৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস, বাড়িতে হাজির পুলিশ
Published: 4th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) থেকে ৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস করে প্রশংসায় ভাসছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা উজানপাড়ার বৃদ্ধ মো. সাদেক আলী প্রামানিক।
গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঘোষিত বিএসএস পরীক্ষার ফলাফলে তিনি ২.৭৫ সিজিপিএ পেয়ে পাস করেছেন।
সাদেক আলীর এমন সাফল্যে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে জেলা পুলিশও। শনিবার (৩ মে) বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী সাদেক আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
পেশায় কৃষক সাদেক আলী প্রামানিক এক ছেলে এবং দুই মেয়ের বাবা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাদেক আলী প্রামানিক ১৯৭৪ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৬ এইচএসসি পাস করেন। আর্থিক অনটন এবং বিভিন্ন সমস্যার কারণে আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন থেকে তিনি দূরে সরে যাননি।
তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালে বাউবির অধীনে নাটোর দিঘাপতিয়া এম. কে. কলেজে ভর্তি হন। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাদেক আলীর পায়ের দুটি হাড় ভেঙে যায়। সেই ভাঙা পা নিয়ে তিনি ক্রাচে ভর দিয়ে দিয়ে ৩য় থেকে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন।
সোমবার প্রকাশিত ২০২২ সালের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে তিনি উত্তীর্ণ হওয়ায় সাদেক আলী ও তার পরিবারসহ খুশি এলাকাবাসী।
সাদেক আলী প্রামানিকের ছেলে নাটোরের দিঘাপাতিয়া এমকে কলেজের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, “বাবা ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের কখনোই ছাড় দিতেন না। আমাদের তিন ভাইবোনকেই তিনি লেখাপড়া করিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমতে এখন সবাই আমরা প্রতিষ্ঠিত। বাবা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়েছিলেন, তারপর আর্থিক অনটনের জন্য আর পড়তে পারেননি। তবে ২০২০ সালে বাবা ইচ্ছে প্রকাশ করেন ডিগ্রি কমপ্লিট করবেন।”
তিনি আরো বলেন, “প্রথমে আমরা মনে করেছি যে তিনি এমনিতেই বলছেন। পরে তার ইচ্ছায় তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয়। আল্লাহর রহমতে তিনি পাসও করেছেন। বাবার এমন সাফল্যে আমরা ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই অত্যন্ত খুশি। আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।”
সাদেক আলী প্রামানিক বলেন, “আল্লাহর রহমতে ছোটবেলা থেকেই আমি মেধাবী ছিলাম। প্রত্যেক ক্লাসেই আমার রোল ১ ছিল। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে সেভাবে পড়াশোনা করা হয়নি। দীর্ঘ দিন চলে যায়। তবু কেন জানি মনে হচ্ছিল জীবনে কিছু একটা বাদ আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম ডিগ্রি পরীক্ষা দেব। পরীক্ষার ভেতর আমার পা ভেঙে যায়। সেভাবেই কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে পাস করেছি।”
তিনি আরো বলেন, “আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন পড়াশোনার কথা। আমি প্রমাণ করেছি যে পড়াশোনার কোনো বয়স নেই। যে কোনো সময় যে কোনো মানুষ পড়াশোনা করতে পারে, জ্ঞান অর্জন করতে পারে।”
নলডাঙ্গা উপজেলার শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জিয়াউল হক জিয়া তার নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে লিখেছেন- ‘‘ভাঙা পা নিয়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে ৭৫ বছর বয়সে এ অর্জনে প্রমাণ হয়েছে দৃঢ়বিশ্বাস এবং কঠিন মনোবল থাকলে সব সম্ভব। সাদেক আলী প্রামাণিক শিক্ষাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন বলে এ অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়ে দিয়েছেন।”
নাটোর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাদেক আলীকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী বলেন, “৭৫ বছর বয়সে তিনি (সাদেক আলী) স্নাতক পাস করেছেন- এটা সত্যিই আনন্দ, অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহের। তিনি প্রমাণ করেছেন ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে যে কোনো বয়সেই যে কোনো বাধা অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। সাদেক আলীর জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।”
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটোর উপ-আঞ্চলিক পরিচালক তানিয়া তালুকদার বলেন, “সাদেক আলীর অদম্য ইচ্ছা আর অক্লান্ত পরিশ্রমই এ বয়সে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। এটি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) জন্য একটি গর্বের বিষয়।”
ঢাকা/আরিফুল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স দ ক আল র নলড ঙ গ ৭৫ বছর পর ক ষ কর ছ ন র জন য আল ল হ প স কর
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষা, ফরম পূরণের সময় বাড়ল ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষার ফরম পূরণের প্রক্রিয়ার সময় ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ফরম পূরণের বর্ধিত সময়—১. আবেদন ফরম পূরণের বর্ধিত তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
২. ডাটা এন্ট্রি নিশ্চয়নের শেষ তারিখ: ২৮ সেপ্টেম্বর ১১:৫৯ মিনিট পর্যন্ত।
৩. সোনালী সেবার মাধ্যমে টাকা জমার শেষ তারিখ: ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে—২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত, ২০১৯-২০২০, ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের অনিয়মিত ও গ্রেড উন্নয়ন এবং ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শুধুমাত্র Promoted শিক্ষার্থীরা ‘F’ গ্রেড পাওয়া কোর্সে ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য—জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে রেজিস্ট্রেশন করা অনার্স কোর্সের সকল ছাত্রছাত্রী ২০২৩ সালের অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে Promoted হয়ে ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের কোর্স সম্পন্ন করেছে তারা নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে অনার্স কোর্সের সিলেবাস ও সংশোধিত রেগুলেশন অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
আরও পড়ুনআয়ারল্যান্ড সরকারের বৃত্তি: মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ৮ ঘণ্টা আগেঅনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য—২০১৯-২০২০, ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের যেসব শিক্ষার্থী অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে Not Promoted হয়েছে অথবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি ওই সব শিক্ষার্থী অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। Not Promoted শিক্ষার্থীকে আগের বছরের পাস করা কোর্সের পরীক্ষা দিতে হবে না। তবে যারা ২০২৩ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে প্রথমবারের মতো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ‘C’ বা ‘D’ গ্রেড পেয়েছে শুধুমাত্র তারাই ২০২৪ সালের পরীক্ষায় উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত করার জন্য পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে সর্বোচ্চ দুটি কোর্সে এবং ‘F’ গ্রেড প্রাপ্ত সব কোর্সে পরীক্ষা দিতে হবে।
# বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫