আমাজন জঙ্গলের ভেতর কুমিরে ভরা এক জলাভূমি। এর মধ্যেই জরুরি অবতরণে বাধ্য হয় একটি ছোট উড়োজাহাজ। পাইলটসহ পাঁচ আরোহী প্রাণে বেঁচে গেলেও পড়ে যান আরেক বিপদে। চারপাশে কুমির ঘিরে রেখেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, সাহায্যের কোনো চিহ্ন নেই। সেই বিভীষিকাময় পরিবেশে তাঁরা কাটিয়েছেন ৩৬ ঘণ্টা। শেষমেশ তাঁরা জীবিত উদ্ধার হন।

সম্প্রতি বলিভিয়ার আমাজন অঞ্চলে ঘটেছে এমন ঘটনা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বলিভিয়ার বেনি বিভাগের রাডার থেকে হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যায় উড়োজাহাজটি। এর পরপরই এটির সন্ধানে অভিযান শুরু হয়। তবে হদিস মিলছিল না। পরদিন শুক্রবার বলিভিয়ার আমাজন অঞ্চলের স্থানীয় জেলেরা এর খোঁজ পান।

বেনি বিভাগের জরুরি অভিযান পরিচালনা কেন্দ্রের পরিচালক উইলসন আভিলা বলেছেন, তিন নারী, এক শিশু এবং ২৯ বছর বয়সী পাইলট উদ্ধার হয়েছেন। তাঁরা শারীরিকভাবে বেশ ভালো অবস্থায় আছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমকে পাইলট বলেন, উড়োজাহাজটি উত্তরাঞ্চলীয় বলিভিয়ার বাউরেস শহর থেকে ত্রিনিদাদ শহরের দিকে যাচ্ছিল। ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড়োজাহাজটিকে ইতানোমাস নদীর কাছে জরুরি অবতরণের প্রয়োজন হয়।

আন্দ্রেস ভেলার্দে নামের ওই পাইলট আরও বলেন, হঠাৎ করেই উড়োজাহাজটি উড়তে পারছিল না। তিনি একটি জলাভূমিতে উড়োজাহাজটি অবতরণ করাতে বাধ্য হন। পাইলটসহ পাঁচ আরোহী উড়োজাহাজটির ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। কুমিরেরা চারপাশ ঘিরে ফেলেছিল। কোনো কোনো কুমির তিন মিটারেরও কম দূরত্বে চলে এসেছিল।

পাইলটের ধারণা, বিমানের ট্যাংক থেকে চুইয়ে পড়া পেট্রলের গন্ধই হয়তো ওই শিকারি প্রাণীদের দূরে রেখেছিল। তাঁরা পানিতে একটি অ্যানাকোন্ডা সাপও দেখতে পেয়েছিলেন। এমন আতঙ্কজনক পরিস্থিতির মধ্যেই তাঁরা উদ্ধার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

ভেলার্দে বলেন, ‘কুমিরদের জন্য আমরা পানি পান করতে পারিনি, কোথাও যেতেও পারিনি।’ যাত্রীদের একজনের সঙ্গে ময়দাজাতীয় খাবার কাসাভা ফ্লাওয়ার ছিল। তা দিয়েই তাঁরা ক্ষুধা মিটিয়েছেন।

জেলেরা উড়োজাহাজটির খোঁজ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে একটি হেলিকপ্টার পাঠায় কর্তৃপক্ষ। ওই পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বেনি অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক রুবেন টোরেস রয়টার্সকে বলেন, উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হওয়ার পর নানা জল্পনা ও তত্ত্ব ছড়িয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করে জীবিত ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে পেরেছে। এটাতেই তিনি খুশি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ইলট

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা: কী ঘটেছিল ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট

কী ঘটেছিল সেদিন

দিনটি ছিল রোববার। তারিখের হিসাবে ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা ঘটে সেদিন। চট্টগ্রাম থেকে ৪৪ জন যাত্রী নিয়ে বিজি-৪২৬ নম্বরের ফ্লাইটটি ঢাকায় জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের চেষ্টা করে। বিমানটি ছিল ফকার ফ্রেন্ডশিপ বা সংক্ষেপে এফ-২৭ । ওই সময় আবহাওয়া ছিল দুর্যোগপূর্ণ। শ্রাবণ মাস থাকায় সকাল থেকেই বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইছিল। বিমানটি চালাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন কায়েস আহমদ মজুমদার, সঙ্গে ছিলেন কো-পাইলট সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা। প্রচুর বৃষ্টির মধ্যে বেলা আড়াইটার দিকে বিমানটি দুই দফা অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়। পরে তৃতীয় দফার চেষ্টায় ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে রানওয়ে থেকে কিছুটা দূরে অবতরণ করতে গিয়ে বাউনিয়া বিলের মধ্যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। শুধু তা–ই নয়, বিমানটি প্রায় ২০ থেকে ২৫ ফুট পানির গভীরে ডুবে যায়। মৃত্যু হয় হতভাগ্য ৪৪ যাত্রী, দুই পাইলট, তিন ক্রুসহ ৪৯ জনের। অর্থাৎ দুর্ঘটনায় কেউ বেঁচে ছিলেন না। যাত্রীদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ, একজন জাপানি ও বাকিরা বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। জানা যায়, যাত্রীদের বেশির ভাগ মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার জন্য একটি সংযোগ ফ্লাইট ধরতে ঢাকায় আসছিলেন। এটিই বাংলাদেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা। বিমানটির ৪৪ যাত্রীর মধ্যে ১২ জন মাসকাট, ১০ জন দুবাই ও আবুধাবি এবং একজন বাহরাইন যাওয়ার যাত্রী ছিলেন। তাঁরা ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার হিসেবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসছিলেন।

বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পাইলট সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা: কী ঘটেছিল ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট