ইসলামী শরিয়তের আলোকে রোজাদার মানুষকে ১০টি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যাদের প্রত্যেক শ্রেণীর বিধান অন্য শ্রেণী থেকে ভিন্ন। নিম্নে তুলে ধরা হলো :
সুস্থ ও স্বাভাবিক রোজাদার : যেসব রোজাদার সার্বিক বিবেচনায় সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে, তাদের ওপর রোজা পালন করা ফরজ। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে সুস্থ ও স্বাভাবিক তাদেরই বলা হবে যারা মুসলিম, সাবালক, সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন, মুকিম (নিজ আবাসে অবস্থানকারী), সামর্থ্যবান ও বাধামুক্ত। এই শ্রেণীর মানুষের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে রোজা পালন করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
আর রাসুলুল্লাহ (সা.
আরো পড়ুন:
রমজানে দান-সদকার গুরুত্ব ও যারা অগ্রাধিকার পাবে
কোরআন নাজিলের মাসে কোরআন চর্চা
নাবালক রোজাদার : নাবালক শিশুর ওপর রোজা ফরজ নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির জন্য কলমের লিখন বন্ধ রাখা হয়েছে : ক. ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না জাগ্রত হবে, খ. নাবালেগ যতক্ষণ না সে বালেগ হবে, গ. পাগল যতক্ষণ না তার জ্ঞান ফিরে আসবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩৯৮)
তবে শিশুরা কিছুটা বড় হলে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-সহ পূর্বসূরী বুজুর্গরা তাদের রোজায় অভ্যস্ত করে তুলতেন। এমনকি তারা কান্নাকাটি করলে তাদের পশমের তৈরি খেলনা দিয়ে শান্ত রাখতেন। শিশুদের শরিয়তের বিধি-বিধানে অভ্যস্ত করে তোলা এবং তাদের উপযুক্ত দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া মুসলিম মা-বাবার দায়িত্ব। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৬০)
পাগল রোজাদার : পাগল ও অচেতন ব্যক্তির ওপর রমজানের রোজা ফরজ নয়। তবে পাগল ব্যক্তি যদি রোজা রাখতে চায় এবং সে শরিয়তের বিধান অনুসারে রোজা পালন করে, তবে তাতে বাধা দেওয়া হবে না অথবা নিরুৎসাহিত করা হবে না। তবে এর দ্বারা তার ওপর ফরজ হওয়া রোজা আদায় হবে না।
স্মৃতিহীন ও বোধশূন্য বৃদ্ধ রোজাদার : এমন রোজাদারের জন্য রোজা রাখা বা ফিদিয়া দেওয়া কোনোটাই ওয়াজিব নয়। কেননা স্মৃতিহীন ও বোধশূন্য ব্যক্তি শিশুর মতো, সে শরিয়তের মুকাল্লাফ (যার জন্য বিধান পালন করা আবশ্যক) নয়।
এমন রোজাদার যার অক্ষমতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই : এমন অক্ষম ব্যক্তি যার অক্ষমতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেমন অতিশয় বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি বা এমন রোগী যার রোগ আরোগ্য হওয়া আশা করা যায় না। এমন ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা ফরজ নয়, তবে তাকে ফিদিয়া দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যাদের রোজা রাখা অত্যন্ত কষ্টকর তারা ফিদিয়া তথা একজন মিসকিনকে খাবার প্রদান করবে। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)
সাহাবিদের আমল দ্বারাও ফিদিয়ার বিধান প্রমাণিত হয়। সাবেত বুনানি (রহ.) বলেন, আনাস ইবনে মালেক রা. যখন বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে সক্ষম ছিলেন না তখন তিনি রোজা না রেখে (ফিদিয়া) খাবার দান করতেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৫৭০)
রোজার ফিদিয়া হচ্ছে, একজন মিসকিনকে দুই বেলা ভরপেট খাবার খাওয়ানো। তবে খাবারের পরিবর্তে প্রতি রোজার জন্য সদকাতুল ফিতর পরিমাণ দ্রব্য বা মূল্য দিলেও ফিদিয়া আদায় হয়ে যাবে। (কামুসুল ফিকহ : ৪/৪৫০)
ফিদিয়া আদায় করার পর সুস্থ হলে ভাঙা রোজাগুলো কাজা করতে হবে। আগের ফিদিয়া প্রদান যথেষ্ট হবে না। তবে ফিদিয়া আদায়ের কারণে তার সওয়াব আমলনামায় থেকে যাবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৬৫)
মুসাফির রোজাদার : যে ব্যক্তি নিজ আবাস ছেড়ে দূরে কোথাও অবস্থান করে, তার জন্য রোজা ভাঙ্গার অবকাশ আছে। তবে উত্তম হলো, কষ্ট কম হলে রোজা রাখা। আর কষ্ট বেশি হলে রোজা ভেঙ্গে না রাখাই উত্তম। কেউ সফরে রোজা না রাখলে নিজ আবাসে ফেরার পর এসব রোজা কাজা করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির, সে তার সিয়াম অন্য সময় আদায় করে নেবে। তোমাদের পক্ষে যা সহজ আল্লাহ তাই চান এবং তোমাদের জন্য যা কষ্টকর তা তিনি চান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
এমন রোগী যার রোগমুক্তির আশা করা যায় : যে রোগীর রোগমুক্তির আশা করা যায় তার তিন অবস্থা । তা হলো-
ক. তার অবস্থা যদি এমন হয় যে, রোজা রাখা জন্য কষ্টকর নয়, তার জন্য ক্ষতিকরও নয়, তাহলে এমন ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা ফরজ। কেননা এমন অসুস্থতা শরয়ি ওজর নয়।
খ. যদি তার অবস্থা এমন হয় যে, তার জন্য রোজা রাখা অতি কষ্টকর, তবে ক্ষতি করবে না। এমন ব্যক্তি রোজা রাখবে না। এমন ব্যক্তির ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা হলো, ‘আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কাউকে দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর দেওয়া সুযোগ গ্রহণকে ভালোবাসেন যেমনিভাবে তার নাফরমানি করা অপছন্দ করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৫৮৬৬)
গ. রোগীর অবস্থা যদি এমন হয় যে, রোজা রাখলে তার গুরুতর ক্ষতি হবে, তবে তার জন্য রোজা ভাঙ্গা আবশ্যক। কেননা আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ২৯)
ঋতুমতী নারী : ঋতুমতী নারীর জন্য রোজা রাখা নিষিদ্ধ। সে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকবে। ঋতুমতী নারী যে দিনগুলোতে রোজা রাখতে পারেনি, সে রমজানের পর সমসংখ্যক রোজা কাজা করবে। এমন নারীদের ক্ষেত্রে বুজুর্গ আলেমদের পরামর্শ হলো তারা প্রকাশ্য পানাহার থেকে বিরত থাকবে। যেন তার গোপনীয়তা এবং রমজান মাসের মর্যাদা উভয়টি রক্ষা পায়। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪২৮; আল বাহরুর রায়িক : ২/২৯১)
স্তন্য দানকারী নারী : যে নারী সন্তানকে স্তন্য দান করছে সে যদি নিজের ও সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করে তবে সে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকবে। তবে পরবর্তীতে এই রোজা কাজা করে নেবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা মুসাফিরদের নামাজ অর্ধেক করেছেন। আর গর্ভবতী, স্তন্যদানকারিনী ও মুসাফির থেকে রোজা শিথিল করেছেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৪০৮)
বিশেষ প্রয়োজনে : কোনো ব্যক্তি যদি এমন বিশেষ প্রয়োজনের মুখোমুখি হয় যা পূরণ না হলে তার জীবন রক্ষা পাবে না এবং রোজা না ভেঙ্গে তাঁর প্রয়োজন পূরণ করাও সম্ভব নয়, তখন তার জন্য রোজা ভাঙ্গা জায়েজ। যেমন কোনো ব্যক্তি আকস্মিকভাবে হার্ট অ্যাটাক বা বিপজ্জনক রক্তচাপের শিকার হয় তবে তাঁকে ওষুধ সেবন করানো যাবে। একইভাবে যুদ্ধের ময়দানে শক্তি সামর্থ্য ধরে রাখার জন্য রোজা ভাঙ্গা জায়েজ। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে মক্কায় সফরে বের হলাম, তখন আমরা রোজাদার ছিলাম। এরপর আমরা একটি স্থানে অবতরণ করলাম। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, তোমরা তোমাদের শত্রু পক্ষের নিকটবর্তী হয়ে গেছ। আর রোজা ভেঙ্গে ফেলে তোমাদের জন্য শক্তি সঞ্চয়ে সহায়ক হবে। তখন আমাদের অবকাশ দেওয়া হলো কেউ চাইলে রোজা রাখবে আর কেউ চাইলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। তারপর আমরা আরেকটি স্থানে নামলাম তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, তোমরা খুব শীঘ্রই শত্রুপক্ষের মোকাবেলা করবে। আর রোজা ভেঙ্গে ফেলা শক্তি সঞ্চয়ের জন্য অধিক সহায়ক হবে। সুতরাং তোমরা সবাই সাওম ভেঙ্গে ফেল। আর এটা বাধ্যকারী নির্দেশ ছিল, তাই আমরা সবাই রোজা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১২০)
আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা
শাহেদ//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন ত র জন য র জ আল ল হ ত দ ন কর অবস থ এমন র র ওপর রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সবার চেয়ে এগিয়ে থাকতে যে ৯টি এআই দক্ষতা আপনার এখনই শেখা উচিত
১. প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং: এআইয়ের সঙ্গে কথা বলুন
চ্যাটজিপিটিকে কিছু জিজ্ঞেস করে হতাশ হয়েছেন? চ্যাটবট আপনাকে এলোমেলো উত্তর দিয়েছে? এটা খুব সাধারণ ব্যাপার। হাল ছেড়ে দেবেন না। কারণ, আপনি এআইয়ের সঙ্গে সঠিকভাবে কথা বলতে পারেননি। তাই আপনাকে চ্যাটবট হতাশ করেছে। ওর থেকে সঠিক উত্তর পাওয়ার একটা গোপন রহস্য আছে। সেটা হলো প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং। মানে এআইয়ের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলুন, যাতে নিখুঁত ও নির্ভুল উত্তর দেয়। বোঝার সুবিধার্তে উদাহরণ দেওয়া যাক।
এআইকে শুরতেই আপনার পেশা জানিয়ে দিন। যেমন আপনি হতে পারেন একজন সেলস মার্কেটার বা আইনজীবী। পেশা জানালে এআই আপনাকে মার্কেটিং এক্সপার্ট বা দক্ষ আইনজীবীর মতো উত্তর দিতে পারবে। তারপর উদাহরণ দিন। পরিষ্কার করে বলুন আপনি কী চান। সবশেষে কোন ফরম্যাটে উত্তর চান, সেটাও উল্লেখ করুন। যেমন বলতে পারেন, ‘আমাকে একটা টেবিল বানিয়ে দাও। টেবিলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ৮ ও ৩ মিটার। টেবিলের ওপর একটা ফুলদানি থাকবে সবুজ রঙের। পাশে থাকবে একটা টিউব লাইট।’ এভাবে বিস্তারিত বলুন।
মানে ভাবুন, আপনি কোনো বন্ধুকে নিজের বাড়ির ঠিকানা দিচ্ছেন। যত ভালোভাবে ঠিকানা বুঝিয়ে দিতে পারবেন, বন্ধু তত সহজে আপনার বাড়ি পৌঁছে যাবে। শুধু যদি বন্ধুকে বলেন, ‘আমার বাড়ি ঢাকা বড় মার্কেটের পাশে’, তাহলে তা খুঁজে পেতে বন্ধুর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সড়ক ও বাসা নম্বরসহ বিস্তারিত ঠিকানা দেন, তাহলে সহজে আপনার বাসা খুঁজে পাবে। এটাও অনেকটা সে রকম। সবকিছু স্পষ্টভাবে বলে দিন, তাহলে নিজের পছন্দমতো সঠিক উত্তর পাবেন।
সহজে আরেকটি কাজ করতে পারেন। ধরুন, আপনি চ্যাটবটকে দিয়ে কোনো উত্তর লিখিয়ে নিতে চান। তাহলে জেমিনি বা গ্রকের মতো অন্য কোনো এআই দিয়ে প্রম্পট লিখে নিন। তাহলে আপনার আর বিস্তারিত না লিখলেও চলবে। অন্য একটা এআই আপনার হয়ে কাজটা করে দেবে। অবশ্য এ ধরনের প্রম্পট নিজের হাতে লেখাই ভালো। এতে দক্ষতাও বাড়বে।
২. সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট: কোডিং না জেনেও বানান অ্যাপআপনার মাথায় দারুণ সব আইডিয়া আছে, কিন্তু কোডিং করতে পারেন না? কোডিংয়ের কথা শুনলেই মাথার মধ্যে কেমন প্যাচ লেগে যায়? এখন আর এটা কোনো সমস্যা নয়। পাইথন বা জাভাস্ক্রিপ্ট জানারও দরকার নেই। এই সমস্যার সমাধান করে দেবে এআই। এ জন্য আপনাকে কম্পিউটার সায়েন্স পড়ে আসতে হবে না। রেপলাইট (Replit) বা কার্সর (Cursor)-এর মতো টুল দিয়ে সহজেই কোড লিখিয়ে নেওয়া যায়।
তবে এখানে একটা কথা জানিয়ে রাখা ভালো। কোডার না হয়েও আপনি কোডিং করতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু ভালো করা মুশকিল হবে। কোডিংয়ের ব্যাপারে আপনাকে দক্ষ হতে হবে, তা-ও বলছি না। অন্তত প্রাথমিক ধারণাটা থাকা চাই। তা না হলে ভবিষ্যতে আপনার বানানো অ্যাপে কোনো সমস্যা হলে তা ধরতেই পারবেন না। তাই এসব ব্যাপারে একটু জ্ঞানার্জন করে নিলে আপনিই হয়ে উঠবেন দক্ষ সফটওয়্যার ডেভেলপার।
ভাবছেন, আপনি শুরু করবেন কোথা থেকে? খুঁজলে দেখবেন, মানুষের হাজারটা সমস্যা আছে। আপনাকে শুধু খুঁজে বের করতে হবে, এর মধ্যে কোন সমস্যায় মানুষ বেশি ভোগে। সমস্যা খুঁজে পেলে এআই দিয়ে সেই সমস্যার সমস্যার সমাধান বানিয়ে বিক্রি করে দিন। দেখবেন, সেসব মানুষ আগ্রহের সঙ্গে কিনছে। এমনকি ঠিকভাবে প্রম্পট দিতে পারলে আপনি নিজেই বানিয়ে নিতে পারবেন চ্যাটজিপিটির মতো একটি চ্যাটবট।
৩. ডিজাইন ও আর্ট: সৃজনশীলতা উন্মোচনের এই তো সময়আগে এআইয়ের বানানো ছবি দেখতে খুব অদ্ভুত লাগত। তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। এআই এখন নামকরা শিল্পীদের মতো ছবি আঁকতে পারে। আসল ছবি ও এআইয়ের আঁকা ছবি পাশাপাশি রাখলে আসলটা চেনা মুশকিল হয়ে যায়। এআইয়ের সাহায্যে এখন রিয়েলিস্টিক ছবি, লোগো, এমনকি ওয়েবসাইটও ডিজাইন করা যায়। ফটোশপের পরিবর্তে এখন মিডজার্নি, লিওনার্দো বা দাল-ইর মতো টুল দিয়ে নিজেই বানাতে পারবেন পেশাদার ছবি বা লোগো। আপনার হাতে আঁকা স্কেচও এআইয়ের সাহায্যে আরও সুন্দর করে নিতে পারেন।
৪. ভিডিও এডিটিং: ঘণ্টার কাজ শেষ হবে মিনিটেআগে ভিডিও এডিট করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। কেটে বাদ দিতে হতো অদরকারি কথা কিংবা অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো। এখন এআই এসব বিরক্তিকর কাজ করে দিতে পারে খুব দ্রুত। রানওয়ে এমএল (Runway ML), পিক্টোরি (Pictory), ডিস্ক্রিপ্ট (Descript)-এর মতো টুল ভিডিও এডিটিংয়ের ভোল পাল্টে দিয়েছে। এসব দিয়ে আপনি অনায়াসে অপ্রয়োজনীয় কথা, বিরতি, ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ মুছে ফেলতে পারবেন। যোগ করতে পারবেন সাবটাইটেল। এমনকি স্ক্রিপ্ট থেকে ভিডিও বানাতে পারবেন রেকর্ডিং ছাড়াই। আপনি কনটেন্ট ক্রিয়েটর হন বা ব্যবসায়ী, এআই এডিটিং টুলগুলো আপনার কাজের সময় ৭০ শতাংশ কমিয়ে দেবে। কাজের মানও থাকবে পেশাদার পর্যায়ে। তাহলে আর দেরি কেন, আজই কাজে লেগে যান!
আরও পড়ুন৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে যেভাবে ত্বকের যত্ন নেবেন১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫৫. লেখালেখি: নিজের ভাবনাকে রূপ দিনসবচেয়ে ভালো লেখকদের যে কেবল ভাষায় ভালো দখল থাকে, তা নয়; তাঁরা ভালো আইডিয়াও দেন। এআই আপনাকে সেই আইডিয়া বের করতে সাহায্য করবে। ভাইরাল কনটেন্টের বিষয়ও খুঁজে দেবে। এমনকি আপনার বা আপনার ক্লায়েন্টের লেখার স্টাইলও নকল করতে পারবে।
এআই দিয়ে বেশির ভাগ কাজ করিয়ে নিয়ে নিজে সম্পাদনা করতে পারেন। চ্যাটজিপিটি, জ্যাসপার বা কপি ডটএআই দিয়ে ব্লগ পোস্ট, সেলস কপি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্যাপশন লিখতে পারবেন। লেখার শিরোনাম বানিয়ে নিতে পারেন এআইয়ের সাহায্যে। লেখার মধ্যে কোনো ভুল আছে কি না, তা-ও এখন এআই বলে দিতে পারে। ২ হাজার শব্দের একটা লেখাকে চাইলে ৫০০ শব্দে সাজিয়ে দিতে পারে এআই।
৬. কনটেন্ট মার্কেটিং: সব জায়গায় থাকুন অনায়াসেবিখ্যাত মার্কিন অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের ‘আর্নল্ডস পাম্প ক্লাব’ শুনেছেন? এটা একটা জনপ্রিয় পডকাস্ট। অবাক করা বিষয় হলো, আর্নল্ড নিজে কখনো একটা পর্বও রেকর্ড করেননি। পুরো কাজটা করে দিয়েছে এআই। নিউজলেটার থেকে শুরু করে ভয়েস ক্লোন পর্যন্ত!
আপনিও এটা করতে পারবেন। এআই দিয়ে কনটেন্ট বানান, পুনরায় ব্যবহার করুন, সব প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দিন। এমনকি এতে আপনার টিমও লাগবে না। সব কাজ এখন করে দেবে এআই। হঠাৎই আপনি নিজেকে দেখতে পাবেন সব জায়গায়।
অনলাইনে এখন ব্র্যান্ডিং হয়ে গেছে সহজ। ব্র্যান্ডিং বিভিন্ন উপাদান তৈরি করতে বড় টিমেরও দরকার নেই। ট্যাপলিও (Taplio), রিপারপাস ডটআইও (Repurpose.io) আর হাইপফিউরির (Hypefury) মতো টুল দিয়ে ব্লগ পোস্টকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপযোগী কনটেন্টে রূপ দিতে পারবেন। কনটেন্ট শিডিউল করতে পারবেন সব প্ল্যাটফর্মে। এমনকি সাপ্তাহিক নিউজলেটারও অটো জেনারেট করতে পারবেন।
৭. নো-কোড এআই অটোমেশন: ওয়ার্কফ্লোর জাদুকর হয়ে যানদিনের বেশির ভাগ সময় আপনি কি একই কাজ বারবার করেন? মানে আপনার ম্যানুয়াল কাজ কি বেশি? যেমন ডেটা কপি করা, একই ই-মেইল পাঠানো, এক অ্যাপ থেকে অন্য অ্যাপে যাওয়া। এ ধরনের কাজে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। তবে আপনি যদি এআই দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেন, তাহলে ‘হিরো’ হয়ে যাবেন। সঙ্গে টাকা তো পাবেনই।
জ্যাপায়ার (Zapier) বা মেক (Make) দিয়ে গুগল শিট বা জিমেইলের মতো পছন্দের অ্যাপগুলো যুক্ত করতে পারেন। চ্যাটজিপিটি প্লাগইনস বা অটোজিপিটি দিয়ে সেসব চেইন তৈরি করে নিজের কাজ সহজ করে নিতে পারেন।
আরও পড়ুনকিনোয়ায় আছে চাল ও গমের চেয়ে বেশি প্রোটিন ০২ জুলাই ২০২৫৮. ডেটা অ্যানালাইসিস: এলোমেলো তথ্যকে সাজিয়ে নিনসব প্রতিষ্ঠানেই প্রচুর ডেটা থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান জানে না সেসব দিয়ে কী করতে হয়। এখানেই আপনার সুযোগ। এআই দিয়ে এলোমেলো স্প্রেডশিট পরিষ্কার করুন, সমৃদ্ধ করুন এবং সেখান থেকে খুঁজে বের করুন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। চ্যাটজিপিটি অ্যাডভান্সড ডেটা অ্যানালাইসিস বা পাওয়ার বি কোপাইলট দিয়ে ফাইল আপলোড করুন। সাধারণ ভাষায় প্রশ্ন করুন। দেখবেন, এআই আপনাকে চার্টসহ তাৎক্ষণিক ফলাফল তৈরি করে দেবে। এভাবে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানকে স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারেন। এতে প্রতিষ্ঠানেরও লাভ, আপনারও।
৯. এজেন্ট ডেভেলপমেন্ট: ডিজিটাল কর্মী বানানএআই এজেন্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এরা ২৪/৭ কাজ করে। কখনো অভিযোগ করে না। সব সময় ভালো কাজ করে দেয়। ছুটিও চায় না। আপনি যদি কোনো কাজ এআইকে বোঝাতে পারেন, ট্রেইন করতে পারেন এবং এর পারফরম্যান্স দেখতে পারেন, তাহলে আপনি সফল হবেন। এককথায় রোবট বানিয়ে ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারেন। অটোজিপিটি, এজেন্টজিপিটি বা ফ্লোওয়াইস দিয়ে এমন বট বানানো সম্ভব। এসব বট গবেষণা করবে, আপনার ব্যক্তিগত ই-মেইল পাঠাবে, অ্যাপয়েন্টমেন্ট সামলাবে, কাস্টমার সাপোর্টও দেখভাল করবে। উন্নত টুলগুলোতে মেমোরি, এপিআই এবং নির্দেশনা যোগ করতে পারবেন। ফলে এসব ক্রমাগত উন্নতি করতে থাকবে। আপনি শুধু অটোমেট করবেন না, ওকে দায়িত্বও দেবেন।
সহজ কথায়, এআই আপনার বিকল্প হওয়ার আগে আপনিই একটা এআই বানান। আপনার কোনো বিশেষ ডিগ্রি বা কাজের অভিজ্ঞতার দরকার নেই। শুধু কৌতূহল আর চেষ্টা থাকলেই হবে। এআই-বিপ্লব চলছে। তাই আর অপেক্ষা না করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করুন। কিছু বানান। যা শিখছেন, তা ভাগাভাগি করুন।
শুরুতে আপনাকে এই ৯টি দক্ষতা শিখতে হবে না, শুধু একটা শিখুন। এই ৯টির মধ্যে যেটায় আপনি আগ্রহী, সেটা নিয়েই কাজ শুরু করুন। আরও সহযোগিতা পেতে অনলাইনে সার্চ করুন বা এআইকেই জিজ্ঞেস করুন। ইউটিউবে এমন ভিডিও থাকলে, তা-ও একটু দেখে নিতে পারেন। দেখে নিতে পারেন ১০ মিনিটের একটা টিউটরিয়াল। দেখবেন, আপনি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত শিখছেন। এসব শিখলে আপনি অন্তত ৯৫ শতাংশ মানুষের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।
সূত্র: মিডিয়াম
আরও পড়ুনজয়া আহসানের জন্মদিনে দেখে নিন ১৫ বছরের ১৫টি ছবি ০১ জুলাই ২০২৫