বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) থেকে ৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস করে প্রশংসায় ভাসছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা উজানপাড়ার বৃদ্ধ মো. সাদেক আলী প্রামানিক।

গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঘোষিত বিএসএস পরীক্ষার ফলাফলে তিনি ২.৭৫ সিজিপিএ পেয়ে পাস করেছেন। 

সাদেক আলীর এমন সাফল্যে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে জেলা পুলিশও। শনিবার (৩ মে) বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী সাদেক আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

রফিকুল ইসলাম রফিক এবং নলডাঙ্গা থানার (ওসি তদন্ত) মো. মোনোয়ার জাহান।

পেশায় কৃষক সাদেক আলী প্রামানিক এক ছেলে এবং দুই মেয়ের বাবা। 

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাদেক আলী প্রামানিক ১৯৭৪ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৬ এইচএসসি পাস করেন। আর্থিক অনটন এবং বিভিন্ন সমস্যার কারণে আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন থেকে তিনি দূরে সরে যাননি। 

তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালে বাউবির অধীনে নাটোর দিঘাপতিয়া এম. কে. কলেজে ভর্তি হন। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাদেক আলীর পায়ের দুটি হাড় ভেঙে যায়। সেই ভাঙা পা নিয়ে তিনি ক্রাচে ভর দিয়ে দিয়ে ৩য় থেকে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। 

সোমবার প্রকাশিত ২০২২ সালের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে তিনি উত্তীর্ণ হওয়ায় সাদেক আলী ও তার পরিবারসহ খুশি এলাকাবাসী। 

সাদেক আলী প্রামানিকের ছেলে নাটোরের দিঘাপাতিয়া এমকে কলেজের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, “বাবা ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের কখনোই ছাড় দিতেন না। আমাদের তিন ভাইবোনকেই তিনি লেখাপড়া করিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমতে এখন সবাই আমরা প্রতিষ্ঠিত। বাবা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়েছিলেন, তারপর আর্থিক অনটনের জন্য আর পড়তে পারেননি। তবে ২০২০ সালে বাবা ইচ্ছে প্রকাশ করেন ডিগ্রি কমপ্লিট করবেন।”

তিনি আরো বলেন, “প্রথমে আমরা মনে করেছি যে তিনি এমনিতেই বলছেন। পরে তার ইচ্ছায় তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয়। আল্লাহর রহমতে তিনি পাসও করেছেন। বাবার এমন সাফল্যে আমরা ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই অত্যন্ত খুশি। আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।”

সাদেক আলী প্রামানিক বলেন, “আল্লাহর রহমতে ছোটবেলা থেকেই আমি মেধাবী ছিলাম। প্রত্যেক ক্লাসেই আমার রোল ১ ছিল। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে সেভাবে পড়াশোনা করা হয়নি। দীর্ঘ দিন চলে যায়। তবু কেন জানি মনে হচ্ছিল জীবনে কিছু একটা বাদ আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম ডিগ্রি পরীক্ষা দেব। পরীক্ষার ভেতর আমার পা ভেঙে যায়। সেভাবেই কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে পাস করেছি।” 

তিনি আরো বলেন, “আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন পড়াশোনার কথা। আমি প্রমাণ করেছি যে পড়াশোনার কোনো বয়স নেই। যে কোনো সময় যে কোনো মানুষ পড়াশোনা করতে পারে, জ্ঞান অর্জন করতে পারে।”

নলডাঙ্গা উপজেলার শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জিয়াউল হক জিয়া তার নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে লিখেছেন- ‘‘ভাঙা পা নিয়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে ৭৫ বছর বয়সে এ অর্জনে প্রমাণ হয়েছে দৃঢ়বিশ্বাস এবং কঠিন মনোবল থাকলে সব সম্ভব। সাদেক আলী প্রামাণিক শিক্ষাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন বলে এ অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়ে দিয়েছেন।”

নাটোর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাদেক আলীকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী বলেন, “৭৫ বছর বয়সে তিনি (সাদেক আলী) স্নাতক পাস করেছেন- এটা সত্যিই আনন্দ, অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহের। তিনি প্রমাণ করেছেন ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে যে কোনো বয়সেই যে কোনো বাধা অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। সাদেক আলীর জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।”

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটোর উপ-আঞ্চলিক পরিচালক তানিয়া তালুকদার বলেন, “সাদেক আলীর অদম্য ইচ্ছা আর অক্লান্ত পরিশ্রমই এ বয়সে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। এটি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) জন্য একটি গর্বের বিষয়।”

ঢাকা/আরিফুল/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স দ ক আল র নলড ঙ গ ৭৫ বছর পর ক ষ কর ছ ন র জন য আল ল হ প স কর

এছাড়াও পড়ুন:

পিরোজপুরে একটি গ্রামের শতাধিক পরিবার আতঙ্কে

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠির ফলাইবুনিয়া গ্রামে বিএনপি নেতা আব্দুল হাই রাঢ়ীর বাড়ি এক মাস আগে পুড়িয়ে দেয় দলটির কর্মীরা। অভিযোগ, তাঁর দুই ছেলে ঢাকায় যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত।

এ ঘটনার এক মাসেও আব্দুল হাইয়ের স্ত্রীর অভিযোগ কাউখালী থানা এজাহার হিসেবে নেয়নি। উল্টো হামলাকারীদের মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। হামলাকারীদের দফায় দফায় মানববন্ধন ও সমাবেশের কারণে ফলাইবুনিয়া গ্রামের রাঢ়ী বাড়িসহ শতাধিক পরিবার আতঙ্কে দিন পার করছে।

গত ২৮ মার্চ রাতে রাঢ়ী বাড়িতে হামলা হয়। সম্প্রতি এ গ্রামে গেলে নজর রাখছে বলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা জানান, প্রথমে আব্দুল হাইয়ের ছেলে রহমতউল্লাহকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। ব্যর্থ হয়ে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাবেক সহসম্পাদক তারিকুল ইসলাম সুমন, তাঁর ভাই আওয়ামী লীগ কর্মী মো. নাসিরউদ্দিন। তাদের বাড়ি পার্শ্ববর্তী শিয়াকাঠি গ্রামে।

জানা যায়, আব্দুল হাইয়ের ছেলে ব্যবসায়ী রহমতউল্লাহ যুবলীগের কর্মী ও ছোট ছেলে রাসেল রাঢ়ী কাউখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া নিয়ে বিরোধ বাধে দু’পক্ষের। রাজধানীতে আশ্রয় নেওয়া রাসেলকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মারধরও করে। আর ঈদুল ফিতরে গ্রামে এলে রহমতকে অপহরণের চেষ্টা করেন সুমন।

গ্রামবাসী জানান, বাজারে চা খাচ্ছিলেন রহমত। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে আসা ৮-১০ যুবক তাঁকে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। রহমতের চিৎকারে বাজারের লোকজন ও মসজিদে তারাবি নামাজ শেষ করে বের হওয়া মুসল্লিরা অপহরণকারীদের ধাওয়া দেন। এ সময় তারা অটোচালকসহ পাঁচ-ছয়জনকে মারধর করে। ঘণ্টাখানেক পর অস্ত্রধারী শতাধিক ব্যক্তি রহমতের বাবা আব্দুল হাইয়ের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয়।

পরে ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে প্রচার চালানো হয়– ফলাইবুনয়িা বাজারে ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার লাগানোর সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালায়। এতে বিক্ষুব্ধরা আগুন দিয়েছে। পরে এ গল্প প্রতিষ্ঠা করতে শিয়ালকাঠিতে দু’বার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সুমন ও তাঁর অনুসারীরা।

রাঢ়ী বাড়ির বাসিন্দা গৃহবধূ শিউলি বেগম ও কলেজছাত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা প্রাণ বাঁচাতে বাগানে লুকিয়েছিলাম। তিন দিন পরে বাড়ি ফিরতে পারি। ঘটনার এক মাস পরও আতঙ্কে রয়েছি। হামলাকারীরা প্রায় বাড়ির সামনে মিছিল-সমাবেশ করছে।’

বিএনপি নেতা আব্দুল হাইয়ের দাবি, বাড়িতে রাখা ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, জাকাতের কাপড়, আসবাবসহ প্রায় ৮ লাখ টাকার সরঞ্জাম খোয়া গেছে। ঘরে নুনের বাটি পর্যন্ত পুড়ে গেছে। মামলা করতে গেলে পুলিশ নেয়নি। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হামলাকারীরা।

কাউখালী উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, সুমনের বড় ভাই জসিমউদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর অনুরোধে আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশে যেতে তারা বাধ্য হয়েছেন।

জানতে চাইলে তারিকুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘রাঢ়ী বাড়ির সবাই আওয়ামী লীগ করে। ২৮ মার্চ রাতে আমার বড় ভাই জসিমউদ্দিনের ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার লাগাতে গেলে আব্দুল হাইয়ের ছেলে রহমত ও রাসেল কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মানুষ তাদের বাড়িতে হামলা করে।’

শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘আব্দুল হাই ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি ছিলেন। তাঁর মেজ ছেলে রফিক ও বড় ছেলে শহিদ বিএনপি করে। তবে অন্য দুই ছেলে– রহমত ও রাসেল যুবলীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। সুমনরা দাবি করেছেন, পোস্টার লাগানোর সময় তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নাকি বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা।’

কাউখালী থানার ওসি মু. সোলায়মান জানান, ২৮ মার্চের ঘটনায় একটি মামলায় তারা একজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। তবে যাদের বাড়ি পুড়ে গেছে, তারা কোনো অভিযোগ দেননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিঙ্গাপুরে ভোটগ্রহণ চলছে, সাড়ে ছয় দশক শাসনের পরীক্ষা পিএপির
  • মতবিরোধ ভুলে রাজপরিবারের সঙ্গে আবারও একত্র হতে চান হ্যারি: বিবিসিকে সাক্ষাৎকার
  • পিরোজপুরে একটি গ্রামের শতাধিক পরিবার আতঙ্কে
  • ভাত না খেয়েই ৫৩ বছর পার রহমত আলীর