চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন, অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সংগ্রামে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনতার অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদের প্রতিটি স্মৃতিচিহ্ন ও প্রতীকের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক তরুণ প্রজন্মের মহাজাগরণ এক অবিস্মরণীয় বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে। আগামীতে ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশপ্রেমিক জনতার কাঙ্খিত বাংলাদেশ দেখার প্রতীক্ষায় আছি আমরা সবাই।

তিনি আরও বলেন, বসে নেই দেশবিরোধী অপশক্তি, তার দোসর ও পরিকল্পনাকারীরা। জনতার জাগরণের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। ইতিমধ্যে চিন্তাশীল মানুষের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলমান আন্দোলনকে সহিংসতার রূপ দিয়ে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনা করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে ভয়ঙ্কর চাপের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। 

খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, রক্তখেকো হাসিনা সরকারের রক্তচোষা বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে আত্মদানকারী আবু সাঈদ-মুগ্ধদের রক্তস্নাত বিপ্লব পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ সফল অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। সেখানে পরাজিত অপশক্তির রক্ত ঝরেছে খুব মামুলি। আর এতেই বাংলাদেশের মানুষের ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রমাণ পেয়েছে পৃথিবী। এতে হয়তো হতাশ হয়েছে দেশবিরোধী অপশক্তি। তবে হতাশ হলেও হাল ছাড়েনি তারা। আর তাই তীব্রভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, চলমান আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে একটি সহিংস পরিবেশ তৈরি করা হবে। এজন্য এখন সর্বাগ্রে প্রয়োজন সচেতনতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। 

দেশের আলেম-ওলামা, ইসলামপ্রিয় জনতাসহ সব দেশপ্রেমিক নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই যেন সহিংসতা না ঘটে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। পরিণামে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিপ্লব। ক্ষতিগ্রস্ত হবে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠবার সম্ভাবনা। ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। 

মামুনুল হক বলেন, এহেন পরিস্থিতিতে দেশের সব বিক্ষুব্ধ জনতা ও দেশপ্রেমিক জনগণকে যে কোনো মূল্যে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করা সব দেশপ্রেমিক জনগণের ঐতিহাসিক দায়িত্ব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ম ন ল হক ম ম ন ল হক পর স থ ত চলম ন

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন কর‌তে দে‌ব না: হেফাজ‌ত

জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জা‌নি‌য়ে হেফাজতে বাংলা‌দে‌শের নেতারা ব‌লে‌ছেন, “এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে স্পষ্ট হুমকি। আমরা এই মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় স্থাপন কর‌তে দেব না।” 

সরকার সিদ্ধান্ত থে‌কে স‌রে না আস‌লে ক‌ঠোর কর্মসূচির হুম‌কি দেন নেতারা।

ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের প্রতিবা‌দে শুক্রবার (১১ জুলাই) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর আ‌য়ো‌জিত বি‌ক্ষোভ সমাবেশে তারা এ হুঁশিয়া‌রি দেন।

আরো পড়ুন:

সমকামীকে দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রি‌ভিউ দা‌বি

ইসলামী দলগু‌লোর ঐক‌্যবদ্ধ নির্বাচনে ইসলামপন্থিরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আস‌বে: রেজাউল করীম

সভায় সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি আল্লামা মাওলানা মামুনুল হক।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল, তা বাস্তবায়নের পরিবর্তে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যা জনআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী ও স্বাধীনতার মৌলিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গত ১৬ বছরে ঘটে যাওয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও খুনের বিচার নিশ্চিত না করে এখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জন্য দরজা খুলে দেওয়া মানে অপরাধীদের দায়মুক্তি ও জনগণের প্রতি অবিচার।”

“ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা স্পষ্ট করে বলি—আমরা আপনাদেরকে সহযোগিতা করেছি দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে। শহীদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত এই সরকারকে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অধিকার দেওয়া হয়নি। জাতিসংঘের তথাকথিত মানবাধিকার বাস্তবে ইসলাম ও মানবতার পরিপন্থী পশ্চিমা আদর্শের হাতিয়ার। খাল কেটে কুমির আনার অধিকার সরকারকে কেউ দেয়নি। আমরা এই মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় স্থাপন কর‌তে দিব না।”

তিনি বলেন, “আজ আমরা শুধু প্রাথমিক প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে না আসে, তাহলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সারা দেশে তীব্র আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে।”

‌তি‌নি ব‌লেন, “হেফাজতের দৃষ্টিতে জাতিসংঘ বা কোনো বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে মানবাধিকার ইস্যুতে হস্তক্ষেপ দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। এ ধরনের কার্যালয় স্থাপন সরকারের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতিফলন। দেশিয় ইসলামী মূল্যবোধ, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জালালুদ্দীন, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমী, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মুফতী শরীফুল্লাহ, মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা ইমরানুল বারী সিরাজী, মাওলানা জোবায়ের রশীদ, মাওলানা এহতেশামুল হক সাকী প্রমুখ।

সমা‌বেশ থে‌কে চার‌টি দাবি জানা‌নো হয়। দা‌বিগু‌লো হ‌লো
১. ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. দেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেশের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে দিতে হবে।
৩. বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

নেতারা ব‌লেন, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।এর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। ঈমানি দায়িত্ব ও জাতীয় কর্তব্য থেকে হেফা‌জ‌তে ইসলাম এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলবে, প্রয়োজনে আরো বৃহত্তর কর্মসূচি দে‌বে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তরুণ প্রজন্ম নির্বাচনী ভাগ-বাঁটোয়ারায় বিশ্বাস করে না: নাহিদ ইসলাম
  • তরুণ প্রজন্ম নির্বাচনী ভাগ বাটোয়ারায় বিশ্বাস করে না: নাহিদ ইসলাম
  • চাঁদাবাজদের কাছে দেশ ছেড়ে দেবে না জামায়াত: রফিকুল ইসলাম খান
  • পুলিশ এখনো চাঁদাবাজদের ভয় করে চলছে : নাহিদ
  • যারা কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখান করবে: জামায়াত
  • চাঁদাবাজি-সহিংসতা বন্ধ না করলে বিএনপির পরিণতি আ.লীগের মতোই হবে
  • প্রধান বা বিশেষ অতিথি আর বইলেন না, এগুলো জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে: রিজওয়ানা হাসান
  • মুক্তির প্রাথমিক শর্ত বৈষম্যের অবসান
  • একটি দল ভাবছে, চাঁদাবাজির স্বাধীনতা পেয়েছে তারা 
  • জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন কর‌তে দে‌ব না: হেফাজ‌ত