ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে জামায়াত ও এবি পার্টির শোক প্রকাশ
Published: 4th, May 2025 GMT
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক একসময় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।
আজ রোববার জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এক যৌথ শোকবাণীতে বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে জাতি একজন খ্যাতিমান আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও অভিভাবককে হারাল। আমরা তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। একই সঙ্গে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোকবার্তা দিয়েছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তাঁরা বলেছেন, আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে বাংলাদেশের আইন অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার সমুন্নত করতে তাঁর অবদানের কথা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আজ বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেছিলেন। ২০১৯ সালে আবদুর রাজ্জাক জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন। পরে আত্মপ্রকাশ করা এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন তিনি। তবে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি এই দল থেকেও পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুনব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক মারা গেছেন৩ ঘণ্টা আগেশোকবার্তায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আবদুর রাজ্জাক আশির দশকের পর থেকে সুপ্রিম কোর্টে সুনামের সঙ্গে আইন পেশায় জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করে তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ব্যক্তিগত জীবনে মিষ্টভাষী ও সমাজ পরিবর্তনে আকাঙ্ক্ষী আবদুর রাজ্জাক অত্যন্ত স্পষ্টবাদী মানসিকতার প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন।
এবি পার্টির দুই শীর্ষ নেতা আবদুর রাজ্জাকের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সহকর্মীদের প্রতি তাঁরা গভীর সমবেদনা জানান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য র স ট র আবদ র র জ জ ক আবদ র র জ জ ক র ম ত য ত
এছাড়াও পড়ুন:
গুমের শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে তহবিল গঠনের দাবি
গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন আট বছর গুম থাকা আহমদ বিন কাসেম (আরমান)। এই দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, এই ব্যক্তিরা ঠিকমতো চাকরি পাচ্ছেন না, ব্যাংক তাঁদের ঋণ দিতে ভয় পায়, বাড়ির মালিকেরাও বাড়িভাড়া দিতে ভয় পান।
বৃহস্পতিবার ‘ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং ইনিশিয়েটিভ ইন পোস্ট কনফ্লিক্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আহমদ বিন কাসেম এ কথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি (আইআইএলডি) এবং বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমাদের ভেতর এখন কী কাজ করছে, তা যদি আমি একটি শব্দে বলতে চাই, সেটা হলো আমরা ভীতসন্ত্রস্ত।’
গুমের শিকার সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবীর মতে, গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের ভয় এখন সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘ভীতি শুধু আমাদের ঘিরে নেই। যাঁরা আমাদের সংস্পর্শে আসেন, তাঁদের মধ্যেও ভীতি সঞ্চারিত হয়। একটা লোক অনেক মেধাবী। কিন্তু যখন কোনো উদ্যোক্তা জানতে পারেন, এই লোকটা একটা সময় গুম ছিলেন, তাঁকে তিনি চাকরি দিতে ভয় পাচ্ছেন।’
আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমার তো অন্তত একটা ল ডিগ্রি আছে, তাই দাঁড়াতে পারছি। কিন্তু অধিকাংশ ব্যক্তি এই মাসের ভাড়াটা কীভাবে দেবেন, তা জানেন না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করুন। আপনি যদি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আমাদের ট্যাক্সের (কর) একটি টাকাও খরচ করতে হবে না। সারা দুনিয়া এগিয়ে আসবে এই ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনের জন্য। ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করুন। যাতে অন্তত অর্থনৈতিক বিষয়ে তাঁদের আর চিন্তা করতে না হয়।’
গুমের শিকার হয়ে আহমদ বিন কাসেম আট বছর নিখোঁজ ছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আহমদ বিন কাসেমকে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে গুম করা হয়। আট বছর বন্দিশালায় থাকার পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট মুক্ত হন তিনি।
সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে গুম নিয়ে সত্যতা স্বীকার, দোষীদের ন্যায়বিচার, আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ গুমের শিকার ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীদের জন্য কিছু সুপারিশ উঠে আসে।
আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
শর্মিলা নওশিন ও তাজরিয়ান আকরামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন আইআইএলডির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম।