‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’ দাবিতে খানির কর্মসূচি
Published: 1st, July 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহার পরপরই অস্বাভাবিক হারে চালের দাম বাড়া এবং সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক—খানি। সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে আজ সোমবার ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন করেছে নেটওয়ার্কটির সদস্য সংগঠনগুলো।
'ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও' স্লোগানে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, কৃষকের স্বার্থরক্ষা এবং রেশনিং ব্যবস্থাসহ একাধিক দাবির কথা তুলে ধরেন।
পরিকল্পনা কমিশনের সর্বশেষ (জুন ২০২৫) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতির মধ্যে চালের একক প্রভাব প্রায় ৪০ শতাংশ। অথচ বোরো মৌসুমে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বাজারে কোনো স্বস্তি মিলছে না।
ময়মনসিংহের ফুলপুরে থানার সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে কৃষক জহর আলী বলেন, ‘যে ভাত আমরা ফলাই, তাই আবার চড়া দামে কিন্না খাই। আমাদের দেখার কেউ নাই?’ রিকশাচালক সিকান্দার বললেন, সারাদিনে যা আয় করি, তার অর্ধেক যায় চাল কিনতে। আমরা ৪০ টাকা কেজিতে চাল চাই।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে খানির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতার কারণে সাধারণ মানুষ এখন মাছ, মাংস, ডাল বাদ দিয়ে কেবল ভাতনির্ভর খাদ্য গ্রহণ করছে। যা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, দেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থান করতে পারছেন না। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এই হার ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
সংগঠনটি সংকট উত্তরণে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হলো- কৃষকের কাছ থেকে সরকারের সরাসরি চাল ক্রয়ের আওতা বৃদ্ধি, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু; ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় বাজার, উৎপাদন ও ভোগক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ; টিসিবি ও ওএমএস কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে প্রয়োজনভিত্তিক সহায়তা সিন্ডিকেট রোধ ও কার্যকর বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা।
বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউন হলে আয়োজিত মানববন্ধনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সম্পাদক রণজিৎ দত্ত বলেন, মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি, ধানের দামে অস্থিরতা, মজুতদারির অপচেষ্টা ও বাজার নজরদারির ঘাটতির কারণে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। এতে কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, আবার ভোক্তা কিনছেন অতিরিক্ত দামে।
তিনি বলেন, খাদ্যে ব্যয় কমিয়ে এনে মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পুষ্টিহীনতায় না পড়ে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে চালের বাজার স্থিতিশীল করবে এবং দেশের সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চবি বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফলে ভরাডুবির অভিযোগ তুলে তা বাতিল করে খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তারা।
ভুক্তভোগী বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানান, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (৫৪তম ব্যাচ) স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফল গত ২৬ মে প্রকাশিত হয়। ফলাফলে দেখা যায়, যেখানে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে মাত্র ৯ জন শিক্ষার্থী সিজিপিএ ৩.০০ এর নিচে পেয়েছিলেন, সেখানে স্নাতকোত্তরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ জনে। এ ফলাফল বিগত সময়ের তুলনায় একেবারে অস্বাভাবিক বলে দাবি তাদের।
আরো পড়ুন:
৯ দফা দাবিতে রাবির প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও
রবিবার পরীক্ষায় অংশ নেবেন সেই আনিসা
তারা জানান, একই ব্যাচের সম্মান পরীক্ষার ফলাফলের তুলনায় এই ফলাফলে চরম অসঙ্গতি রয়েছে। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন, যা সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।
মানববন্ধনে বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা চাই নিরপেক্ষভাবে আমাদের খাতা পুনর্মূল্যায়ন করা হোক। এতে যদি কেউ ন্যায্য নম্বর থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন, তারা যেন প্রকৃত মূল্যায়ন পান।”
বিভাগটির আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “ফলাফল প্রকাশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা উচিত। একজন শিক্ষক যেন তার মতাদর্শগত বা ব্যক্তিগত পক্ষপাতের ভিত্তিতে কোনো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ বিনষ্ট করতে না পারেন, সে বিষয়টি প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।”
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগের দীর্ঘদিনের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে তাদের ব্যাচ প্রতিবাদ করে আসছিল। এরই জেরে এবার পরীক্ষার ফলাফলে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা ফলাফল বাতিল করে নতুনভাবে নিরপেক্ষ খাতা মূল্যায়নের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেন। দাবি আদায় না হলে পরবর্তী কর্মসূচিরও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী