সিরাজগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল আজিজ কারাগারে
Published: 4th, February 2025 GMT
হত্যাচেষ্টা মামলায় সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল আজিজকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে আব্দুল আজিজকে তাড়াশ আমলি আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। মামলার মূল নথিপ্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে জামিনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক মো.
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদারের গাড়িবহরে হামলা চালায় আওয়ামী
লীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে আব্দুল আজিজসহ
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এই মামলায় সোমবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্নীতি আছে, দখল–চাঁদাবাজিও চলছে
দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে নাকি কমেছে, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে নাকি কমেছে, সে বিষয়ে তুলনামূলক তথ্য নেই। এটি নিয়ে টিআইবি কাজ করছে। কিন্তু এটা বলতে পারি, দুর্নীতি অব্যাহত আছে। রাজনৈতিক ও সরকারি স্পেসের ক্ষমতাকে অপব্যহার করে বিভিন্ন মহল দলবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে। সরকারের অভ্যন্তরেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। এটা উদ্বেগজনক।’
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সাবেক দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেছেন, ‘এই সরকারের সময়ে আরও কঠোরভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সে ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’ টিআইবি বর্তমান সরকারের পুরো মেয়াদের ওপর একটি বিশ্লেষণ তৈরির কাজ করছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। ‘সুশাসিত, বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের অঙ্গীকার: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহার প্রণয়নে টিআইবির সুপারিশ’ শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এমন অবস্থায় আছি যে ৫৪ বছর, বিশেষ করে গত ১৫ বছরের যে জঞ্জাল, সেটা কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশে সুশাসিত, গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজটা চট করে জাদুর কাঠি দিয়ে সম্ভব নয়। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়, এটা মানতে হবে। তবে এই সুযোগটা তৈরি হয়েছে। সেই সুযোগ রাজনৈতিক দলগুলো কতটা নেবে, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ; একইভাবে তাদের কার্যপদ্ধতির মধ্যে অর্থ, পেশি ও ধর্মের প্রভাবটা নির্বাচনের আগে ও পরে কতটুকু তাদের প্রভাবিত করবে, সেটার ওপর ফলাফল অনেকটা নির্ভর করবে।’
ব্যবসা খাতের সংস্কার নিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা অনেকটা রাজনৈতিক দলের সংস্কারের মতো। এটা ভেতর থেকে আসতে হবে, তাদের নিজেদেরই করতে হবে। ব্যবসায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে চূড়ান্ত বিবেচনায় ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন। এটা না করা গেলে একশ্রেণির ব্যবসায়ী লাভবান হন, অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, যেটা গত ১৫ বছরে দেখা গেছে। এর ফলে রাষ্ট্রকাঠামো দখল হয়েছে। কর্তৃত্ববাদ বিকাশের অন্যতম পিলার (স্তম্ভ) হিসেবে ব্যবসা খাতের একাংশ কাজ করেছে। সেই অবস্থার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটাই তারা চাইছেন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান শীতল সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। এর জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ভারতের ইতিহাসে এটা (বর্তমান পরিস্থিতি) সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয়—এটা স্বীকার করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে এখন পর্যন্ত। ভারত এমন দেশ নয়, যারা সহজে এটা স্বীকার করবে। সেটা একটা বাস্তবতা। কিন্তু সেটার অর্থ এই নয় যে এটার কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে না। উন্নতি ঘটার সুযোগ আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই পক্ষের উচ্চ অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্র আছে। সেটা উভয় পক্ষের ওপর নির্ভর করে। তবে ভারত যদি আরও বেশি বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান নিতে পারত, কর্তৃত্ববাদের পক্ষে অবস্থান থেকে যদি সরে আসতে পারত, তাহলে সেটি বাংলাদেশের পক্ষে সহজতর হতো।’
আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে রাখা উচিত এমন ৫২টি প্রস্তাব সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে টিআইবি। এর মধ্যে প্রথম সাতটি প্রস্তাব পড়ে শোনান ইফতেখারুজ্জামান। এগুলোর মধ্যে আছে জুলাই জাতীয় সনদ ও এর বাইরে থাকা সংস্কার কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা; জুলাই সনদসহ অন্যান্য সংস্কার কমিশনের ওপর ভিত্তি করে যেসব অধ্যাদেশ জারি ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো ও কার্যকর ও অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলের সব হত্যা, অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার অব্যাহত রাখা।
বাকি প্রস্তাবগুলো পড়ে শোনান টিআইবির জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা মো. জুলকারনাইন এবং গবেষণা ও নীতি পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান। এসব প্রস্তাবে অনিয়ম–দুর্নীতি প্রতিরোধ, দলের কার্যক্রমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচারের চর্চা, সম–অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যাংক–আর্থিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ও পরিবেশ–জলবায়ু খাতে সংস্কার, বেসরকারি খাতে সুশাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের এবং আউটরিচ ও কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।