সংস্কারের জন্য গঠিত চারটি কমিশন আজ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।

শফিকুল আলম বলেন, “হস্তান্তরের পর রিপোর্ট নিয়ে কিছু আলাপ হবে, পুরো জিনিসটি তারা বলবেন কী কী পাওয়া গেছে। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আশা করছি এই মিটিং হবে। এরপর বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলন করে এই বিষয়ে জানাবেন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। তবে আমরা এখনো জানি না কারা আসবেন। তারা পুরো জিনিসটি ব্রিফ করবেন।

পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের জন্য সর্বশেষ সময় নির্ধারণ ছিল ১৫ জানুয়ারি। জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগের জন্য সময় বাড়ানো হয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগ সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থার দিকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গুরুত্বপূর্ণ এ দুই বিষয়ে কী ধরনের সংস্কার হবে তার ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাওয়া নতুন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।

এই দুই সংস্কার কমিশনের কাছে জমেছে প্রস্তাবের পাহাড়। সেসব প্রস্তাবে ব্যাপক পরিবর্তনের দাবি রয়েছে।
দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন বন্ধ করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফেরা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া এবং নারীদের সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাব অনেকের। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথাও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সংবিধানসংশ্লিষ্ট সংস্কারে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেই সুপারিশ প্রস্তুত করছে কমিশনগুলো।

এই কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার কমিশনগুলোর প্রধানদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ গঠন করতে যাচ্ছে। এই কমিশনের মাধ্যমে সংস্কারের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ করার চেষ্টা হতে পারে। একই সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ নকশাও ঘোষণার সিদ্ধান্ত হতে পারে এ মাসেই।

গত ১৬ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্বর্তী সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তা বিবেচনা করে আমি এই কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করব। আমার সঙ্গে এই কমিশনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।”

ঢাকা/হাসান/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা চান বিনিয়োগকারীরা

বেসরকারি পর্যায়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রির জন্য সরকার সম্প্রতি মার্চেন্ট পাওয়ার পলিসি (এমপিপি) অনুমোদন করেছে। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে এবং গ্রাহকেরা সরাসরি এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পারবে।

তবে এই নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছেন বিনিয়োগকারী ও ক্রেতারা (গ্রাহক)। তাঁরা বলছেন, নীতি অনুমোদন হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক চূড়ান্ত করা বাকি রয়েছে। বিশেষ করে হুইলিং চার্জ (প্রক্রিয়াগত মাশুল), গ্রিড লস হিসাব, বিতর্ক নিষ্পত্তিপ্রক্রিয়া ও প্রণোদনা–সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা বা নীতিমালা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

আজ বুধবার রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাত নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। নর্ডিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনসিসিআই) বাংলাদেশ এবং ঢাকায় নরওয়ে দূতাবাস যৌথভাবে সভার আয়োজন করে।

সভায় বক্তারা বলেন, এমপিপি চালু হলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। এখানে সরকারের সঙ্গে প্রচলিত পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) করার প্রয়োজন হবে না।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে নর্ডিক চেম্বারের সভাপতি তানভীর মোহাম্মদ বলেন, এমপিপি কাঠামো বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ রূপান্তরের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে যাচ্ছে। পরিকল্পিত এমপিপি কাঠামো করা গেলে তা দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্চেন্ট পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বাস্তবায়ন পরিবেশের পাশাপাশি টেকসই অর্থনৈতিক রূপান্তরেও ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে নির্ধারিত প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম, গ্রামীণফোনের প্রধান ইএসজি (পরিবেশ, সামাজিক ও প্রশাসন) কর্মকর্তা ফারহানা ইসলাম, এইচঅ্যান্ডএমের স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার শায়ান শাফি, আইএফসির অপারেশন অফিসার সায়েফ তানজীম কায়িউম, প্যারামাউন্ট সোলারের উপমহাব্যবস্থাপক মো. মাসুদ রানা। সঞ্চালনা করেন জিআইজেড বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বেসরকারি খাত উন্নয়ন উপদেষ্টা কাজী আহসান উদ্দিন।

প্যানেল আলোচনায় গ্রামীণফোনের এনভায়রনমেন্ট, সোশ্যাল ও গভর্ন্যান্স (ইএসজি) বিভাগের প্রধান ফারহানা ইসলাম বলেন, গ্রামীণফোন ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ফুটপ্রিন্ট ৫০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভালো মাধ্যম হতে পারে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় বাধা হলো বৃহৎ পরিসরে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ কম। যদিও এমপিপি হওয়ায় সরাসরি বিদ্যুৎ কেনার পথ খুলেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হুইলিং চার্জ, গ্রিড লসের হিসাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্ঠীকরণ প্রয়োজন।

এইচঅ্যান্ডএমের স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার শায়ান শাফি বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য সরবরাহকারীদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোর মানদণ্ড মেনে চলতে হয়। এ জন্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সহজলভ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমপিপি কাঠামোর মাধ্যমে সম্ভব। এমপিপি কার্যকর হলে আমরা আরও বড় পরিসরে বাংলাদেশি পণ্য বাজারে প্রবেশের সুযোগ নিতে পারব।’

আইএফসির অপারেশনস অফিসার সায়েফ তানজীম কাইয়ুম বলেন, ‘ভারতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম। ফলে অনেক ব্র্যান্ড সে দেশে সোর্সিং বাড়াচ্ছে। আমরা চাই না এর প্রভাব বাংলাদেশি বস্ত্র খাতের ওপর পড়ুক। এমপিপি বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখার বড় সুযোগ। একই সঙ্গে গ্রামীণফোনসহ যেসব কোম্পানি তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য ঘোষণা করেছে, তাদের জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।’

প্যারামাউন্ট সোলারের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘এমপিপি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন একটি ধারণা। এতে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। তাই এখনই আমরা কী কী সুযোগ আছে তা স্পষ্টভাবে বলতে পারি না। প্রথমে আমাদের এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। এমপিপি প্রকল্প তখনই সফল হবে, যখন আমরা প্রধান প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে পারব।’

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, এমপিপি বাস্তবায়নে বিনিয়োগকারীর প্রধান দায়িত্ব হলো বড় বা বাল্ক গ্রাহক খুঁজে বের করা। তবে পাশাপাশি যদি তারা উৎপাদিত বিদ্যুতের ২০ শতাংশ বিপিডিবিকে দিতে চায়, সেটির ব্যবস্থাও নীতিতে রয়েছে।

রেজাউল করিম আরও বলেন, হুইলিং চার্জ নিয়ে যেটা বলা হয়, তা কোনো বড় বাধা হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ইতিমধ্যে একটি হুইলিং চার্জ ঠিক করেছে। ভবিষ্যতে যদি সামান্য কমানো বা বাড়ানো হয়, সেটি বেসরকারি প্রকল্পের জন্য বড় বোঝা হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ