কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের অন্যতম বৃহৎ আয়োজন ‘এআই অলিম্পিয়াড ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ড্যাফোডিল টাওয়ারে দিনব্যাপী এই আয়োজন হয়। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এ আয়োজন করে।

সারা দেশ থেকে ৭০০–এর বেশি শিক্ষার্থী, তরুণ উদ্ভাবক ও প্রযুক্তিপ্রেমী অংশ নেন এ উৎসবে। সকাল ৯টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এম লুৎফর রহমান।

সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন ড্যাফোডিল ফ্যামিলির চেয়ারম্যান মো.

সবুর খান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও ইয়ুথ প্রোগ্রামের ইভেন্টস অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন প্রধান সমন্বয়ক মো. মুনির হাসান, ড্যাফোডিল ফ্যামিলির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সৈয়দ আখতার হোসেন।

আয়োজনে সার্বিক বিবরণ তুলে ধরেন অলিম্পিয়াডের কনভেনর ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক রথীন্দ্র নাথ দাস।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেবল একটি প্রযুক্তি নয়, এটি জাতি গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এই অলিম্পিয়াড তরুণদের সেই হাতিয়ার নির্মাণের পথে এগিয়ে নেবে।’ তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজনের সঙ্গে আইসিটি বিভাগ সরাসরি যুক্ত হয়ে সহযোগিতা করবে।

সবুর খান বলেন, ‘প্রযুক্তির সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তারা উদ্যোক্তা হয়ে উঠলে বাংলাদেশে প্রযুক্তির বিকাশ অব্যাহত থাকবে। এই অলিম্পিয়াড কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি জাতীয় পর্যায়ে এআই সচেতনতা তৈরির একটি রূপান্তরমূলক প্রক্রিয়া।’

আয়োজনে তিনটি কর্মশালায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাস্তব প্রয়োগ, নৈতিকতা এবং সম্ভাবনার নানা দিক আলোচিত হয়। শিক্ষার্থীরা তিনটি স্তরে (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক) প্রকল্প জমা দেন। প্রকল্পের বিচার করেন ড্যাফোডিলের কম্পিউটার, কম্পিউটিং ও সফটওয়্যার বিভাগের ৩৬ জন শিক্ষক।

সেরা দল নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। টারশিয়ারি বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টিম ‘উইসডোমিক, প্রথম রানারআপ হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিসার’ এবং দ্বিতীয় রানারআপ হয় ড্যাফোডিলের ‘ওসমান’ দল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত অল ম প য় ড

এছাড়াও পড়ুন:

গরিবের কাছে স্বপ্নের মতো একটুকরো ইলিশ

ইলিশ শুধু মাছ নয়, বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতি ও অনুভূতির এক অনন্য প্রতীক। পূর্ণিমার রাতে নদীতে জ্যোৎস্না পড়লে যেমন মনে হয় সোনালি রূপ ঝলমল করছে, তেমনি ইলিশের রুপালি ঝলক যেন বাঙালির খাবার টেবিলে আনন্দের আলো ছড়ায়। কিন্তু সেই আলো গরিব মানুষের ঘরে পৌঁছায় না। তাদের কাছে ইলিশ আজ স্বপ্নের মতো ছোঁয়া যায় না, শুধু কল্পনায় ভেসে ওঠে।

বাংলাদেশকে ইলিশের দেশ বলা হয়। বাংলাদেশে ইলিশ শুধু খাবার নয়, আবেগ। ঈদ হোক বা পূজা, অতিথি এলে কিংবা উৎসবের দিনে, ইলিশ ছাড়া খাবারের টেবিল অসম্পূর্ণ মনে করেন অনেক মানুষ। কিন্তু এই আনন্দ সব ঘরে ভাগ হয়ে যায় না। শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, দিনমজুর কিংবা গ্রামীণ গরিব পরিবারগুলোর কাছে ইলিশ এখন বিলাসবস্তু। একসময় বাজারে গিয়ে ছোট একটা ইলিশ কেনা গেলেও এখন দাম আকাশচুম্বী হয়ে যাওয়ায় তাদের কাছে এটা একেবারেই নাগালের বাইরে চলে গেছে।

পদ্মা, মেঘনা, যমুনা কিংবা সাগর সব জায়গায় এই মাছের সমারোহ। প্রতিবছর দেশ-বিদেশে কোটি কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। অথচ এ দেশের অনেক গরিব মানুষ বছরের পর বছর মুখে ইলিশ তুলে খেতে পারে না। দাম এত বেশি যে সাধারণ শ্রমিক বা দিনমজুর পরিবারের কাছে এটা এখন বিলাসিতা।

দেশের প্রান্তিক শ্রমজীবী পরিবারগুলোর বেশির ভাগই বছরে একবারও ইলিশ কিনতে পারে না। কখন সর্বশেষ তারা ইলিশ খেয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই হয়তো মনেই থাকে না। অথচ বিশ্বে উৎপাদিত ইলিশের ৭০ শতাংশের বেশি আসে এই দেশ থেকে। বর্তমানে মাঝারি আকারের এক কেজি ইলিশের দাম দেড় হাজার টাকার ওপরে। আর একজন তৈরি পোশাক শ্রমিকের মাসিক আয় গড়ে ১০-১২ হাজার টাকা। ফলে তাঁদের জন্য ইলিশ কেনা মানেই মাসের বাজেট ভেঙে যাওয়া।

ইলিশ নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার পেছনে নানা কারণ কাজ করছে। নদীদূষণ, অতিরিক্ত নৌ চলাচল, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ইলিশের প্রাপ্যতা কমে গেছে। জাটকা নিধন বন্ধ না হওয়া এবং প্রজনন মৌসুমে অবৈধ জালের ব্যবহার উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। দালাল ও ব্যবসায়ী চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে মধ্যবিত্তও হিমশিম খায়, আর গরিবদের জন্য ইলিশ নাগালের বাইরেই থেকে যায়। উৎসবের মৌসুমে চাহিদা বেড়ে যায়, কিন্তু সরবরাহ সীমিত থাকে। এতে দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ইলিশ এখন সাধারণ মানুষের স্বপ্নের খাদ্যে পরিণত হয়েছে।

ইলিশের স্বাদ যেন কেবল ধনীদের জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে, সে জন্য সমস্যার সমাধান করতে হবে। কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে অবশ্যই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে এবং ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জাটকা নিধন কঠোরভাবে দমন করতে হবে এবং প্রজনন মৌসুমে নদীতে বিশেষ নজরদারি চালাতে হবে। নদীদূষণ রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইলিশ আহরণের মৌসুমে সঠিক সময়ে মাছ ধরার সুযোগ ও আর্থিক সহায়তা দিলে উৎপাদন বাড়বে। এসব উদ্যোগ কার্যকর হলে ইলিশের দাম কমে আসবে এবং সব শ্রেণির মানুষ সমানভাবে এর স্বাদ নিতে পারবে।

ইলিশকে যদি আমরা সত্যিই ‘জাতীয় মাছ’ বলি, তাহলে তার স্বাদ কেবল ধনী-সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। গরিব শিশুরাও যেন উৎসবের দিনে অন্তত একটুকরো ইলিশ খেতে পারে। এটি আমাদের রাষ্ট্র ও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

ফারিহা জামান নাবিলা

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জে রঙতুলির আঁচড়ে সেজে উঠছে দেবী দুর্গা,
  • ‘আমার দেশকে চিনতে পারছি না’, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জোলি
  • ভ্রাতৃত্ব ও অসাম্প্রদায়িকতায় জবিতে মহালয়া উৎসব
  • ছয় ম্যাচে ছয় জয় রিয়ালের, বার্নাব্যুতে উৎসব হলো অন্য কারণেও
  • ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর ভাদ্রোৎসব ‘কারাম’
  • সরকারের নীরবতার কারণেই সংখ্যালঘুদের ওপর বারবার আক্রমণ হচ্ছে
  • গরিবের কাছে স্বপ্নের মতো একটুকরো ইলিশ
  • মনিকার প্রেম ভাঙল
  • বিজ্ঞানকে জয়ের সংকল্পে বরিশালে চলছে বিজ্ঞান উৎসব
  • নানা আয়োজনে দিনভর উৎসবের আমেজ