চট্টগ্রামের পটিয়ায় সরকারি জায়গা দখল করে এলাকার পানিনিষ্কাশনের পথে দেয়াল নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ রোববার বেলা ১১টায় উপজেলার জিরি ইউনিয়নের উত্তর দেয়াং কোটরপাড়া এলাকায় এ মানববন্ধন হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা দুই ভাই প্রভাব খাটিয়ে সরকারি জায়গা দখল করে ভবন করেছেন। এতে এলাকার পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চলাফেরা করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, মো.

নেছার উদ্দিনের বাড়ির সামনে অবস্থান নেন কয়েক শ বাসিন্দা। তাঁরা পানির মধ্যে দাঁড়িয়েই মানববন্ধন করেন। সেখানে তাঁরা অবিলম্বে নালার ওপর থেকে স্থাপনা সরানোর দাবি জানান।

বক্তারা উল্লেখ করেন, জিরি ইউনিয়নের উত্তর দেয়াং কোটরপাড়া এলাকায় পানিনিষ্কাশনের জন্য সরকারি মৌজার একটি নালা আছে। সেটি মো. নেছার উদ্দিনের বাড়ির পাশে খাসজায়গার ওপর দিয়ে কর্ণফুলী নদী সংযুক্ত খালে পড়েছে। মো. নেছার উদ্দিন ও তাঁর ভাই মো. আরিফ প্রভাব খাটিয়ে সেই জায়গায় নতুন ভবন করেছেন। ফলে পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার ব্যবহৃত পানি নালা উপচে সড়কে উঠে আসছে। আট মাস ধরে এ অবস্থা এখানে।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা সুলাইমান, স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবু তালেব, আহমদ নূর, আলী আহমেদ, মো. বশীর, মহিউদ্দিন, সালাউদ্দিন, রোজিনা আক্তার, মর্জিনা বেগম প্রমুখ। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ী, দোকানি ও শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন, পানি মাড়িয়ে মসজিদে, বিদ্যালয়ে যেতে হয়। প্রতিবাদ করলে তাঁরা মামলার হুমকি দেন। অনেকে মিথ্যা মামলার কারণে বাড়িতে আসতে পারছেন না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আশপাশের অন্তত ১০০ গজজুড়ে সড়কে অপরিষ্কার পানি দেখা গেছে। বৃষ্টির ফলে ময়লা পানি পুকুরের পানিতেও মিশেছে।

এ বিষয়ে গত ২৪ এপ্রিল পটিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ দেন এলাকাবাসী। তাতে উল্লেখ করা হয়, মো. নেছার উদ্দিন পুলিশের সাবেক কনস্টেবল। তাঁর ছোট ভাই মো. আরিফ চট্টগ্রাম বিভাগের একটি থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বক্তব্য জানতে তাঁদের দুজনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সরকারি জায়গা কি না, সেটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। খাসজায়গার ওপর দেয়াল নির্মাণ হলে আমরা ভেঙে দেব যাচাইয়ের পর।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পিরোজপুরে একটি গ্রামের শতাধিক পরিবার আতঙ্কে

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠির ফলাইবুনিয়া গ্রামে বিএনপি নেতা আব্দুল হাই রাঢ়ীর বাড়ি এক মাস আগে পুড়িয়ে দেয় দলটির কর্মীরা। অভিযোগ, তাঁর দুই ছেলে ঢাকায় যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত।

এ ঘটনার এক মাসেও আব্দুল হাইয়ের স্ত্রীর অভিযোগ কাউখালী থানা এজাহার হিসেবে নেয়নি। উল্টো হামলাকারীদের মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। হামলাকারীদের দফায় দফায় মানববন্ধন ও সমাবেশের কারণে ফলাইবুনিয়া গ্রামের রাঢ়ী বাড়িসহ শতাধিক পরিবার আতঙ্কে দিন পার করছে।

গত ২৮ মার্চ রাতে রাঢ়ী বাড়িতে হামলা হয়। সম্প্রতি এ গ্রামে গেলে নজর রাখছে বলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা জানান, প্রথমে আব্দুল হাইয়ের ছেলে রহমতউল্লাহকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। ব্যর্থ হয়ে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাবেক সহসম্পাদক তারিকুল ইসলাম সুমন, তাঁর ভাই আওয়ামী লীগ কর্মী মো. নাসিরউদ্দিন। তাদের বাড়ি পার্শ্ববর্তী শিয়াকাঠি গ্রামে।

জানা যায়, আব্দুল হাইয়ের ছেলে ব্যবসায়ী রহমতউল্লাহ যুবলীগের কর্মী ও ছোট ছেলে রাসেল রাঢ়ী কাউখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া নিয়ে বিরোধ বাধে দু’পক্ষের। রাজধানীতে আশ্রয় নেওয়া রাসেলকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মারধরও করে। আর ঈদুল ফিতরে গ্রামে এলে রহমতকে অপহরণের চেষ্টা করেন সুমন।

গ্রামবাসী জানান, বাজারে চা খাচ্ছিলেন রহমত। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে আসা ৮-১০ যুবক তাঁকে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। রহমতের চিৎকারে বাজারের লোকজন ও মসজিদে তারাবি নামাজ শেষ করে বের হওয়া মুসল্লিরা অপহরণকারীদের ধাওয়া দেন। এ সময় তারা অটোচালকসহ পাঁচ-ছয়জনকে মারধর করে। ঘণ্টাখানেক পর অস্ত্রধারী শতাধিক ব্যক্তি রহমতের বাবা আব্দুল হাইয়ের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয়।

পরে ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে প্রচার চালানো হয়– ফলাইবুনয়িা বাজারে ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার লাগানোর সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালায়। এতে বিক্ষুব্ধরা আগুন দিয়েছে। পরে এ গল্প প্রতিষ্ঠা করতে শিয়ালকাঠিতে দু’বার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সুমন ও তাঁর অনুসারীরা।

রাঢ়ী বাড়ির বাসিন্দা গৃহবধূ শিউলি বেগম ও কলেজছাত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা প্রাণ বাঁচাতে বাগানে লুকিয়েছিলাম। তিন দিন পরে বাড়ি ফিরতে পারি। ঘটনার এক মাস পরও আতঙ্কে রয়েছি। হামলাকারীরা প্রায় বাড়ির সামনে মিছিল-সমাবেশ করছে।’

বিএনপি নেতা আব্দুল হাইয়ের দাবি, বাড়িতে রাখা ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, জাকাতের কাপড়, আসবাবসহ প্রায় ৮ লাখ টাকার সরঞ্জাম খোয়া গেছে। ঘরে নুনের বাটি পর্যন্ত পুড়ে গেছে। মামলা করতে গেলে পুলিশ নেয়নি। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হামলাকারীরা।

কাউখালী উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, সুমনের বড় ভাই জসিমউদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর অনুরোধে আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশে যেতে তারা বাধ্য হয়েছেন।

জানতে চাইলে তারিকুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘রাঢ়ী বাড়ির সবাই আওয়ামী লীগ করে। ২৮ মার্চ রাতে আমার বড় ভাই জসিমউদ্দিনের ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার লাগাতে গেলে আব্দুল হাইয়ের ছেলে রহমত ও রাসেল কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মানুষ তাদের বাড়িতে হামলা করে।’

শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘আব্দুল হাই ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি ছিলেন। তাঁর মেজ ছেলে রফিক ও বড় ছেলে শহিদ বিএনপি করে। তবে অন্য দুই ছেলে– রহমত ও রাসেল যুবলীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। সুমনরা দাবি করেছেন, পোস্টার লাগানোর সময় তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নাকি বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা।’

কাউখালী থানার ওসি মু. সোলায়মান জানান, ২৮ মার্চের ঘটনায় একটি মামলায় তারা একজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। তবে যাদের বাড়ি পুড়ে গেছে, তারা কোনো অভিযোগ দেননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বম্ভরপুরে ইউএনওকে নিয়ে দুপক্ষ মারমুখী
  • ইউএনওর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে হামলার অভিযোগ বিএনপির বিরুদ্ধে
  • জামালপুরে মামলা নিয়ে কথোপকথন ফাঁস, পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব, ওসির প্রত্যাহার দাবি
  • ‘বীক্ষণ’ মুক্ত মঞ্চ ভেঙ্গে দেয়ার প্রতিবাদে সোনারগাঁয়ে মানববন্ধন 
  • পিরোজপুরে একটি গ্রামের শতাধিক পরিবার আতঙ্কে
  • পণ্য লুট, চাঁদাবাজির বিচার চান ব্যবসায়ীরা
  • বন্দরে রইসউদ্দিন হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন  
  • রাবির অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন স্থগিত, প্রতিবাদে মানববন
  • আবাসিক এলাকায় পশুর হাট না বসানোর দাবিতে আফতাবনগরে বিক্ষোভ