খেতে পেকে আছে সয়াবিন, কাটতে বাধা দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা
Published: 5th, May 2025 GMT
দীর্ঘ খরা, রোগবালাই মোকাবিলা করে খেতে সয়াবিন ফলিয়েছেন কৃষকেরা। এখন মাঠজুড়ে পাকা সয়াবিন। তবে তা দেখেও কৃষকের মনে আনন্দ নেই। কারণ, খেতের ফসল কাটা যাবে না বলে একটি গোষ্ঠী হুমকি দিয়ে রেখেছে কৃষকদের। এ কারণে পরিশ্রমের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকেরা।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চর কাছিয়া, চর ঘাসিয়া, চর কানিবগাসহ ছয়টি চরের পাকা সয়াবিন খেতেই পড়ে আছে। কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতা কৃষকদের ফসল কাটতে নিষেধ করেছেন।
প্রান্তিক কৃষক জাকির হোসেন, জলিল সরদার, জামাল মিয়া ও মো.
এমন পরিস্থিতিতে গত ১৭ এপ্রিল স্থানীয় প্রশাসন কৃষকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে। উত্তর চর বংশী ইউপি কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উত্তর চর বংশী ও দক্ষিণ চর বংশী ইউপির অন্তত ১১ জন কৃষক তাঁদের সয়াবিন কাটতে নিষেধ করার বিষয়টি উপস্থাপন করেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাঁরা। রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ওই সভায়।
চর কাছিয়া গ্রামের কৃষক আরিফুর রহমান বলেন, ‘ছয় বিঘা জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। সয়াবিন খুব ভালো হয়েছে। সয়াবিনের রং চড়েছে (পেকে গেছে)। আর দুই-তিন দিন পর কাটতে হবে; কিন্তু আমার জমির সয়াবিন কাটতে নিষেধ করেছে যুবদলের নেতা আমিনুল আজিজ ও বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ হওলাদারের লোকজন। এখন সয়াবিন কাটা নিয়ে খুব চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছি।’
চর ঘাসিয়ার রফিজ সরদারসহ কয়েকজন কৃষক জানান, তাঁরা একরপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা খাজনার নামে বিএনপি নেতাদের চাঁদা দেন। এরপর সয়াবিন কাটার অনুমতি দিয়েছে মেহেদী কবিরাজ ও জি এম শামীম গাজীর লোকজন। কিছু কৃষক এমন শর্তে সয়াবিন কাটছেন। অন্যরা আতঙ্কে আছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা চর ইন্দুরিয়া, চর জালিয়া, চর ঘাসিয়া, চর কাছিয়া, টুনির চর ও কানিবগার অধিকাংশ জমির মালিক সরকার। এসব জমি আগে আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভূমিহীনদের কাছ থেকে ইজারা হিসেবে প্রতি একর জমি থেকে ১০-১২ হাজার টাকা আদায় করছিলেন তাঁরা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর জমিগুলো দক্ষিণ চর বংশী ইউনিয়ন বিএনপির কিছু নেতার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এখন তাঁরাও ইজারার নামে একরপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করছেন।
সয়াবিন খেত দখল নিয়ে রায়পুর উপজেলার উত্তর চর বংশী ইউনিয়নে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষও ঘটেছিল গত মাসে। গত ৭ এপ্রিল বিএনপির ওই দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা ওই ইউনিয়নের খাসেরহাট, চর বংশী ও চর ঘাসিয়া গ্রামে সংঘর্ষে জড়ান। এতে জসিম উদ্দিন ব্যাপারী (৩৮) ও সাইজুদ্দিন দেওয়ান (৪০) নামের দুজন নিহত হন। নিহত দুজনের শরীরেই ধারালো অস্ত্রের জখম ছিল। গত ৫ আগস্টের পর দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র উত্তর চর বংশী ইউনিয়ন বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উত্তর চর বংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মো. ফারুক কবিরাজ এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন রায়পুর উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব জি এম শামীম।
জানতে চাইলে ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আমিনুল আজিজ ও ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ হওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চরের জমিগুলো বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সরকার পতনের পর ২০ শতাংশ জমি ফেলে রেখে ভয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন চলে যায়। ওই জমিগুলো আমরা কিছু নির্যাতিত বিএনপির নেতাকে চাষাবাদ করার জন্য দিয়েছি। তবে একরপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা দাবির তথ্য সঠিক নয়’। এদিকে মেহেদী কবিরাজ ও জি এম শামীম দুজনই হত্যা মামলার আসামি। এ কারণে পলাতক রয়েছেন তাঁরা। চেষ্টা করেও তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি।
রায়পুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর রায়পুর উপজেলায় সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চাষাবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ হেক্টরে। রায়পুরে এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন। তা ছাড়া সব ঠিকঠাক থাকলে এ বছরে অন্তত ৮৪ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে পুরো লক্ষ্মীপুর জেলায়। এ সয়াবিনের বাজারমূল্য অন্তত ৩২০-৩৫০ কোটি টাকা হবে। দেশের খ্যাতনামা ভোজ্যতেল ও পোলট্রি খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখান থেকে সয়াবিন সংগ্রহ করে।
কৃষকের কষ্টে লাগানো সয়াবিন কৃষকই ঘরে তুলবেন বলে জানিয়েছেন রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা এলাকার কৃষক ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা করে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি, জমিতে ফসল আবাদকারী কৃষকই ফসলের মালিক। কোনো ব্যক্তির দাবি থাকলে, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইউএনও আরও জানান, মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরগুলোতে অন্তত ৬০০-৭০০ একর জমি রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে অল্প কিছু জমি ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। সরকারের যে খাস সম্পত্তি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরির কাজ চলমান আছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ন ষ ধ কর র চর ব শ চর ঘ স য় ক ষকদ র সরক র র ল কজন র ফসল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে নিউ আইরিন ভেরাইটিজ ষ্টোরে চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
বন্দরে নিউ আইরিন নামীয় ভেরাইটিজ ষ্টোরে চুরির ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় দোকান মালিক তাওলাদ হোসেন বাদী হয়ে সোমবার (৫ মে) দুপুরে অজ্ঞাত নামা আসামী করে বন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করেন তিনি। যার মামলা নং- ৫(৫)২৫।
এর আগে সোমবার (৫ মে) রাত ১টা হইতে সকাল ৮টা মধ্যে যে কোন সময়ে বন্দর থানার চৌরাপাড়াস্থ লক্ষনখোলা এলাকায় উল্লেখিত দোকানে এ চুরি ঘটনাটি ঘটে।
ওই সময় অজ্ঞাত নামা চোরের দল ভিতরে প্রবেশ করে দোকানে থাকা বিভিন্ন দামি ব্যান্ডের পন্য ও সিগারেট যাহার আনুমানিক মূল্য ২ লাখ টাকা ও দোকানের ক্যাশবাক্সে রক্ষিত নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে নগদ অনুমানিক ১৫ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।
মামলার তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বন্দর থানার চৌরাপাড়াস্থ লক্ষনখোলা এলাকার মৃত দাদম বেপারী ছেলে তাওলাদ মিয়া উল্লেখিত এলাকায় নিউ আইরিন ষ্টোর নামীয় একটি ভেরাইটিজ দোকান রয়েছে। প্রতিদিনের ন্যায় সোমবার (৫ মে) রাত ১টায় দোকানী তাওলাদ হোসেন দোকানে তালা বন্ধ করে বাসায় ঘুমাতে যায়।
পরবর্তীতে একই দিন সকাল ৮টায় দোকানী তাওলাদ হোসেন দোকানে গিয়ে দেখতে পায় দোকানের টিনের চাল খোলা। তখন দোকানের তালা খুলে দোকানে প্রবেশ করে দেখতে পায় দোকানে থাকা বিভিন্ন দামি ব্যান্ডের পন্য, সিগারেট, ক্যাশবক্স থেকে নগদ টাকা এবং জমানো মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে নগদ টাকাসহ সর্বমোট ৪,৬৫,০০০/- টাকা চুরি করে নিয়া যায় অজ্ঞাত চোরের দল।
দোকান মালিক তাওলাদ হোসেন আরো জানান, বন্দর থানার চৌরাপাড়া লক্ষনখোলা এলাকার তাইজুল ইসলামের ছেলে রাসু একই এলাকার মৃত আউয়াল মিস্ত্রি ছেলে আনু, মৃত আবুল মতিন মিয়ার ছেলে হাসান, আব্দুল খালেক মিয়ার ছেলে নূর ইসলাম ও একই এলাকার মৃত আলী আকবর মিয়ার ছেলে আল আমিন দীর্ঘ দিন ধরে আশেপাশের এলাকায় একাধিকবার চুরি করে হাতেনাতে ধরা পরে।
আামার সন্দেহ তাহারা আমার দোকানে উক্ত চুরির ঘটনার সহিত জড়িত থাকতে পারে। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা জানান, দোকানে চুরি ঘটনায় নূর ইসলাম ও আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। চোরাইকৃত মালামাল উদ্ধারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে।