ভুক্তভোগী আবরার ফাহাদকে পেটানোর ঘটনায় কিছু অভিযুক্তকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে এবং কিছু অভিযুক্তকে উপস্থিত থেকে ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে দেখা যায়। কিন্তু তাঁদের কেউই ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেননি। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্টতই প্রমাণ হয় তাঁদের অপরাধের মানসিকতা ছিল এবং উপস্থিতির মাধ্যমে তাঁরা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে। সাড়ে পাঁচ বছর আগে বুয়েটের একটি হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের সবাই ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারিক আদালতের রায়ে ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এই মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৬ মার্চ রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের ডেথরেফারেন্স অনুমোদন করে এবং আসামিদের আপিল ও বিবিধ আবেদন খারিজ করে রায় দেওয়া হয়। হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায়ে আসামিদের দেওয়া দণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।

তথ্যাদি পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, আবরার ফাহাদ শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন, শুধু এমন অভিযোগে অভিযুক্তরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে দেখা যায়। কিন্তু কোনো বিবেকবান ব্যক্তিদের মাধ্যমে এ ধরনের নির্মম ও অমানবিক নির্যাতন করার এটি কোনো যুক্তি হতে পারে না; যেখানে তাঁরা নিজেদের বুয়েটের মেধাবী ছাত্র বলে দাবি করে। হতে পারে কিছু অভিযুক্ত ভুক্তভোগীকে পেটানোয় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়নি, কিন্তু এর মানে এ নয় যে তাঁরা শাস্তির বাইরে থাকবে এবং দায় এড়াতে পারবেন। তারা সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন, যা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেননি, যা এ হত্যকাণ্ডকে পরোক্ষভাবে সমর্থন দেওয়া।

১৩১ পৃষ্ঠা–সংবলিত পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি গত ২৩ এপ্রিল হাতে পেয়েছেন বলে জানান আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। দুই আসামির এই আইনজীবী আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞ সাক্ষীসহ কোনো সাক্ষী ভিডিওতে তাঁকে শনাক্ত করেননি। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো.

মেফতাহুল ইসলাম ওরফে জিয়ন শারীরিকভাবে অক্ষম, তাঁর পক্ষে মারধর করা সম্ভব নয়—এসব যুক্তি তুলে ধরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। চলতি মাসে আপিল করা হবে।

মামলার দিকগুলো এবং বিচারিক আদালতের দেওয়া পর্যবেক্ষণ পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারিক আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, চাক্ষুষ ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষীদের সাক্ষ্য, সরকারি সাক্ষীদের সাক্ষ্য, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, প্রদর্শিত নথিপত্র ও সিসিটিভির পুরো ফুটেজ বিচার–বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, নিঃসন্দেহে সব আসামি পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে তাঁকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা বরকতউল্লাহ ঢাকার চকবাজার থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে একই বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ উপস থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

চিন্ময় দাসের জামিন বাতিলের দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 

চট্টগ্রামের আইনজীবী আলিফ হত্যার বিচার ও সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রকাশ চিন্ময় প্রভুর জামিন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।  

শুক্রবার (২ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদ থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, একজন রাষ্ট্রদ্রোহীকে জামিন দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করা হয়েছে। এই জামিনের মধ্যদিয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রভাবকে উৎসাহিত করা হয়েছে। বক্তারা আইনজীবী আলিফ হত্যার হুকুমদাতাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।

আরো পড়ুন:

রাবি রেজিস্ট্রারের বাসভবনে ককটেল বিস্ফোরণ; শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রংপুরে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে গ্রাহকদের বিক্ষোভ

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ইবনে হোসাইন জিয়াদ, যুগ্ম সদস্য সচিব মোসদালিফা অভি, মুখ্য সংগঠক তাওসিফ ইমরোজ, সংগঠক আরিফুল ইসলাম, আইনজীবী জমির উদ্দিন, আলিফের চাচাতো ভাই আদনান হোসেন, রিদোয়ান হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন।

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ হচ্ছে না চিন্ময় দাসের জামিন শুনানি
  • নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ নিয়ে হাইকোর্টে রিট
  • জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফারুকীর প্রতি শ্রদ্ধায় আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ আধা বেলা বন্ধ থাকবে
  • চিন্ময় দাসের জামিন শুনানি আজ
  • আসামিদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের শুনানি মঙ্গলবার
  • মারা গেছেন প্রবীণ আইনজীবী এম আই ফারুকী
  • নেত্রকোনায় আইনজীবীকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ, বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ
  • রাজপরিবারের সঙ্গে সমঝোতা চান প্রিন্স হ্যারি
  • চিন্ময় দাসের জামিন বাতিলের দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের