সিলেট গ্যাস ফিল্ডে বদলি ও পদায়ন নিয়ে অস্থিরতা
Published: 6th, February 2025 GMT
সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সিলেট গ্যাস ফিল্ডে বদলি ও পদায়ন নিয়ে চলছে অস্থিরতা। বিশেষ করে সিবিএ নেতাদের একের পর এক বদলি করা হচ্ছে। এদিকে অতীতে নানা অনিয়ম ও কর্মচারীদের অস্বাভাবিক ওভারটাইম নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। এ নিয়েও অনেকে আছেন দুশ্চিন্তায়।
গত এক মাসে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে। আরও কয়েকজন রয়েছেন এ তালিকায়। সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি এক সিবিএ নেতাকে বদলি করে গ্যাস ফিল্ড প্রশাসন। এদিকে কর্মকর্তাসহ সিবিএ নেতাদের ওপর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। সেই চাপ থেকে বদলি ও পদায়ন চলছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় গত ১৯ জানুয়ারি সিবিএ অফিসে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি একই দিন বিএনপি সমর্থক নন-সিবিএ সংগঠন কর্মচারী ইউনিয়নের অফিস উদ্বোধন করা হয়। জামায়াত নেতাদের নিয়ে উপজেলা বিএনপি নেতারা ওই দিন কার্যালয় উদ্বোধন করেন। তবে নন-সিবিএ নেতাদের মধ্যেও চলছে বিরোধ।
জৈন্তাপুরের হরিপুর এলাকায় সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের আওতাধীন বিভিন্ন ফিল্ড ও কূপে ৫৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এর বাইরে দৈনিক মজুরিভিত্তিক রয়েছেন দুই শতাধিক। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও নিয়োগসহ নানা অনিয়ম নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। সম্প্রতি দুদক সিলেট গ্যাস ফিল্ডে অভিযান চালিয়ে বেতন তালিকায় ১৯৫ জনের মধ্যে ২২২ জন কর্মচারীর তথ্য পায়। একই দিন দুদক কর্মচারীদের গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বেতন নেওয়ার তথ্য পায়। এর বিপরীতে ওভারটাইম হিসেবে দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। কাজ না করে কর্মচারীর ওভারটাইম নেওয়ার বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দুদক সিলেট অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন। অতিরিক্ত ২২ জন কীভাবে তালিকার বাইরে থেকে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন, সে বিষয়ে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান সমকালকে জানান, ওই ২২ জন পিআরএলে রয়েছেন। সে জন্য তারা বেতন পাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, সরকার পতনের দুই মাস পর থেকে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডে অস্থিরতা শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা গ্যাস ফিল্ডের ভেতরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর অংশ হিসেবে হারুন-সোবহানের নেতৃত্বাধীন সংঠন কর্মচারী লীগ (বর্তমান সিবিএ) কার্যালয়ে গত ১৯ জানুয়ারি তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। সিবিএ অফিসে তালা লাগানোকালে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদসহ উভয় দলের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। ওই দিন তারা বিএনপির অন্তর্ভুক্ত কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-১১০৬) শ্রমিক দলের অফিস উদ্বোধন করেন। এর আগে নেতারা সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রেজাউল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। অফিসে তালা লাগানোর ঘটনায় ওই দিন সন্ধ্য়ায় সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান অভিযোগ দেন মহাব্যবস্থাপকের (প্রশাসন) কাছে। তিনি উল্লেখ করেন, বহিরাগত ৩৫-৪৫ জন অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। তিনি খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
অভিযোগ ওঠে, বাইরের রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে বদলি ও পদায়ন করা হচ্ছে। গত ১৮ জানুয়ারি বদলি করা হয়েছে কর্মচারী লীগের (সিবিএ) প্রচার সম্পাদক, জুনিয়র কম্পিউটার অপারেটর নাজমুল ইসলাম ও সিবিএ নেতা, জুনিয়র কম্পিউটার অপারেটর মঞ্জুর আহমদকে। এর আগের দিন বিদায় সংবর্ধনায় শ্রমিকদের পক্ষে বক্তব্য দেন কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান। জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ায় তাঁকে শোকজ করা হয়। গত ২৮ জানুয়ারি কর্মচারী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিবিএ নেতা মো.
এদিকে এক সময় সিবিএর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী প্রদীপ কুমার শর্মা, বশির উদ্দিন, নজরুল ইসলাম ও ইলিয়াছ আলী ভোল পাল্টে বিএনপি সমর্থক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃত্বে আসায় বিরোধ দেখা দেয়। এ চারজনের মধ্যে বশির ও ইলিয়াস আগের সিবিএ কমিটিতে ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে সিলেট জেলা শ্রমিক দলের কাছে অভিযোগ করেছেন কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা। অভিযোগ বিষয়ে বশির আহমদ জানান, তিনি বিএনপিতে ছিলেন ও আছেন। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সময়ে সিবিএর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
গ্যাস ফিল্ডে অস্থিরতা বিষয়ে সোমবার পিআরএলে যাওয়া সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল ইসলাম সমকালকে বলেন, কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি-পদায়ন করা হয়েছে। কাজের স্বার্থে তা করা হয়। অস্থিরতার কোনো কারণ দেখছি না।
বদলি আতঙ্কে থাকা সিবিএ নেতারা মুখ খুলতে চাননি। শীর্ষ এক নেতা জানান, অনেককে নিয়মবহির্ভূত বদলি করা হচ্ছে। এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে।
উপজেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুর রশিদ দাবি করেন, এক দিন তারা ফিল্ডে গিয়েছিলেন কর্মচারী ইউনিয়নের অফিস উদ্বোধন করতে। ওই দিন সিবিএ অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাউকে কোনো চাপ দেওয়া হচ্ছে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ল ইসল ম ব যবস থ ব এনপ গঠন ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।
উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।
ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।
এএএম//