সত্যিই কি সালমান-শাবনূরের প্রেম ছিল, যা জানালেন ডন
Published: 3rd, May 2025 GMT
ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় জুটি সালমান শাহ, শাবনূর। এই জুটির কাছের বন্ধু জনপ্রিয় খল নায়ক ডন। সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন সালমান-শাবনূরের প্রেমের গুঞ্জন কতটা সত্য।
সালমান শাহ-এর সঙ্গে শাবনূরের প্রেম ছিল নাকি ছিল না প্রশ্নের জবাবে ডন বলেন, ‘‘সালমান, শাবনূর একটা জুটি। এদের প্রেম-প্রীতির ওপরই একটা সিনেমা ডিপেন্ড করত। ফিল্মের নায়ক-নায়িকার মধ্যেতো প্রেম থাকতেই হবে, নাহলেতো সিনেমা হবে না। কিন্তু অরজিনাল প্রেম আর ফিল্মের প্রেমতো এক না।’’
বলা হয় অকাল প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ-এর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডন। তাকে সালমান শাহ-এর হত্যাকারীও মনে করেন সালমান শাহ-এর মা নীলা চৌধুরী। এ বিষয়ে, ডন বলেন, ‘সালমান শাহ যখন মারা গেলো আমি তখন ঢাকাতেই ছিলাম না, ছিলাম বগুড়াতে। মা হিসেবে ছেলের বিচার চাইতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে সবাইকে জড়িয়ে, পেঁচিয়ে করবে এটা অস্বাভাবিক ব্যাপার।’’
আরো পড়ুন:
পরিচালকের অপেক্ষায় আছেন হৃদি শেখ
‘বরবাদ’- এর টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি
ডন ওই সাক্ষাৎকারে আরও জানিয়েছেন, তার সঙ্গে সালমান শাহ-এর শেষ দেখা হয়েছিল সালমানের শ্বশুরবাড়িতে। রাতে সালমান, সামিরা এবং ডন একসঙ্গে ডিনার করেছিলেন। এরপর তারা তাকে ডলফিন কোচে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। ওই কোচে বগুড়া গিয়েছিলেন ডন।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘গোস্ত হত্তে খাইয়্যি ইয়ান মনতও নাই’
‘অবাজি ডাইল আর চইল কিনতে পরাণ বাইর যার, মাছ-গোস্ত হডে পাইয়ুম। গোস্ত হত্তে খাইয়্যি ইয়ান মনতও নাই।’ (বাবা ডাল আর চাল কিনতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মাছ-মাংস কোথায় পাব? মাংস কখন খেয়েছি সেটা মনেও নেই।)
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকার লবণ শ্রমিক কবির হোসেন (৬৫)। তার গ্রামের বাড়ি চকরিয়ার পেকুয়ায়। তিনি ২০ বছর ধরে লবণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। দুই ছেলে, তিন মেয়ে, স্ত্রীসহ সাত সদস্যের সংসার তার। সংসার তাকে একাই চালাতে হয়। প্রতিদিন কাজ পেলে আয় হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মাসে গড়ে ২০ দিন কাজ পান। আয় হয় ১০-১২ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ৭ সদস্যের সংসার চালানো কঠিন। তার ওপর আছে ঋণের কিস্তি শোধের দায়।
কবির হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নৌকা ও ট্রাক থেকে লবণ খালাসের কাজ করি। মেয়ের বিয়ের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি এনজিও থেকে। এগুলো প্রতি সপ্তাহে শোধ করতে হয়।’
গত বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত উপজেলার ইন্দ্রপুল এলাকার লবণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। বেশির ভাগ শ্রমিক জানান, তাদের সংসারে অভাব লেগেই আছে। অনেকেই ঋণগ্রস্ত। সরেজমিন দেখা যায়, সারিবদ্ধ কারখানা আর গুদামে ঠাসা সরু গলিতে দিনের আলো ঠিকমতো পৌঁছায় না। প্রতিদিন কোটি টাকার বাণিজ্য হলেও পরিবেশ একেবারেই নোংরা।
ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টি লবণ কারখানা আছে ইন্দ্রপুল এলাকায়। ৭৭ বছর আগে ১৯৫২ সালে ইন্দ্রপুলে লবণ শিল্প গড়ে ওঠে। দেশের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ লবণ সরবরাহ হয় এখানকার কারখানাগুলো থেকে। ৩ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। কক্সবাজারের টেকনাফ, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর লবণ মাঠ থেকে নৌপথ ও সড়কপথে পটিয়ার ইন্দ্রপুলে অপরিশোধিত লবণ আসে। এখানকার অর্ধশতাধিক কারখানায় লোড-আনলোড ও ক্রাশিং কাজে যুক্ত শ্রমিকরা। লবণশিল্পের পাশাপাশি এখানে গড়ে উঠেছে চটশিল্প, সুতা, পলিব্যাগ, রাইস মিল, তুষ ও কালো কাঠের মিল, সেমাই ও ময়দা কারখানা।
লোড-আনলোডের কাজ করেন ভোলার আবুল হাশেম (৬০)। তিনি বলেন, ‘আমরা দিনে হাজার টাকা মজুরি পেলেও সংসার চালাতে কষ্ট হয়। বস্তা বহন করা অতি পরিশ্রমের কাজ। এ জন্য আমাদের অনেক খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমিকের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ করতে হয় খাওয়ার পেছনে। এতে দিনের আয়ের অর্ধেক চলে যায়। বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে ৫-৬ জন সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।’
মোহাম্মদ রিয়াজ (৩৬) বলেন, ‘আমাদের শ্রমে-ঘামে লবণ আমদানি রপ্তানির কাজ চলে পটিয়ায়। কিন্তু আমাদের জীবন চলে অনেক কষ্টে। অসুস্থ হলে কাজ জোটে না, খাবারও জোটে না। ২ বছর আগে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। এখনও শোধ করতে পারিনি।’
হাবিবুর রহমান (৫৫) বলেন, ‘ভারী কাজ প্রতিদিন করা সম্ভব হয় না। সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত হন। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নেই। এ ছাড়া বর্ষা এলে কাজ থাকে না। এতে আমরা অভাবে পড়ি।’
১৯৫২ সালের দিকে চানখালী খালের পাড়ে লবণশিল্পের সূচনা হয়। তখনকার দিনে ওই এলাকায় কোনো লবণ কারখানা ছিল না। সে সময় সাম্পান বা বোটে করে বাঁশখালী এলাকা থেকে কালো লবণ এনে ইন্দ্রপুলে বিক্রি করা হতো। প্রথম দিকে এ শিল্পের সূচনা করেন হাজী চুন্নু মিয়া, পরবর্তী সময়ে চুন্নু মিয়ার ছেলে তোফায়েল আহমেদ সওদাগর লবণশিল্পের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। পরে আবদুল কাদের সওদাগর, আবদুর রহমান, নজু মিয়া, ফজর রহমান, আফাজুর রহমান, আবদুল খালেক, আবদুস ছামাদ, আবদুস সাত্তার, নুরুল হুদা, ইউসুফ, এজাহার মিয়া, মনীন্দ্রলাল, আবদুর রহিম, নজির আহমেদ, আলী আহমেদ, আজিজ সওদাগর, মতি সওদাগর, কবির আহমেদ, গাজী আবদুল কাদের, গাজী আবদুল হক, মুনসেফ আলী, আবুল খায়ের লবণশিল্পের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখেন।
বর্তমানে চানখালী খালের শাখা উপশাখা খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে লবণশিল্পও পড়েছে সংকটে। ব্যবসায়ীরা খাল খননের দাবি জানিয়েছেন।