গাজায় ত্রাণের ট্রাকের কাছে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা
Published: 24th, May 2025 GMT
গাজার বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণের ময়দা নিয়ে যাওয়া ট্রাকের কাছে ভয়াবহ হামলা হয়েছে। শনিবার দক্ষিণ গাজার আল মাওয়াসিতে ইসরায়েলের চালানো এ হামলায় পাঁচজন নিহত ও অর্ধশত আহত হন। সব মিলিয়ে এক দিনে উপত্যকায় আরও ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েল অবরোধ শিথিল করে একাংশে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিলেও উত্তর গাজায় তা পৌঁছাচ্ছে না। সেখানকার মানুষ এখনও অভুক্ত দিন পার করছেন।
অবরুদ্ধ উপত্যকায় ত্রাণের গাড়ি প্রবেশ শুরু হলেও বন্ধ হচ্ছে না হামলা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, গত দু’দিনে শতাধিক লক্ষ্যে তারা হামলা চালিয়েছে। এতে ৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শনিবার ভোরে গাজা সিটির পূর্বে তুফা এলাকায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় চারজন নিহত হন। বিমান ও ড্রোন হামলার পাশাপাশি সামরিক অভিযানও চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গতকাল তারা মধ্য গাজার দায়ের আল বালাহতে সামরিক অভিযান শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে গাজায় মৃতের সংখ্যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৯০০ পার হয়েছে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৫৯৩ জন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আরও অন্তত ১০ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে নিখোঁজ আছেন।
৯২টি ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ
গাজার চিকিৎসা সহায়তাবিষয়ক বিভাগের প্রধান শনিবার বলেছেন, উপত্যকায় গত তিন দিনে ৯২টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও খাবারে তীব্র সমস্যা রয়েছে। দক্ষিণে ত্রাণ পৌঁছলেও উত্তর গাজায় কোনো ট্রাক প্রবেশ করেনি। কার্যত সার্বিক পরিস্থিতির খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি বলে গাজা থেকে সংবাদকর্মীরা জানাচ্ছেন। আহমেদ আল নাজ্জার নামে গাজার এক বাসিন্দা সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণ গাজায় সীমিত সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। অনেক পরিবার এখনও অভুক্তই থেকে গেছে। তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছায়নি।
মানবঢাল বানাচ্ছে ইসরায়েল
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজার সাধারণ বাসিন্দাদের মানবঢাল বানানোর অভিযোগ উঠেছে। মাসুদ আবু সাইদ নামের এক ফিলিস্তিনি জানান, ২০২৪ সালের মার্চে খান ইউনিসে তাঁকে দুই সপ্তাহ ধরে মানবঢাল করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এটা খুব ভয়াবহ বিষয় ছিল। আমার শিশু-সন্তান ছিল; আমি তাদের কাছে যেতে চাচ্ছিলাম।’ তিনি জানান, তাঁকে জোর করে হামাসের টানেল খুঁজে বের করার কাজ দেওয়া হয়েছিল।
আরও খাদ্য সরবরাহের আহ্বান
গাজার পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে ত্রাণ সরবরাহ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক অফিস জানায়, গাজায় প্রয়োজন ব্যাপক। সে তুলনায় অল্প পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাজার দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে সতর্ক করে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র পর স থ ত প রব শ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪