হৃদযন্ত্রে রিং (স্টেন্ট) স্থাপন নিয়ে প্রতারণা ও বাণিজ্যের বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে। প্রয়োজন না হলেও রোগীকে ‘আতঙ্কিত’ করে তিনি রিং স্থাপনে উৎসাহিত করেন। হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে একটি রিং স্থাপন করে তিনটির টাকা নেন। আবার কখনও রিং স্থাপন না করে শুধু সার্জারি করেই আদায় করেন রিংয়ের টাকা। ডা.

মাহবুবের বিরুদ্ধে এমন আরও অভিযোগ আছে। রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ এনে সম্প্রতি দু’জন ভুক্তভোগী তাঁর বিরুদ্ধে দুদক, হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্তে দুটি কমিটিও গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেসব কমিটির তদন্তে অগ্রগতি নেই। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সমকালে ‘হার্টে এক রিং বসিয়ে তিনটির টাকা আদায়’ শিরোনামে ডা. মাহবুবের অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ সব চিকিৎসক একযোগে অপচিকিৎসায় দুই রোগীর মৃত্যুসহ রিং বাণিজ্য ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ নেওয়ার অভিযোগে ডা. মাহবুবকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। তার পরও কর্তৃপক্ষ ডা. মাহবুবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু এবার তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত সোমবার রংপুরের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আমলি কোতোয়ালি) আদালতে মামলাটি করেন আতোয়ার হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী রোগী। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল আইন অনুযায়ী, অভিযোগকারীর নালিশ আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। 
মামলার বাদী আতোয়ার হোসেন গাইবান্ধা সদরের খোলাহাটি কুমারপাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। আতোয়ার রহমান এজাহারে বলেছেন, ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর হার্ট অ্যাটাক হলে তিনি রমেক হাসপাতালে ডা. মাহবুবুর রহমানের অধীনে ভর্তি হন। এনজিওগ্রাম করে ডা. মাহবুব জানান, হার্টের রক্তনালিতে তিনটি ব্লক আছে। তিনটি রিং পরাতে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। পরে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় তিনটি রিং পরাতে রাজি হন ডা. মাহাবুব। কিন্তু রিং পরানোর পরও আতোয়ারের অবস্থার উন্নতি না হলে কয়েক দফা ওই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় ডা. মাহবুবের অধীনে। এর পরও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলে আতোয়ার গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আরেক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি হয়ে সুস্থ হন। এ সময় জানতে পারেন, তাঁর হার্টের রক্তনালিতে একটি রিং পরানো হয়েছে। 
আতোয়ার ছাড়াও এর আগে আরও কয়েক ভুক্তভোগী রোগী ডা. মাহবুবের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও রিং বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে হাসপাতাল পরিচালক, সিভিল সার্জন, দুদকসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রথম দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে, ডা. মাহবুব বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিতে অভিযোগকারীদের চাপ ও হুমকি দেন। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডা. মাহবুবের বিরুদ্ধে রিং বিক্রি ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর ছয়টি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ করা হয়েছে দুদক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসি, রমেক হাসপাতাল ও রংপুর সিভিল সার্জন অফিসে। সর্বশেষ গত ১০ মার্চ হৃদরোগ বিভাগের  প্রধানসহ সব চিকিৎসক পরিচালকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর ডা. মাহবুবের বিরুদ্ধে চিঠি দেন। কিন্তু এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ওই চিঠির বিষয়ে হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রবীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, এতকিছুর পর কোন খুঁটির জোরে ওই চিকিৎসক বহাল তবিয়তে আছেন। 
তবে এসব অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন ডা. মাহবুবুর রহমান। সোমবার হওয়া মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। প্রত্যেক রোগীর হার্টে রিং স্থাপনের পর তাঁকে রিপোর্ট কপি এবং সিডি দেওয়া হয়। সেখানে বিস্তারিত তথ্য থাকে। এর পরও যদি কেউ অভিযোগ করে, তাহলে তা দুঃখজনক। একটি রিং পরানোর কথা বলে তিনটির টাকা নেওয়ার অভিযোগ। হাসপাতালের রেজিস্টারে একটি রিং পরানোর উল্লেখ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডা. মাহবুব বিষয়টি এড়িয়ে যান। 
রমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, ডা. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তাকে সরিয়ে নিতে হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর চিঠিও দিয়েছেন। অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে গঠিত কমিটি খুব দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেবে। বিষয়টির সিদ্ধান্ত দেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম হব ব র ব র দ ধ হ দর গ ব ভ গ র ম হব ব র র র পরও

এছাড়াও পড়ুন:

দিনাজপুরে একদিনে ৯ মরদেহ উদ্ধার

দিনাজপুরে একদিনেই নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের মধ্যে পাঁচজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার দিনগত রাতে জেলার বীরগঞ্জের চাউলিয়া গ্রামে জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে শাশুড়ি বাহা বেসরা (৫৫) নিহত হন। এই ঘটনায় অভিযুক্ত সামিয়েল মার্ডিকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্ত্রী মিনি হায়দার সঙ্গে পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। 

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে একই উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের নাগরগঞ্জ কলোনিপাড়া লিচু বাগানে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ (২২) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

বীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল গফুর হত্যা ও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

দুপুরে জেলার নবাবগঞ্জে খয়ের গুনি গ্রামে করতোয়া নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়। 

একই উপজেলার মালভবানীপুর গ্রামের সোহরাফ হোসেনের মেয়ে সাথী আকতার (২০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। 

এছাড়া হাকিমপুর উপজেলার বাওনা আলিহাট গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী বৃষ্টি (১৯) ও একই উপজেলার ঈশ্বরপুর গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে মুনসুর আলী খোকা (৫০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বিকেলে তাদের নিজ শয়নকক্ষ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক জানান, মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

একই রাতে বিরল উপজেলার ফরক্কাবাদ মল্লাপাড়া গ্রামের মৃত তসলিম উদ্দিনের ছেলে তৌফিকুজ্জামান (৪৭) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বিরল থানার ওসি আব্দুস ছবুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এ দিন দুপুরে গলায় লিচুর বিচি আটকে বোচাগঞ্জ উপজেলার নাফানগন ইউনিয়নের ধনীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোমিনের ছয়মাস বয়সের শিশু সন্তান আরফানের মৃত্যু হয়। 

এছাড়াও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আঁখি মনি (২৭) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।‌ প্রবাসী হারুন অর রশিদের নতুন বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার সময় ঘরের দরজা বিদ্যুতায়িত হয়। এ সময় আঁখি মনি দরজা খুলতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হন। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম খন্দকার মুহিব্বুল জানান, অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ