অতি দরিদ্র ২০ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুপারিশ
Published: 5th, May 2025 GMT
দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আসা মোট রোগীর মধ্যে অতি দরিদ্র ২০ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে সম্পূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
সোমবার (৫ মে) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের সদস্যরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
মোট রোগীর ২০ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে আর বাকি ১০ শতাংশকে বেসরকারি হাসপাতালে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা.
তিনি বলেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সংখ্যা বাড়ানো এবং দুই বছর পর পর এই ওষুধের তালিকা আপডেট করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এছাড়াও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
সংবিধান সংশোধনপূর্বক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন।
দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্যের শৃঙ্খলে আটকে থাকা দেশের স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে চূড়ান্ত সুপারিশ পেশ করেছে এই কমিশন। দেশের কোটি কোটি মানুষ এখনো মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। অনেকে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। যাদের সামর্থ্য আছে, তারাও বেসরকারি হাসপাতালের চড়া ব্যয়ের কারণে সীমাহীন কষ্টে পড়েন। এই বাস্তবতা বদলাতেই সরকার বড় ধরনের আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পথে হাঁটতে চায়।
স্বাস্থ্যসেবাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যসেবাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। একইসঙ্গে প্রস্তাব করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস’ নামের একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গঠনের। এর মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে পরিকল্পনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও তদারকি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য বিনামূল্যে নিশ্চিত করার পাশাপাশি কমিশন ইউনিক হেলথ আইডি ও স্মার্ট হেলথ কার্ড চালুর সুপারিশ করেছে। এই কার্ডের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকবে, যা চিকিৎসা কার্যক্রমকে আরো কার্যকর ও স্বচ্ছ করবে।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবার মূল্য নির্ধারণ, মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির সুপারিশ এসেছে কমিশনের প্রতিবেদনে। একইসঙ্গে প্রস্তাব এসেছে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধিরা আর সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না, বরং তাদের তথ্য ই-মেইলের মাধ্যমে দিতে হবে। এতে ঘুষ ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা কমবে বলে দাবি করা হয়।
কমিশন জানিয়েছে, প্রতিটি বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের একটি করে আঞ্চলিক রেফারেল হাসপাতাল গড়ে তোলা উচিত। পাশাপাশি যেসব হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ মানহীন ও অপ্রাতিষ্ঠানিক, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা।
নারী স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট গঠনের প্রস্তাব
প্রতিবেদনে একটি জাতীয় নারী স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট গঠনের প্রস্তাবও এসেছে। একইসঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা সম্প্রসারণ, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবেশাধিকার সহজ করার জন্য আলাদা আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে।
কমিশনের মতে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে দুই বছর। এজন্য আইনি সংস্কার, বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।
‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে বিশেষ ইউনিট গঠনের সুপারিশ
হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে প্রশিক্ষিত একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করতে সুপারিশ প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবাগ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি আধুনিক ডিজিটাল অভিযোগ নিষ্পত্তি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে। বিএমডিসি, বিএনএমসি, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিলের আইনগত ক্ষমতা ও কাঠামো কার্যকর করতে হবে। পেশাগত অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না; তদন্ত ও সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে প্রশিক্ষিত একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করতে হবে, যা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য মেডিকেল প্রফেশনাল ইন্স্যুরেন্স চালু করতে হবে। এমবিবিএস বা বিডিএস ব্যতীত কেউ ‘চিকিৎসক’ পরিচয়ে রোগী দেখলে, বিএমডিসি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র স প র শ কর ছ র প রস ত ব চ ক ৎসক ব সরক র র জন য ট গঠন গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকার তাপমাত্রা সম্পর্কে যা জানাল আবহাওয়া অফিস
রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় আবহাওয়া আজ দুপুর পর্যন্ত শুষ্ক থাকতে পারে। একইসঙ্গে দিনের তাপমাত্রা আগের মতোই বাড়তি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আজও গরমের অনুভূতি প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আজ শনিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। তবে, আবহাওয়া শুষ্ক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় দক্ষিণ/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮-১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। এছাড়া দিনের তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের আদ্রতা ছিল ৭৯ শতাংশ। আর গতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোনো বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি বলেও জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, গতকাল রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত সারাদেশের শনিবারের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো, বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।