বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ব‌লে‌ছেন, ‘‘জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার দরকার ততটুকু শেষে নির্বাচন দিতে হবে। সংস্কার যদি আগামী তিন মাসের মধ্যে হয়ে যায় তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে সমস্যা কোথায়?’’  

শনিবার (২৪ মে) বিকেল ৪টায় বগুড়া শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তি‌নি এ সব কথা বলেন। 

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘জনগণ চায় স্থায়ী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার কোনো নির্বাচিত এবং স্থায়ী সরকার নয়। কোনো রাজনৈতিক দল যদি নিজেদের গুছিয়ে নিতে এবং জোট গঠনে দেরী করে তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া যাবে না। তারেক রহমান দেশের বাম-ডান সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। আমরা সবাইকে নিয়ে ১৫ বছর জোটবদ্ধ আন্দোলন করেছি।’’ 

আরো পড়ুন:

অডিও ফাঁস: মিরপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে বদলি

চবিসাসের নেতৃত্বে জানে আলম-মাহফুজ

তি‌নি আরো বলেন, ‘‘তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আগামীর রাজনীতিকে তারেক রহমান এগিয়ে নেবেন। তাই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় তরুণদের লড়াই করতে হবে।’’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘অধ্যাপক ইউনূস একজন ভালো মানুষ। তার বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই। কিন্তু আসিফ মাহমুদের কথামত দেশ চালালে তো চলবে না।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘ইউনূস সরকারের কিছু কিছু ভুল হচ্ছে। তাই সেই সম্পর্কে আমরা কথা বলি কিন্তু এটা কোনো কোনো উপদেষ্টা  মানতে পারছেন না। রাজনৈতিক দল হিসেবে কথা বলতেই হবে।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘চট্রগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়া ও অন্যদেশকে করিডোর দেয়ার প্রতিবাদ করবোই। বিএনপি তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য আগামীতে কাজ করবে। হাসিনা শুধু টাকা পাচার করেছে,  কর্মসংস্থানের জন্য কিছু করেনি।’’ 

জাতীয়তাবাদী  ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের  সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের  সভাপতিত্বে  সমাবেশে বক্তব্য দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক  কামরুজ্জামান জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবকদল কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু হাসান মোহাম্মাদ ইয়াহিয়া, বগুড়ার নিহত যুবদল নেতা ইমরান হোসেনের কন্যা সামিয়া ইসলাম মীম।

সমাবেশের  প্রধান বক্তা  যুবদলের  কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘‘জনগণ এ সরকারকে আর চায় না। তাই দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’’ 

ঢাকা/এনাম/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ল ইসল ম র জন ত ক র জন য য বদল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঐক্যের ভিত্তিতে গণতন্ত্রে ফিরতে হবে

জাতীয় নিরাপত্তা কেবল সামরিক সক্ষমতার বিষয় নয়। এর সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনীতির বিকাশ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

আজ রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য’ শীর্ষক সংলাপে এই অভিমত দেন বক্তারা। ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস) আয়োজিত এই সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।

জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ। জনগণের ক্ষমতায়ন ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে পারলে জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত হবে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এর মানে এই নয় যে ঐক্য নেই। জাতীয় স্বার্থে সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ।’

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব।

সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে পারলেই জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিরোধিতা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা জনগণের কাছে জবাবদিহি না–ও থাকতে পারেন। কারণ, তাঁরা দলের প্রতিনিধি হবেন, ব্যক্তির নন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৫-২০ বছর ধরে যে যুদ্ধ চলছে, তা বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এ মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার পথ একটাই—জনগণের হাতে ব্যালট পেপার তুলে দেওয়া, যাতে তাঁরা স্বাধীনভাবে তাঁদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ঐক্যের একমাত্র পথ হচ্ছে গণতন্ত্র। এটি নিশ্চিত হলে ঐক্য নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।’

সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নুরুদ্দীন খান মনে করেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি ‘ন্যাশনাল আর্মি’ গঠন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন, এর উদাহারণ চীনে আছে, সুইজারল্যান্ডে আছে, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁরা দায়িত্বে থাকেন এবং তাঁরা সেনাবাহিনীর ট্রেনিং করে দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন।

আলোচনায় জাতীয় ঐক্যের ধারণাকে গণ–অভ্যুত্থানবিরোধী হিসেবে বর্ণনা করেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, এটি ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যকে দমন করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, বর্তমান জাতিরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক করপোরেশন ও আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) মতো সংস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফরহাদ মজহারের মতে, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে গণপ্রতিরক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। যেখানে জনগণের সামরিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি থাকবে। বর্তমান সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর এই সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না, বরং জনগণের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করছে। কেবল বেতনভুক্ত সেনাবাহিনী দিয়ে দেশ রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথা বলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা কেবল সামরিক সক্ষমতার বিষয় নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনীতির বিকাশ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও অভিমত দেন বদিউল আলম মজুমদার।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হলে তাঁদের আপত্তি নেই। তবে যেনতেন একটি নির্বাচন তাঁরা চান না। পিআর পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, যেমন আমরা ট্র্যাডিশনাল (প্রচলিত) নির্বাচনের বিপরীতে পিআর পদ্ধতি চাচ্ছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকার অধীনে চাচ্ছি, এটা আমাদের দলীয় এজেন্ডা, অন্যদেরও এজেন্ডা আছে।’

সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, আলোকচিত্র সাংবাদিক শহিদুল আলম, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিচার, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানব না
  • জনগণ পাশে থাকলে দিল্লি পালাতে হয় না, লন্ডন থাকতে হয় না: হাসনাত আবদুল্লাহ
  • সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদকাসক্ত ব্যক্তির বিএনপিতে ঠাই নাই : সাখাওয়াত 
  • হাইব্রিড নেতারা অন্যের ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে নিজের ছেলের ভবিষ্যৎ গড়ে
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে হাইকোর্টের দেওয়া ১৩৯ পৃষ্ঠা রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ
  • প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণেই ‘মব কালচার’ বৃদ্ধি পাচ্ছে: রিজভী
  • জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঐক্যের ভিত্তিতে গণতন্ত্রে ফিরতে হবে
  • একটি দলের কারণে মৌলিক সংস্কার আটকে যাচ্ছে: আখতার
  • নির্বাচনে যাদের ভরাডুবি হবে, তারাই পিআর পদ্ধতিতে ভোট চায়: সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স