নড়াইলে সাংবাদিক কুপিয়ে জখমের ১১ দিন পর মামলা
Published: 11th, January 2025 GMT
নড়াইলে সৈয়দ সজিবুর রহমান নামের এক সাংবাদিককে কুপিয়ে জখমের ঘটনার ১১ দিন পর মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে নড়াইল সদর থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি। এতে অজ্ঞাতপরিচয় চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
সজিবুর রহমান সময় টেলিভিশনের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। তাঁর গ্রামের বাড়ি লোহাগড়া উপজেলার যোগিয়া গ্রামে এবং বর্তমানে নড়াইল শহরের আলাদাতপুরে বসবাস করেন। গত ৩০ ডিসেম্বর পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে হামলা শিকার হন তিনি।
আরও পড়ুনকথা-কাটাকাটি দেখে খোঁজ নিচ্ছিলেন সাংবাদিক, পরে তাঁকে কুপিয়ে জখম৩১ ডিসেম্বর ২০২৪আজ শনিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলা হলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মামলার এজাহারে সজিবুর অভিযোগ করেন, তিনি গত ৩০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে লোহাগড়ায় একটি সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে নড়াইল শহরে নিজ বাসার দিকে ফেরার পথে রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে শেখ রাসেল সেতুর মাঝে অজ্ঞাতপরিচয় চার থেকে পাঁচজন তাঁর পথ রোধ করে। তাদের একজনের শরীরে পুলিশের লোগোসংবলিত রিফলেক্টিং ভেস্ট পরা ছিল। অন্যজন নিজেকে নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) মুরাদ বলে পরিচয় দেয়। সজিবুর নিজের পরিচয় দিলে তারা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে। সেখান থেকে চলে আসতে চাইলে ধারালো চাকু দিয়ে সজিবুরের পেট, হাঁটুর উপরিভাগ, গোড়ালির ওপরে, বাঁ হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মোটরসাইকেলে দ্রুত পালিয়ে যায় তারা। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেদিন রাতেই তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুননড়াইলে সাংবাদিককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি০১ জানুয়ারি ২০২৫চিকিৎসাধীন থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে জানান সজিবুর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, কাউকে শনাক্তও করতে পারেনি—বিষয়টি দুঃখজনক। যারা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্য কুপিয়ে জখম করেছে, দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানের ভিডিওটি সন্দ্বীপের
মঞ্চে বসে ‘পাকিস্তান পাকিস্তান, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান ধরছেন এক বক্তা। সমবেত জনতা সেই স্লোগানে কণ্ঠ মেলাচ্ছে, এমন একটি ভিডিও আজ সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের একটি অনুষ্ঠানে ধারণ করা বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত কোরআন তিলাওয়াত সম্মেলনের এক বক্তা এমন স্লোগান দেন। উপস্থিত দর্শকদের একজন সেটির ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন।
ভাইরাল হওয়া ২০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, মঞ্চে বসে এক বক্তা দুই হাত ওপরে তুলে স্লোগান ধরেছেন, ‘পাকিস্তান পাকিস্তান’, এরপর সামনে উপস্থিত দর্শকেরা সমস্বরে বলছেন, ‘জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’। বক্তা আবার বলছেন, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। সমবেত ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলছেন, ‘জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।’ এরপর বক্তা স্লোগান ধরেন ‘নারায়ে তাকবির’।
কোরআন তিলাওয়াত সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাইটভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা নুরনবি রুমি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গতকাল মাইটভাঙ্গার সাউথ সন্দ্বীপ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে এই স্লোগান দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে। সম্মেলনটি ছিল কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতার। সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীরা অংশ নেন। পাকিস্তান থেকে আগত এক ইসলামি বক্তা মঞ্চে আসার পর সঞ্চালক এমন স্লোগান ধরেন।
সম্মেলনে উপস্থিত আরও এক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেছেন, মূলত ইরান, মিসর, ফিলিপাইন ও পাকিস্তানের প্রতিযোগীরা সম্মেলনে অংশ নেন। যখন যে দেশের প্রতিযোগী মঞ্চে এসেছে, সেই দেশের নামে সঞ্চালক স্লোগান ধরেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একই অনুষ্ঠানের আরেকটি ভিডিওতে এর সত্যতা মেলে। সেখানে দেখা যায়, মিসরের বক্তা মঞ্চে ওঠার পর ‘মিসর জিন্দাবাদ’ স্লোগানে তাঁকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিওটির বিষয়ে জানতে আয়োজক প্রতিষ্ঠান সাওতুল কোরআন ইনস্টিটিউটের পরিচালক হাফেজ তাওহিদের মুঠোফোনে ফোন করলেও তিনি তা ধরেননি।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সন্দ্বীপের মুক্তিযোদ্ধারা। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোলায়মান বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘“পাকিস্তান জিন্দাবাদ” স্লোগান দেওয়া ধৃষ্টতা। এর নিন্দা জানাই। কেবল নিন্দা নয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি জানিয়ে দিতে চাই, এমন স্লোগান আমরা সহ্য করব না।’
জানতে চাইলে সন্দ্বীপের নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখিনি, কেউ আমার নজরেও আনেনি। যদি এমনটি হয়, তা দুঃখজনক। আমি বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করব।’
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘এমন বিষয় আমার জানা নেই। কেউ যদি এমন স্লোগান দিয়ে থাকেন, তাহলে আমরা খতিয়ে দেখব।’