হবিগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার নিশ্চিতের লক্ষ্যে তৈরি করা হয় ‘ন্যায়কুঞ্জ’। নির্মাণ শেষে সেটি উদ্বোধন করলেও এর সুফল ভোগ করতে পারছেন না বিচারপ্রার্থীরা।
উদ্বোধনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও চালু করা হয়নি এ ভবনটি। কারণ, এর জন্য প্রয়োজনীয় আসবাব সরবরাহ করা হয়নি। সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আদালত প্রাঙ্গণে নান্দনিক এই স্থাপনা নির্মাণ করে। সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ২০২৪ সালের ২ মে এটি উদ্বোধন করেছিলেন।
আদালতে আসা মনির হোসেন নামে এক বিচারপ্রার্থী জানান, ন্যায়কুঞ্জ নামে যে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য তা ছিল অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। অনেক বিচারপ্রার্থী আদালতে এসে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার 
হন। এখানে এসে বিশ্রামসহ শৌচাগার ব্যবহার করতে পারলে দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজনের সুবিধা হতো।
রহিমা বেগম নামে আরেক নারী বলেন, ‘পুরুষরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারলেও অনেক ক্ষেত্রে নারীরা অসুবিধায় পড়েন। বিশেষ করে শৌচাগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে ন্যায়কুঞ্জটি দ্রুত চালু হলে সুবিধা হতো।’
আশিক মিয়া নামে আরেকজন বলেন, ‘মূলত বিচারপ্রার্থীদের সুবিধার জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছে। বছর পেরিয়ে গেলেও তার সুফল পাচ্ছেন না কেউ। দ্রুত ন্যায়কুঞ্জটি চালু করা না গেলে অবকাঠামোও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার আজিজুল ইসলাম আজিজ জানান, আদালতে আসা লোকজন যাতে বিশ্রাম নিতে পারেন এবং শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন তার ব্যবস্থা রয়েছে ন্যায়কুঞ্জে। ভবনটি নান্দনিক এবং বিশ্রামের জন্য আদর্শ স্থান। আদালতে আগতদের সময় কাটানোর ভোগান্তি লাঘবে এটি নির্মাণ হয়েছে। আসবাব সরবরাহ না করায় এটি চালু হচ্ছে না।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বকুল বলেন, ‘যে উদ্দেশ্যে এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি ব্যাহত হচ্ছে। আদালতে আসা ব্যক্তিদের অপেক্ষার জন্য এটি করা হয়েছিল। এতে করে তাদের ভোগান্তি অনেকাংশেই কমে যেত। আসবাব সরবরাহ না করায় ভবনটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দ্রুত এটি চালু করা প্রয়োজন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভবন দখল ন র ম ণ কর ব যবহ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

২৩ ধরনের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ

রাজশাহীর চারঘাটে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে ২৩ ধরনের ওষুধ সরবরাহ একেবারে বন্ধ রয়েছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর। ওষুধ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। এতে অপ্রত্যাশিত ও কম বয়সে বিবাহিত মেয়েদের গর্ভধারণের আশঙ্কা বেড়ে গেছে। স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টরা এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।
সদর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র ও ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে নিয়মিত সেবা নেন উপজেলার ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। সেবাপ্রত্যাশী দম্পতিদের জন্য প্রতি মাসে ১৫ হাজার সেট সুখী তৃতীয় প্রজন্মের খাওয়ার বড়ির চাহিদা রয়েছে। চলতি মাসে সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ১৫৪ সেট। ২৫ হাজার কনডমের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া গেছে ১৩ হাজার ৯০৫ পিস। জন্মনিয়ন্ত্রণের আইইউডি, ইমপ্লান্ট, ডিডিএস কিট এক পিসও সরবরাহ নেই। নেই আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফলিক এসিড ট্যাবলেট। এতে অন্তঃসত্ত্বা মা ও কিশোরীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মোট ২৩ রকমের ওষুধ ছয় মাস ধরে সরবরাহ নেই।
সরেজমিন শলুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে গেলে দেখা গেছে, শুধু ওষুধ নয়; জনবল ও চিকিৎসাসামগ্রী সংকটেও রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামতে বসেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ 
গত ডিসেম্বরে ২৩ রকমের ওষুধ এসেছে এ কেন্দ্রে। এর পর থেকে সরবরাহ বন্ধ। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর চরম সংকট রয়েছে। 
কথা হয় সেবা নিতে আসা ভ্যানচালক রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর অনেক দাম। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে কনডম সংগ্রহ করি। কিন্তু কয়েক মাস ধরে চাহিদার চেয়ে অনেক কম পাচ্ছি। অনেক সময় পাওয়াই যায় না। বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিয়ে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। 
এ কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি অফিসার নাসিম আহমেদ বলেন, ওষুধের সরবরাহ নেই। আমরা শুধু পরামর্শ দিচ্ছি। রোগীরা বিরক্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আগে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগী আসতেন। কিন্তু এখন আসছেন ১০-১২ জন। 

একই অবস্থা দেখা গেছে ভায়ালক্ষ্মীপুর ও নিমপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে। ভায়ালক্ষ্মীপুর কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা মেহেরুন নেসা বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে মাঝেমধ্যেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ থাকে। আবার কখনও খোলা থাকলেও জ্বর-সর্দির ওষুধও থাকে না। কয়েক মাস ধরে সেবা নিতে এসে কেউই ওষুধ পায়নি। শুধু প্রেসার আর ওজন মেপে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে। 
নিমপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট মোস্তাকিন হোসেন বলেন, ওষুধ সরবরাহ একেবারে বন্ধ। এ কারণে রোগী তেমন আসছেন না। কনডম, খাবার বড়িসহ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীও সরবরাহ কম। দম্পতিদের চাহিদার চেয়ে অনেক কম পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে। 
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উপজেলার সহসভাপতি আঞ্জুমান আরা বলেন, স্থানীয় সক্ষম লোকজন সাধারণত বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সেবা নেন। সেখান থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সংগ্রহ করেন। সরকারের কাছ থেকে ওষুধসেবা বা জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী নেন মূলত সমাজের দরিদ্র শ্রেণি। সরবরাহ ঠিক না থাকলে সমস্যায় পড়েন তারা। এতে বাড়তি খরচের পাশাপাশি ভুল চিকিৎসার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। 

চারঘাট উপজেলায় স্বাস্থ্য কার্যক্রম নিয়ে কাজ করে ডাসকো ফাউন্ডেশন। এ সংস্থার উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ফারজানা ববি বলেন, ২৩ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ না থাকায় অসহায় ও গরিব নারী-পুরুষ ও কিশোরীর স্বাস্থ্যগত সমস্যার জন্য স্থানীয় ওষুধের দোকানগুলোতে গিয়ে বাড়তি খরচের পাশাপাশি ভুল চিকিৎসার মুখোমুখি হচ্ছেন। এ ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে এ অঞ্চলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং জনসংখ্যার হার বেড়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফয়সাল ফেরদৌস বলেন, ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী না পেয়ে রোগীদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতি আগ্রহ কমেছে। জেলা কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, আগামী কয়েক মাসের 
মধ্যে পর্যায়ক্রমে ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভরা মৌসুমেও ইলিশ সরবরাহ কম, দাম লাগামহীন
  • পরীক্ষাকেন্দ্রে নকল সরবরাহ, ছাত্রদলের নেতা আটক
  • এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা আটক
  • যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ নিহত ৩
  • ইসরায়েলের কাছে ৫১০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র
  • কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধসে পড়ল সিঁড়ি
  • ২৩ ধরনের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ
  • পাইপলাইনে তেল পরিবহন শুরু চলতি মাসেই
  • অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা কী, আন্দোলন থামাতে এটা কীভাবে কাজ করে