শিক্ষার্থীর সমস্যা, ঠিকাদারের ‘না’
Published: 4th, February 2025 GMT
স্কুলের মাঠজুড়ে নির্মাণসামগ্রী। তীব্র শব্দ করে ক্ষণে ক্ষণে প্রবেশ করছে ভারী যানবাহন। সেই সঙ্গে ধুলাবালি উড়ে ঢুকছে স্কুলে। ক্লাস করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চরচাপলি ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বারবার নিষেধ করলেও তাদের কথা আমলে নেওয়া হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, চাপলি বাজার থেকে দোলাই মার্কেট পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণকাজের জন্য স্কুলের খেলার মাঠের সামনের অংশে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। মাঠের একটি বড় অংশজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে পাথর। মাঠের মধ্যে রয়েছে ভারী যন্ত্র। পাথর ও বালুমিশ্রিত করা প্লান্ট মেশিন বিকট শব্দে চলছে। নির্মাণসামগ্রীর ধুলাবালি এবং বিটুমিন গলানোর কাজে ব্যবহৃত টায়ার পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় এলাকা আচ্ছন্ন। স্কুল মাঠটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। বিকট শব্দের কারণে শিক্ষকদের পাঠদানে মনোযোগ দিতে পারছে শিক্ষার্থীরা। যাতায়াতের পথে পোশাক নোংরা হওয়া এবং শিশু-কিশোরদের মাঠে খেলাধুলায় বিঘ্ন ঘটছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কারও অনুমতি না নিয়ে মাঠে নির্মাণসামগ্রী রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাধা দিলে বলে নির্মাণসামগ্রী রাখবে; কিন্তু কর্মযজ্ঞ চালাবে না। অথচ এখন স্কুল মাঠেই কাজ করছেন ঠিকাদার। এভাবে চললে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
গত সোমবার বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পিচ পোড়ানো আর প্লান্ট মেশিন থেকে কালো বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসে ভেসে গিয়ে স্কুলে ঢুকছে। সেখানে কথা হয় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফসা আক্তার, মারিয়া রিতু, তানজিলা, সিফাতুল, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জোবায়ের, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সেফা, সুমাইয়া ও জান্নাতের সঙ্গে। তারা জানায়, স্কুলে প্রবেশ করতে তাদের পোশাক ধুলায় নষ্ট হয়ে যায়। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদানে
মনোযোগ দিতে পারে না তারা। মাঠে বিকট শব্দে মেশিন চলায় শিক্ষকদের কথাই শোনা যায় না। অনেকের মাথা ব্যথা হচ্ছে। অনেকে ছুটির আগে স্কুল থেকে চলে যাচ্ছে।
স্কুলের গণিত বিভাগের সহকারী শিক্ষক আদম আলী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে মাঠ দখল করে সড়কের কাজ চলছে। ক্লাসের সময় তাদের মেশিন চললে শিক্ষার্থীরা কিছু বোঝে না। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা চলে যায়। বিকট শব্দে শ্রেণিকক্ষে সমস্যা হয়।
প্রধান শিক্ষক গাজী আলী আহম্মেদের ভাষ্য, যে রাস্তায় কাজ হচ্ছে তার আশপাশে অনেক জায়গা থাকলেও স্কুল মাঠে এই কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে। কারও অনুমতি না নিয়েই ঠিকাদার বিদ্যালয় মাঠে এসব রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অসহ্য হয়ে তাদের কাছে অনুরোধ করেছি যাতে স্কুল বন্ধের দিন কাজ করে। এর পরও ক্লাস চলাকালে বিকট শব্দে কাজ করছে। এখন যে অবস্থা তাদের জন্য আমাদের স্কুল বন্ধ করে রাখতে হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম জানান, স্কুলের খেলার মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখা বেআইনি। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেই কাজটিই করেছে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তালুকদার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, স্কুল মাঠে সড়কের নির্মাণসামগ্রী রেখে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
নাতির অপেক্ষায় ৩ বছর
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশু ইমন মিয়ার সন্ধান মেলেনি তিন বছরেও।
বাহুবল উপজেলার নন্দনপুরের ভাতকাটিয়া এলাকার বাসিন্দা আলিজা খাতুন জংশন এলাকায় ভিক্ষা করেন। ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর ভিক্ষা করতে সঙ্গে করে নাতি ইমনকে নিয়ে আসেন তিনি। সেসময় জংশন এলাকা থেকে শিশু ইমন নিখোঁজ হয়।
সেই থেকে নাতিকে খুঁজতে থাকেন নানি আলিজা খাতুন। আদরের নাতির সন্ধান পেতে বাহুবল ও শায়েস্তাগঞ্জ থানায় জিডি করেছিলেন। এখন পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই এখনও নাতি ইমনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন আলিজা খাতুন।
তিনি জানান, ঝুপড়ি ঘরে তার বসবাস। খেয়ে না খেয়ে দিন চলে। মেয়ে পেয়ারা বেগমকে বিয়ে দিয়েছিলেন। নাতি ইমনের জন্মের পরে তার মা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এ কারণে তা পেয়ারা বেগমকে ছেড়ে তার স্বামী অন্যত্র চলে যান। সেই থেকে মেয়ে ও নাতিকে লালন পালন করে আসছিলেন আলিজা খাতুন।
জংশন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দারা জানান- নাতিকে নিয়ে আলিজা খাতুন ভিক্ষা করতেন। প্রায় তিন বছর আগে নাতিকে হারিয়ে ফেলেন। এখনও তিনি নাতির খোঁজে নানা স্থানে ঘুরে বেড়ান। নাতির অপেক্ষায় তিন বছর পেরিয়ে গেছে। নাতির জন্য তিনি কান্না করেন। এ দৃশ্য দেখলে, অনেক কষ্ট লাগে। তাই প্রশাসন ও দেশবাসীর কাছে আমাদের দাবি ইমনের সন্ধান পেতে যেন অসহায় আলিজা খাতুনকে সার্বিকভাবে সহযোগীতা করা হয়।
শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীলিপ কান্ত নাথ ও বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, নিখোঁজ শিশু ইমন মিয়ার ব্যাপারে থানায় জিডি হয়েছিল। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে।
ঢাকা/মামুন/এস