শতবর্ষী স্টেশন চালু ও ট্রেনের যাত্রাবিরতি চেয়ে অবরোধ
Published: 2nd, May 2025 GMT
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী রেলস্টেশনের কার্যক্রম ১০ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে ট্রেনে যাতায়াতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্টেশনের সংস্কার ও রাজশাহী রুটে চলাচল করা আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রেলপথ অবরোধ করেন তারা। হাজারো মানুষ রেলস্টেশনে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেছেন।
জানা গেছে, ১৯২৯ সালে নিমপাড়া ইউনিয়নের বরকতপুর এলাকায় নন্দনগাছী স্টেশনের যাত্রা শুরু হয়। প্রায় শত বছর আগে স্থাপিত স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালে। এর আগে স্টেশনমাস্টার, টিকিটমাস্টার, পোর্টারম্যানসহ ১২টি পদ ছিল। বর্তমানে শুধু পোর্টারম্যান কর্মরত আছেন। দুটি লোকাল ট্রেন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে।
স্থানীয় লোকজন জানান, স্টেশনটি এক সময় তিন উপজেলার ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র থাকলেও এখন রাতে থাকে ভূতুড়ে পরিবেশ। অপরাধীরা এসে আশ্রয় নেয়। মাদক কারবারির অন্যতম স্পটে পরিণত হয়েছে এটি। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। চুরি হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সামগ্রী।
বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, অবরোধে অংশ নেওয়া লোকজন ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে ট্রেন থামানোর দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদীগামী একটি মেইল ট্রেন এলে স্টেশনে প্রবেশের আগেই জাতীয় ও লাল পতাকা নিয়ে থামিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। ১০-১২ মিনিট পর ট্রেনটি যেতে দেওয়া হয়।
সাড়ে ১২টার দিকে আসে চিলাহাটি থেকে রাজশাহীগামী আন্তঃনগর ট্রেন বরেন্দ্র এক্সপ্রেস। নন্দনগাছী স্টেশনে ট্রেনটির নির্ধারিত যাত্রাবিরতি না থাকলেও রেললাইনে সাধারণ মানুষ অবস্থান নেওয়ায় ট্রেনটি থামতে বাধ্য হয়। ১৫ মিনিট পর অবরোধে নেতৃত্বে থাকা আবু সাইদ চাঁদের সহযোগিতায় সেটি রওনা হয়।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ বলেন, কয়েক বছর ধরে ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে আন্দোলন চলছে। এরপরও সমস্যার সমাধান না হলে হাজারো মানুষ নন্দনগাছীতে অবস্থান নেবেন, কোনো ট্রেন চলবে না। জনশক্তি না থাকলে বিনা পয়সায় স্টেশনমাস্টার ও জনবল দেওয়া হবে, তবুও স্টেশন চালু করতে হবে। দ্রুত ট্রেন থামার ব্যবস্থা না নিলে এ রুটে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, নন্দনগাছী স্টেশনটি তিন উপজেলার নিকটবর্তী। এখানে লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। এজন্য নন্দনগাছী স্টেশনে সব আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রাবিরতি দিলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
অবরোধে অংশ নিয়ে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নাজমুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আশপাশের মানুষের প্রাণের দাবি, আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি। মানুষ অবরোধ ও মানববন্ধন করেছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়নি। দ্রুত স্টেশনটি চালু করা হোক।
প্রায় তিন ঘণ্টা রেললাইন অবরোধ করে রাখায় ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। স্থানীয় সরদহ স্টেশনের মাস্টার ইকবাল হোসেন বলেন, অবরোধের কারণে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস আশপাশের বিভিন্ন স্টেশনে প্রায় এক ঘণ্টা থেমে ছিল। কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ও মেইল ট্রেন ২০ মিনিট দেরিতে গেছে।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। জনবল সংকটের কারণে স্টেশনটি বন্ধ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ট শনট ব যবস অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক
পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের ‘কবর’ কবিতা বাংলা সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। ১৯২৫ সালে লেখা অমর এ কবিতার শতবর্ষ এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ‘কবর’ কবিতা তৎকালীন সময়ের সমাজের চিত্রকে তুলে ধরেছে।
‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত ‘শতবর্ষে কবর’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে এ কথা বলেন বক্তারা। শনিবার বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
‘শতবর্ষে কবর’ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন মফিজ ইমাম মিলন। ৪৮ জন লেখকের লেখা নিয়ে প্রকাশিত এই গ্রন্থ প্রকাশ করেছে নয়নজুলি প্রকাশনাী।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের বক্তব্যে উঠে আসে জসীমউদ্দীনের অবিস্মরণীয় সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার নানান প্রসঙ্গ। কবিতাটি ১৯২৫ সালে ‘গ্রাম্য কবিতা’ পরিচয়ে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল কল্লোল পত্রিকার তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যায়।
আলোচকেরা বলেন, ‘কবর’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল। কবিতাটি দীনেশচন্দ্র সেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। এমনকি ‘কবর’ পড়ে দীনেশচন্দ্র সেন ‘অ্যান ইয়াং মোহামেডান পোয়েট’ শিরোনামে একটি আলোচনাও লিখেছিলেন ফরওয়ার্ড পত্রিকায়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আববার বলেন, ‘কবর’ কবিতার শত বছর পূর্তির ঘটনা একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কবিতাটির শতবর্ষ নিয়ে বই প্রকাশ ব্যতিক্রমী প্রয়াস।
এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি শহরে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের মতো সংগঠন থাকা উচিত। একটা বৃহত্তর পরিবারের মতো কাজ করে তারা। তিনি বলেন, এ ধরনের নাগরিক সমাজ রাষ্ট্রের বাইরে থেকে দেশ ও সমাজ সম্পর্কে ভাবে। এটা বিশাল শক্তি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জালাল আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক আন্দালিব রাশদী, পক্ষিবিশারদ ইনাম আল হক, কথাসাহিত্যিক ফারুক মঈন উদ্দীন। গবেষক, সাংবাদিক ও ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন নয়নজুলি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী খান, অধ্যাপক এম এ সামাদ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ কাকলী মুখোপাধ্যায়, ডেইলি স্টারের সাহিত্য সম্পাদক ইমরান মাহফুজ প্রমুখ।
‘শতবর্ষে কবর’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান শুরু হয় ‘কবর’ কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে। স্বাগত বক্তব্য দেন ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আলতাফ হোসেন।