক্রবার রাশিয়া দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের রাকিভকা নামের একটি গ্রাম দখল করেছে।
গত কয়েক দিনে মস্কোসহ রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের প্রায় ৮০০টি ড্রোন হামলার পর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এ জবাব এলো। এর আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভ শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব হামলার ‘প্রত্যুত্তর’ অবশ্যই দেওয়া হবে।
এর আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শুরু হয় বন্দি বিনিময়। প্রথম ধাপে দু’দেশ একসঙ্গে ৩৯০ জন করে বন্দি বিনিময় করেছে, যা ছিল যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ার সূচনা। শুক্রবার পর্যন্ত দু’পক্ষ ২৭০ সেনা ও ১২০ জন করে বেসামরিক নাগরিক মুক্ত করে। ধাপে ধাপে আরও বন্দিদের মুক্ত করা হবে।
গত সপ্তাহে তিন বছরের মধ্যে প্রথমবার মুখোমুখি আলোচনায় বসেছিল দু’পক্ষ। যদিও যুদ্ধবিরতিতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্য থাকলেও তা হয়নি। বন্দি বিনিময়ের চুক্তিই ছিল ওই বৈঠকের একমাত্র কার্যকর অগ্রগতি। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ ১ হাজার জনের বেশি বন্দির মুক্তি দেবে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, মুক্তিপ্রাপ্ত রুশ নাগরিকদের বর্তমানে ইউক্রেনের প্রতিবেশী বেলারুশে রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর পর তাদের রাশিয়ায় ফেরত নেওয়া হবে। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে কিছু বেসামরিক নাগরিক আছেন, যারা কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় অনুপ্রবেশের সময় আটক হয়েছিলেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মুক্তিপ্রাপ্তদের ছবি প্রকাশ করেছেন। ছবিতে দেখা গেছে, মাথা ন্যাড়া করা বন্দিরা উচ্ছ্বসিতভাবে ইউক্রেনের জাতীয় পতাকা নিয়ে স্বাধীনতা উদযাপন করছেন।
দু’পক্ষের বন্দি বিনিময় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, ‘উভয় পক্ষকে অভিনন্দন। এটি কী বড় কিছুর সূচনা হতে পারে?’ বলে প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, শান্তি প্রক্রিয়া আটকে গেলে তিনি রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এইচএসসির পর বিদেশে পড়াশোনা, এসওপি-বৃত্তি পেতে কীভাবে নেবেন প্রস্তুতি
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যেতে চাইলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-পরবর্তী সময় উত্তম সময়। দেশে স্নাতক করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় কোর্স আউটলাইনসহ অনেক সময় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু স্নাতক স্তর থেকে বিদেশে পড়াশোনা শুরু করা গেলে পরবর্তী পর্যায়গুলোতে আর এ অসামঞ্জস্যতার আশঙ্কা থাকে না। তাই এইচএসসির পরপরই বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্ভব হলে দূর ভবিষ্যতে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোতে প্রবেশ প্রক্রিয়া সহজ হয়ে ওঠে। দীর্ঘ মেয়াদে এই সুফলের জন্য দেশে থাকা অবস্থাতেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এইচএসসির পরপরই বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক—
প্রবেশিকা পরীক্ষা
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন একাডেমিক পর্যায়ের প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তির জন্য অতিরিক্ত প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়। এগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পরীক্ষাগুলো হলো এসএটি (স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট) এবং এসিটি (আমেরিকান কলেজ টেস্টিং)। এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর রিডিং, রাইটিং ও গাণিতিক বিশ্লেষণের মতো প্রাথমিক দক্ষতাগুলো যাচাই করা হয়। স্যাটে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ স্কোর তুলতে হয়, সেখানে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য এসিটিতে ২৫ থেকে ৩০ স্কোর প্রয়োজন হয়। যুক্তরাজ্যের জন্য ইসিএএস (ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজেস অ্যাডমিশন সার্ভিস) ট্যারিফ বা এ লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক কিছু পরীক্ষার ফলাফলকেও গুরুত্ব দেয়। যেমন যুক্তরাজ্যে মেডিকেল সায়েন্সের জন্য বিএমএটি (বায়োমেডিকেল অ্যাডমিশন টেস্ট) অথবা ইউসিএটি (ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক্যাল অ্যাপটিটিউড টেস্ট) পরীক্ষা দিতে হয়।
ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা—আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। এই আবশ্যকীয় যোগ্যতাটি যাচাইয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত বেশ কিছু পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন—
আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম)
টোয়েফেল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাস ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ)
পিটিই (পিয়ার্সন টেস্ট অব ইংলিশ)
ডুওলিঙ্গো
এগুলোর মধ্যে আইইএলটিএস ও টোয়েফেল বহু বছর ধরে ইংরেজি ভাষাভাষীসহ অন্য ভাষার দেশগুলোতেও অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইইএলটিএস স্কোর সাধারণত ৬ থেকে ৭ দশমিক ৫-এর মধ্যে থাকলে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে আবেদন করা যায়।
অপর দিকে টোয়েফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর দেখাতে হয়। কিছু ইউরোপীয় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এইচএসসির মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন (এমওআই) বা পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি ভাষায় হলেই ভর্তি নিয়ে নেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি মূলত শুধু ইংলিশ মিডিয়াম ও ইংরেজি ভার্সন কলেজগুলোর জন্য প্রযোজ্য।
ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার দেশগুলোতে অধ্যয়নের জন্য সেখানকার স্থানীয় ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য আলাদা পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন জার্মানির ক্ষেত্রে টেস্টডিএএফ (টেস্ট অব জার্মান অ্যাস আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ) বা ডিএসএইচ (জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সামিনেশন ফর ইউনিভার্সিটি এনট্রান্স) পাস করতে হয়। একইভাবে ফ্রান্সে গুরুত্ব দেওয়া হয় ডিএএলএফ (ডিপ্লোমা ইন অ্যাডভান্সড ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ) পরীক্ষার ফলাফলকে।
আরও পড়ুনতুরস্কে বিলকেন্ট ইউনিভার্সিটির বৃত্তি, আইইএলটিএসে ৬.৫ হলে আবেদন ০৮ মার্চ ২০২৫উচ্চশিক্ষা ও অভিবাসনের প্রয়োজনীয় নথি তৈরি—শিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে কিছু দরকারি নথি প্রয়োজন হয়। প্রথমটি হচ্ছে স্টেটমেন্ট অব পার্পাস (এসওপি)। এখানে আবেদনকারীর একাডেমিক লক্ষ্য, দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা তার প্রোগ্রাম নির্বাচনের কারণগুলো উল্লেখ করতে হয়।
এরপরেই আসে লেটার অব রিকমেন্ডেশন (এলওআর)। এটি হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীর যোগ্যতার ব্যাপারে সুপারিশনামা। সাধারণত মাধ্যমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা এই সুপারিশ করে থাকেন। সংগত কারণেই এই লেটারের কয়েকটি কপি তৈরি করে রাখতে হয়। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ থেকে ৩টি এলওআর সরবরাহের প্রয়োজন হয়।
এসওপি ও এলওআরের সঙ্গে একটি সিভি বা রেজুমি ও কাভার লেটার বা পারসোনাল স্টেটমেন্ট যুক্ত করা হলে আবেদনটি আরও শক্তিশালী হয়। সিভি বা রেজুমিতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে একাডেমিক ও একাডেমির বাইরের যাবতীয় অর্জনগুলো লিপিবদ্ধ থাকে। পারসোনাল স্টেটমেন্টের আরও একটি নাম মোটিভেশনাল লেটার। এখানে অধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত কোর্সটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীর আবেগের বিষয়টি পেশাগত কায়দায় ফুটিয়ে তুলতে হয়।
সর্বোপরি, এসব নথি তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে।
ফাইল ছবি