ফতুল্লায় কুপির আগুনে ছাপড়া ঘর পুড়ে প্রতিবন্ধি যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ফতুল্লার নন্দলালপুর এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের পাশে বস্তিতে এঘটনা ঘটে। নিহত সুরুজ( ২০) ওই বস্তির মৃত. ফিরোজ মিয়া ও সাহিদা বেগমের ছেলে।

ফতুল্লা মডেল থানার এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, সুরুজ শারিরীক প্রতিবন্ধি হাটতে পারেনা। তার বাবা নেই মা ভিক্ষা করে সংসার চালায়। রাতে ঘরের মধ্যে কেরোসিন তেলের কুপি জ্বালিয়ে সুরুজকে রেখে তার মা শাহিদা বেগম বাহিরে যায়। এরমধ্যে কুপি থেকে বস্তির ছাপড়া ঘরে আগুন ধরে যায়।

তখন মুহুর্তের মধ্যে পাশের আরো দুটি ঘরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আশপাশের লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই ঘরসহ পুড়ে ছাই হয়ে যায় সুরুজ। 

এবিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী লাশ ময়না তদন্ত ছাড়া দাফনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। বিষয়টি উধ্বর্তন অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তপ্ত মুহূর্ত

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। গত বছর আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী দমন-পীড়নে তাঁর ভূমিকার জন্য এ সাজা দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে যান হাসিনা, যে আন্দোলনে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। তাঁর অনুপস্থিতিতেই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ১ হাজার ৪০০ জনের মতো মানুষকে হত্যা করেছে হাসিনার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিছু ভুক্তভোগীর পরিবার এ রায়কে ন্যায়বিচারের একটি রূপ হিসেবে দেখতে পারে। আর এ রায় হাসিনার দল আওয়ামী লীগের বাইরের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের একটি রাজনৈতিক শ্রেণিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের এই ঐক্য সাবেক এই নেত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার দেখতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে।

যা-ই হোক, বাংলাদেশ যখন আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এই রায় দেশটির রাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

এটি অবাক করার মতো বিষয় নয় যে নির্বাসিত হাসিনা এ রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে শেখ হাসিনা এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন এবং পুরোনো হিসাব মেটাতে এটাকে ব্যবহার করেছিলেন। (হাসিনার সরকারও আইসিটিকে রাজনীতিকীকরণের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছিল)

এ রায় এমন সময়ে এসেছে, যখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ চাপের মধ্যে রয়েছে। দলটির অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা দেশের বাইরে পালিয়েছেন, অথবা আত্মগোপনে রয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, সাবেক ক্ষমতাসীন দলটির সঙ্গে যুক্ত অনেক ব্যক্তিকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা-মোকাদ্দমার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। একসময় বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপকহারে হাসিনার বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতার নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি দেখা গেলেও এখন তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে দেওয়া রায় ক্ষুব্ধ দলটিকে আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে, তখন এটি একটি অশুভ ঘটনা। রায় ঘোষণার কয়েক দিন আগে ঢাকায় কয়েক ডজন অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রায় ঘোষণার পর এমন ঘটনা আরও ঘটেছে।

এ রায় সহিংসতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে, বিশেষ করে হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের হুঁশিয়ারির পর। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া না হলে তাঁরা নির্বাচন আটকে দেবেন। সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমাদের প্রতিবাদ ক্রমেই আরও শক্তিশালী হচ্ছে। আর এর জন্য যা দরকার হবে, আমরা তা করব।’

অবশ্য হাসিনার বিরুদ্ধে রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া ঢাকাকে শুধুই দলটির কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করতে উৎসাহিত করবে। এই রাজনৈতিক ক্ষোভ একটি টালমাটাল পরিবেশের মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে। অর্থনৈতিক চাপ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ এবং স্বচ্ছতার ঘাটতি থাকা সংস্কারপ্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ক্রমশ অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর অধৈর্য হয়ে উঠছে।

এসব দিক দিয়ে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য জনগণের বিপুল প্রত্যাশা রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ২০০৮ সাল থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখেনি। দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচনী রাজনীতিতে সহিংসতা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তাই নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকে শুরু করে ভোটের দিন পর্যন্ত সহিংসতার ঝুঁকি সামলানো সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। যদিও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরাই সবচেয়ে বড় হুমকি হতে পারেন। তবে অন্যরাও সহিংসতায় জড়াতে পারে।

ঢাকার জন্য চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে তুলেছে দেশটির পুলিশ বাহিনী। গত বছর প্রাণঘাতী দমন–পীড়নের কারণে তীব্র সমালোচনার পর কঠোর পদক্ষেপ নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে তারা। বাহিনীটির মনোবলের ঘাটতি ও দুর্বল তৎপরতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ উদ্বেগ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সক্ষমতা কতটা।

নির্বাচনী সময়ে অপেক্ষাকৃত শান্তি নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মাথা উঁচু করে বিদায় নেওয়ার সুযোগ আসবে। সরকারপ্রধান নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া খুব কম ব্যক্তিরই এ নিয়ে জোরালো তাড়না রয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস ব্যক্তিগত জীবনে ফেরার প্রস্তুতির সময় নিজের কৃতিত্বের কথা মনে রাখবেন।

মাইকেল কুগেলম্যান প্রায় দুই দশক ধরে দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে কাজ করছেন। দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক হিসেবে তিনি মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসির সাউথ এশিয়া ব্রিফে এই লেখা লিখেছেন। বুধবার লেখাটি প্রকাশিত হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ