উপস্থিত থেকেও উদ্ধার না করায় দায় এড়ানোর সুযোগ নেই: হাইকোর্ট
Published: 3rd, May 2025 GMT
ভুক্তভোগী আবরার ফাহাদকে পেটানোর ঘটনায় কিছু অভিযুক্তকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে এবং কিছু অভিযুক্তকে উপস্থিত থেকে ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে দেখা যায়। কিন্তু তাঁদের কেউই ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেননি। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্টতই প্রমাণ হয় তাঁদের অপরাধের মানসিকতা ছিল এবং উপস্থিতির মাধ্যমে তাঁরা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে। সাড়ে পাঁচ বছর আগে বুয়েটের একটি হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের সবাই ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারিক আদালতের রায়ে ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৬ মার্চ রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের ডেথরেফারেন্স অনুমোদন করে এবং আসামিদের আপিল ও বিবিধ আবেদন খারিজ করে রায় দেওয়া হয়। হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায়ে আসামিদের দেওয়া দণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।
তথ্যাদি পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, আবরার ফাহাদ শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন, শুধু এমন অভিযোগে অভিযুক্তরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে দেখা যায়। কিন্তু কোনো বিবেকবান ব্যক্তিদের মাধ্যমে এ ধরনের নির্মম ও অমানবিক নির্যাতন করার এটি কোনো যুক্তি হতে পারে না; যেখানে তাঁরা নিজেদের বুয়েটের মেধাবী ছাত্র বলে দাবি করে। হতে পারে কিছু অভিযুক্ত ভুক্তভোগীকে পেটানোয় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়নি, কিন্তু এর মানে এ নয় যে তাঁরা শাস্তির বাইরে থাকবে এবং দায় এড়াতে পারবেন। তারা সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন, যা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেননি, যা এ হত্যকাণ্ডকে পরোক্ষভাবে সমর্থন দেওয়া।
১৩১ পৃষ্ঠা–সংবলিত পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি গত ২৩ এপ্রিল হাতে পেয়েছেন বলে জানান আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। দুই আসামির এই আইনজীবী আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞ সাক্ষীসহ কোনো সাক্ষী ভিডিওতে তাঁকে শনাক্ত করেননি। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো.
মামলার দিকগুলো এবং বিচারিক আদালতের দেওয়া পর্যবেক্ষণ পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারিক আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, চাক্ষুষ ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষীদের সাক্ষ্য, সরকারি সাক্ষীদের সাক্ষ্য, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, প্রদর্শিত নথিপত্র ও সিসিটিভির পুরো ফুটেজ বিচার–বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, নিঃসন্দেহে সব আসামি পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে তাঁকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা বরকতউল্লাহ ঢাকার চকবাজার থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে একই বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ উপস থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
যশোরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার আইনজীবীকে জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর।
অভিযুক্ত আইনজীবীরা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি, রফিকুল ইসলাম এবং তরফদার আব্দুল মুকিত।
জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, ওই চার আইনজীবীর মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক এক এনজিওর ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই টাকা ফেরত দিতে তিনি অঙ্গীকার করে ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু পরবর্তীতে ওই চেক ডিজ অনার হয় এবং একই সাথে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় মক্কেল আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
অন্যদিকে, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি একটি জমি ক্রয় করেন। কিন্তু ওই জমির মালিককে পূর্ণাঙ্গ টাকা না দিয়ে তালবাহানা করেন। শেষমেষ আট লাখ টাকা না দেওয়ায় জমির মালিক আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
এছাড়া, রফিকুল ইসলাম নিজে আইনজীবী হয়েও আরেক আইনজীবী নুরুল ইসলামকে নির্বাহী আদালতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম অভিযোগ দেন। অন্যদিকে, তরফদার আব্দুল মুকিত এক মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করেননি। এছাড়া তিনি ওই মক্কেলের কাগজপত্র আটকে রেখে জিম্মি করে রাখেন। বাধ্য হয়ে তিনি মুকিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন সমিতিতে।
এসব অভিযোগ জেলা আইনজীবী সমিতি পৃথকভাবে তদন্ত করে। একই সাথে চার আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর।
তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার লিখিতভাবে তাদেরকে নোটিশ দিয়ে অবগত করা হবে।”
ঢাকা/রিটন/এস