তিতুমীর কলেজের কর্মচারীদের ঈদ উপহার দিল ছাত্রশিবির
Published: 27th, March 2025 GMT
সরকারি তিতুমীর কলেজে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ঈদের আনন্দে শরিক হতে ঈদ উপহার ও ফুড প্যাক বিতরণ করেছে শাখা ছাত্রশিবির।
বুধবার (২৬ মার্চ) রাতে কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন শিবিরে নেতাকর্মীরা।
তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুনতাসীর আনসারি বলেন, “ইসলামী ছাত্রশিবির সবসময় মানবিক ও কল্যাণমূলক কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। আমাদের এ উপহার প্রদান কর্মসূচি তারই একটি অংশ।”
আরো পড়ুন:
ঈদযাত্রা: গাজীপুরে যাত্রীর ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়
নড়াইলে ঈদের বেচাকেনা জমে উঠেছে
তিনি বলেন, “ঈদের এই আনন্দঘন মুহূর্তে আমরা তাদের পাশে থাকতে পেরে আনন্দিত। আশা করি, আমাদের এই ছোট্ট প্রয়াস তাদের মুখে হাসি ফোটাবে এবং ঈদের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দেবে।”
শাখা সভাপতি আলফেসানি বলেন, “ইসলামী ছাত্রশিবিরের মানবিক ও কল্যাণমূলক কাজের অংশ হিসেবেই আমরা বছর জুড়ে নানা উপলক্ষে এমন উপহার সামগ্রী প্রদানের কর্মসূচি পালন করে থাকি। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের কর্মচারী ভাই ও বোনেরা শিক্ষার্থীদের সেবা দিয়ে থাকেন। এজন্য আমরা তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার চেষ্ট করছি।”
উপহার পেয়ে কলেজের কর্মচারীরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ছাত্রশিবিরের এ ধরনের মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
ঢাকা/হাফছা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ আনন দ উপহ র
এছাড়াও পড়ুন:
জরুরি সেবার স্থাপনার সুরক্ষা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার পরামর্শ
ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের সময় অতি জরুরি সেবা সচল রাখতে হাসপাতাল, সচিবালয়, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক ভবনগুলো সুরক্ষিত রাখা জরুরি। এ ধরনের দুর্যোগে মানুষের একটা নির্দিষ্ট স্থানে আশ্রয় নিতে খোলা স্থান নির্ধারণ করা এবং সিভিল ডিফেন্সকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এগুলোর পাশাপাশি নিয়মিত মহড়া দিয়ে ভূমিকম্পের সময় করণীয় নিয়ে সচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন স্থপতি, প্রকৌশলী ও ভূমিকম্প–বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘আর্থকোয়েক: রিয়েলিটি, পারসেপশন, অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক প্রিপেয়ার্ডনেস থ্রো অ্যাকশন’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তাঁরা।
খ্যাতিমান পুর প্রকৌশলী ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. শামীম জেড বসুনিয়া বলেন, ‘স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (অবকাঠামো প্রকৌশল) যাঁরা দক্ষ ও অভিজ্ঞ, তাঁরা যদি তাঁদের কাজটা ঠিকভাবে করেন, ভবন নির্মাণের সময় তদারকিও যদি ঠিকভাবে হয়, তবে আমি মনে করি ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো—যেমন সচিবালয়, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসের ভবনগুলো সুরক্ষিত রাখতে হবে। এসব ভবন ভেঙে পড়লে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে কিছু থাকবে না।
এগুলো কতটা ভূমিকম্প সহনশীল সেটা পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে কাজী গোলাম নাসির বলেন, অনেক এলাকার সড়ক খুবই সংকীর্ণ। এগুলো সম্প্রসারণ করা উচিত, যাতে দুর্যোগ–পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকাজ চালানো যায়।
ভূমিকম্পের দুর্যোগের সঙ্গে আরেকটি সংকট হতে পারে অগ্নিকাণ্ড। অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে স্থপতি কাজী গোলাম নাসির গ্যাসলাইনের নিয়ন্ত্রণ–ব্যবস্থা ভবনের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া নির্মাণ উপকরণের গুণগত মান নিশ্চিত করা, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিতে তদারকির ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক প্যাট্রিক ডি রোজারিও জাপানের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, জাপানে ভূমিকম্প–পরবর্তী সুনামির সময় দেখা গেছে, সুনামিতে চারপাশের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সেন্টার টিকে গিয়েছিল।
প্যাট্রিক ডি রোজারিও বলেন, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে হাসপাতাল, সরকারি ভবনগুলো টিকে থাকতে হবে। এগুলো দুর্যোগ মোকাবিলার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে হাসপাতালের জন্য আলাদা কোড দেওয়া আছে। সেগুলো নিশ্চিত হচ্ছে কি না, সেটা তদারক করতে হবে।
প্রতিটি এলাকায় জড়ো হওয়ার জন্য খোলা স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া জরুরি জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভূমিকম্পে আমরা যদি হতাহত কমাতে চাই তাহলে অবিলম্বে আমাদের জাতীয়ভাবে সচেতনতামূলক মহড়া চালাতে হবে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা, প্রতিটি এলাকায় নির্দিষ্ট খোলা জায়গা নির্ধারণ করা, রাসায়নিকের গুদামগুলো চিহ্নিত করা জরুরি বলেন মনে করেন কর্নেল তাজুল ইসলাম।
উপাত্তের ঘাটতির কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বদরুদ্দোজা মিয়া একটি পূর্ণাঙ্গ ‘আর্থকোয়েক রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ করার পরামর্শ দেন।
ঢাকায় নেই পর্যাপ্ত ফায়ার স্টেশনঢাকা শহরে খোলা জায়গা কোথায় পাওয়া যাবে—এমন প্রশ্ন তুলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন আছে মাত্র ১৯টি। ঢাকা মহানগরে ওয়ার্ড আছে ৯২টি। প্রতিটি ওয়ার্ডে ফায়ার স্টেশন থাকা উচিত। তিনি প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, একটা বড় ভূমিকম্প হলে যে পরিমাণ কংক্রিটের স্তূপ তৈরি হবে, সেটা সরানোর মতো জায়গা ও সরঞ্জাম কোনোটাই কোনো সংস্থার নেই।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নভেম্বরের ২১ তারিখের ভূমিকম্পের পর আমাদের ২৭৭টি ভবনে নন-স্ট্রাকচারাল ফাটল পেয়েছি। আমরা এখন সরকারি ভবনগুলো পরীক্ষা করে দেখতে চাই।’
ইমারত বিধি হালনাগাদের কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন হায়দার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো এনফোর্সমেন্ট বা প্রয়োগ। সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রস্তুতি ভালো নয় উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমাদের যা কার্যক্রম হয়, সব প্রকল্পভিত্তিক। প্রকল্প শেষ, কার্যক্রমও শেষ।’
বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক স্থপতি কাজী আজিজুল মাওলা বলেন, ‘আমরা যেহেতু এই দুর্যোগকে ঠেকাতে পারব না, সেহেতু এর মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। এ অঞ্চলের ভূমিকম্পের চরিত্র বুঝে আমাদের প্রস্তুতি নির্ধারণ করতে হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের অধীন সিসমোলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টার আছে, এটিকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে।’
স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি আসিফুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, এলাকাভিত্তিক খোলা জায়গা দরকার। স্কুলের মাঠগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, যেন ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের সময় সবাই সেখানে ছুটে গিয়ে নিরাপদে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘সচেতনতা আমাদের একমাত্র হাতিয়ার। নিয়মিত মহড়ার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা ছিল সিভিল ডিফেন্সের কাজ। প্রতিটি পাড়ায় সিভিল ডিফেন্সকে সক্রিয় করে তুলতে হবে।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি স্থপতি নওয়াজীশ মাহবুব। সভাপতিত্ব করেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহসান, স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি স্থপতি খান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক জগলুল ও ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি মাসুদ উর রশিদ।