অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার বিয়ের কার্ড-মিষ্টি কেন ফিরিয়ে দিয়েছ
Published: 22nd, January 2025 GMT
ভালোবেসে ঘর বেঁধেছেন বলিউড তারকা দম্পতি ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ও অভিষেক বচ্চন। ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল বিয়ে করেন তারা। ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছিল বচ্চন পরিবার।
বলিউডের অনেককে বিয়েতে নিমন্ত্রণ জানাতে পারেননি অমিতাভ বচ্চন। তার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকেও নিমন্ত্রণ করেননি। বচ্চন পরিবার যাদের নিমন্ত্রণ জানাতে পারেনি, ছেলের বিয়ের পর তাদেরকে কার্ড ও মিষ্টি পাঠিয়েছিল অমিতাভ-জয়া। কিন্তু সেই কার্ড ও মিষ্টি ফেরত পাঠিয়েছিলেন বলিউডের বরেণ্য অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা। কিন্তু কেন এই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন ‘খামোশ’ তারকা?
এ ঘটনা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে বলিপাড়ায়। অনেক চর্চার পর বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম মিড-ডের সঙ্গে কথা বলেছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। কার্ড-মিষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে এই অভিনেতা বলেছিলেন, “আপনি যখন নিমন্ত্রণ করবেন না, তাহলে মিষ্টি পাঠানোর প্রয়োজনটা কী? আমি অন্তত আশা করেছিলাম, অমিতাভ বা তার পরিবারের কেউ মিষ্টি পাঠানোর আগে আমাকে ফোন করবেন। যখন ফোনও করা হয়নি, তখন মিষ্টি কেন?”
শত্রুঘ্ন সিনহা মিষ্টি ফেরত দেওয়ার পর ‘কফি উইথ করন’ অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন অভিষেক বচ্চন। পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে এই অভিনেতা বলেছিলেন, “সত্যি বলছি, মানুষ ভুলে যাচ্ছে যে, আমার পরিবার কেন বিয়েটিকে খুব ছোট পরিসরে শেষ করেছিল। এর পেছনে বড় একটি কারণ ছিল।”
আরো পড়ুন:
হামলাকারীকে নিয়ে সাইফের বাড়িতে পুলিশ
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন সাইফ আলী খান
কারণ ব্যাখ্যা করে অভিষেক বচ্চন বলেছিলেন, “আমার দাদি তখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি জানো, বাইরে গিয়ে বড় পরিসরে উদযাপন করতে আমাদের ভালো লাগবে না।”
বচ্চন পরিবার জমকালো আয়োজনে বিয়ে উদযাপন করার পরিবর্তে আশীর্বাদ চেয়ে কার্ড পাঠিয়েছিল; যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন শত্রুঘ্ন। এ বিষয়ে অভিষেক বচ্চন বলেছিলেন, “আমি কি আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েছিলাম? আমার পরিবার কি আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েছিল? তার (ঐশ্বরিয়া) পরিবার কি পুরো বিশ্বকে আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর হলো, হ্যাঁ। কিন্তু আমাদের বাবা-মা, সবাই মিলে সবার আশীর্বাদ চেয়ে একটি কার্ড পাঠিয়েছিলেন। সবাই এটি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছিলেন। কেবল একজন ব্যক্তি এটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন! শত্রুঘ্ন আঙ্কেল কার্ডটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এটা ভালো ছিল! আমরাও ফিরিয়ে দেওয়া কার্ড গ্রহণ করেছিলাম। আপনি সবাইকে খুশি করতে পারবেন না।”
অমিতাভ বচ্চনের বাবার নাম হরিবংশ রাই। তিনি একজন কবি ছিলেন। হরিবংশ রাইয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী তেজি বচ্চন। এ সংসারে জন্মগ্রহণ করেন অমিতাভ। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ২০০৭ সালের ২১ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। অর্থাৎ অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার বিয়ের ঠিক ৮ মাস পর মারা যান তিনি। অমিতাভের জীবনে তার মায়ের প্রভাব অনেক, সে কথা বহুবার বলেছেন বিগবি।
তথ্যসূত্র: বলিউড বাবল, মিড-ডে
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ব কর ছ ল পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
ইমরান খানকে ‘শহীদ’ করার সাহস দেখাবে না সেনাবাহিনী
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কারা হেফাজতে মৃত্যুর গুজব দেখিয়ে দেয়, দেশটির রাজনৈতিক পরিবেশে কতটা গভীর অবিশ্বাস বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁর মৃত্যুর দাবিকে বাতিল করেছেন এবং বলেছেন, এগুলো গুজবের অংশ। তবু যে দ্রুততার সঙ্গে এসব গুজব ছড়ায়, তা আরও বড় এক বাস্তবতার কথা বলে।
ফিল্ড মার্শাল জেনারেল আসিম মুনির ভালোভাবেই বোঝেন, ইমরান খানকে সরিয়ে দেওয়া এমন এক আত্মঘাতী ভুল, যা বর্তমান ক্ষমতাকাঠামো মোটেও বহন করতে পারবে না। দীর্ঘ সামরিক জীবনে মুনির দেখেছেন, তাঁর আগের কিছু সেনাপ্রধানের হঠকারী সিদ্ধান্ত কত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল জেনারেল পারভেজ মোশাররফের কিছু বেপরোয়া পদক্ষেপ। যেমন ২০০৬ সালে নবাব আকবর বুগতিকে হত্যা ও ২০০৭ সালের লাল মসজিদ অভিযান। যার পরিণতি পাকিস্তান আজও বয়ে বেড়াচ্ছে।
এ ছাড়া দেশটির সেনাবাহিনী কখনোই পাঞ্জাবের কোনো নেতাকে কারা হেফাজতে হত্যার ঝুঁকি নিতে পারবে না। পাঞ্জাব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্য সংগ্রহের প্রধান উৎস। এ কারণে এমন ঘটনার রাজনৈতিক ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
আরও পড়ুনইমরান খানকে কি ভুট্টোর পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে০১ ডিসেম্বর ২০২৫২০১৯ রক্তে প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে কমে যাওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ডে যেতে দেওয়া হয়েছিল। এর কারণ হিসেবে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, ক্ষমতাকাঠামোর শক্তিগুলো জানত যে পাঞ্জাবের কোনো নেতা কারা হেফাজতে মারা গেলে অঞ্চলটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এ সতর্কতা একটি মৌলিক সত্যকে তুলে ধরে। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা, সদস্য সংগ্রহ ও গ্রহণযোগ্যতা পাঞ্জাবের রাজনৈতিক মনোভাবের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
এ কারণেই ১৯৭৯ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসি দেওয়া হোক কিংবা ২০০৭ সালে বেনজির ভুট্টোর হত্যা—উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষমতাকাঠামো বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রেহাই পায়। এ দুটি ঘটনায় সিন্ধু ছাড়া পাকিস্তানের বাকি অংশ, বিশেষ করে পাঞ্জাব প্রায় নিস্পৃহই ছিল। সেনাবাহিনী সমালোচনার মুখে পড়েছিল সত্য, কিন্তু দেশজুড়ে কোনো বিদ্রোহ দেখা যায়নি, আর তাদের মূল সমর্থন ঘাঁটিও হুমকির মুখে পড়েনি।
ইমরান খান সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতীক। তিনি জাতিগতভাবে পাঞ্জাবি না হয়ে পশতুন হলেও রাজনীতির মাটিতে তিনি পাঞ্জাবের মানুষ। তাঁর সমর্থন দেশজুড়ে বিস্তৃত। পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা দেশে থাকা প্রবাসীদের মধ্যেও রয়েছেন তাঁর সমর্থক।
সব ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী এমন ঝুঁকি নিতে পারে না। আর সেই কারণেই গুজব ছড়ালেও ক্ষমতাসীন শক্তি জানে, ইমরান খানকে সরিয়ে দেওয়া এমন এক ঝুঁকি, যার বিনিময়ে কোনো লাভই সম্ভব নয়।২০২৩ সালের মে মাসে তাঁর গ্রেপ্তার নজিরবিহীন বিক্ষোভের জন্ম দেয়। যার মধ্যে সামরিক স্থাপনায় হামলার ঘটনাও ছিল, যা আগের কোনো রাজনৈতিক সংঘাতের ক্ষেত্রে ভাবাও যায়নি। ইতিহাসে প্রথমবার, ক্ষমতাকাঠামোর শক্তি প্রত্যক্ষ করল যে ক্ষোভ আর কোনো প্রান্তিক প্রদেশে নয়; বরং সরাসরি পাঞ্জাবেই বিস্ফোরিত হচ্ছে। আর ওই প্রদেশ সেনাবাহিনীর নিয়োগ, প্রশাসনিক কাঠামো ও রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দু।
ওই ঘটনাগুলো নিয়ে নানা ব্যাখ্যা থাকতে পারে, কিন্তু একটি সত্য স্পষ্ট। ইমরান খানকে নির্মূল করার চেষ্টা এমন মাত্রার রাজনৈতিক অস্থিরতা ছড়িয়ে দিতে পারে, যা সেনাবাহিনী সামাল দিতে পারবে না, বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন দেশের অর্থনীতি চরম দুরবস্থায় রয়েছে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইমরান খানকে সরিয়ে দেওয়া হলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক বিরাট শহীদের জন্ম হবে। ভুট্টো ও তাঁর মেয়ে বেনজির মৃত্যুর পর প্রতীকী নেতৃত্বে পরিণত হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁদের শহীদ হওয়ার প্রভাব মূলত নিজ নিজ দলের সমর্থনঘাঁটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ইমরান খানের শহীদ হওয়ার প্রভাব হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁর আবেদন শ্রেণি, প্রদেশ ও বয়সের সীমানা পেরিয়ে গেছে। তিনি ডিজিটাল যুগের তরুণ প্রজন্মের সমর্থন পান, যাঁরা তাঁকে শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে দেখেন। এমন আবেগের কেন্দ্রে থাকা কোনো ব্যক্তিত্বকে সরিয়ে দিলে তিনি মুছে যান না; বরং আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। এতে তাঁর আন্দোলন আরও বেগবান হবে এবং রাষ্ট্র ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে।
আরও পড়ুনইমরান খানের এই রাজনৈতিক উত্থানের নেপথ্যে২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ক্ষমতাসীনেরা এটি জানে এবং ভুট্টোকে কেন্দ্র করে ইতিহাসের যে শিক্ষা রয়েছে, তা পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি কেউই নিতে চায় না। আজ সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বিস্তৃত হলেও রাজনৈতিক বাস্তবতার কিছু সীমা আছে, যা কোনো ক্ষমতাকাঠামোর কোনো অংশই অতিক্রম করতে পারে না।
ইমরান খান ১৯৭৯ সালের ভুট্টো নন, আর এটা ২০০৭ সালের পাকিস্তানও নয়। ইমরান একটি জাতীয় ব্যক্তিত্ব, যাঁর শিকড় সেই প্রদেশে সবচেয়ে গভীরে, যেখান থেকে রাষ্ট্র তার শক্তির বড় অংশ পায়। তাঁকে সরিয়ে দিলে সংকট কমবে না; বরং এমন এক সংকট তৈরি হবে, যার ফলে রাষ্ট্র হয়তো টিকে থাকতে পারবে না।
সব ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী এমন ঝুঁকি নিতে পারে না। আর সেই কারণেই গুজব ছড়ালেও ক্ষমতাসীন শক্তি জানে, ইমরান খানকে সরিয়ে দেওয়া এমন এক ঝুঁকি, যার বিনিময়ে কোনো লাভই সম্ভব নয়।
● আসিফ উল্লাহ খান ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
দ্য ডিপ্লোম্যাট থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত