দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আসা মোট রোগীর মধ্যে অতি দরিদ্র ২০ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে সম্পূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন।

সোমবার (৫ মে) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের সদস্যরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

মোট রোগীর ২০ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে আর বাকি ১০ শতাংশকে বেসরকারি হাসপাতালে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা.

সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেছেন, চিকিৎসক-ফার্মাসিউটিক্যাল সংক্রান্ত নীতি সম্পর্কিত বিষয়ে কমিশন সুপারিশ করেছে, ওষুধের নমুনা বা উপহার দিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সংখ্যা বাড়ানো এবং দুই বছর পর পর এই ওষুধের তালিকা আপডেট করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এছাড়াও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

সংবিধান সংশোধনপূর্বক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন।

দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্যের শৃঙ্খলে আটকে থাকা দেশের স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে চূড়ান্ত সুপারিশ পেশ করেছে এই কমিশন। দেশের কোটি কোটি মানুষ এখনো মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। অনেকে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। যাদের সামর্থ্য আছে, তারাও বেসরকারি হাসপাতালের চড়া ব্যয়ের কারণে সীমাহীন কষ্টে পড়েন। এই বাস্তবতা বদলাতেই সরকার বড় ধরনের আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পথে হাঁটতে চায়।

স্বাস্থ্যসেবাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যসেবাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। একইসঙ্গে প্রস্তাব করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস’ নামের একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গঠনের। এর মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে পরিকল্পনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও তদারকি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য বিনামূল্যে নিশ্চিত করার পাশাপাশি কমিশন ইউনিক হেলথ আইডি ও স্মার্ট হেলথ কার্ড চালুর সুপারিশ করেছে। এই কার্ডের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকবে, যা চিকিৎসা কার্যক্রমকে আরো কার্যকর ও স্বচ্ছ করবে।

বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবার মূল্য নির্ধারণ, মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির সুপারিশ এসেছে কমিশনের প্রতিবেদনে। একইসঙ্গে প্রস্তাব এসেছে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধিরা আর সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না, বরং তাদের তথ্য ই-মেইলের মাধ্যমে দিতে হবে। এতে ঘুষ ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা কমবে বলে দাবি করা হয়।

কমিশন জানিয়েছে, প্রতিটি বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের একটি করে আঞ্চলিক রেফারেল হাসপাতাল গড়ে তোলা উচিত। পাশাপাশি যেসব হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ মানহীন ও অপ্রাতিষ্ঠানিক, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা।

নারী স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট গঠনের প্রস্তাব
প্রতিবেদনে একটি জাতীয় নারী স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট গঠনের প্রস্তাবও এসেছে। একইসঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা সম্প্রসারণ, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবেশাধিকার সহজ করার জন্য আলাদা আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে।

কমিশনের মতে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে দুই বছর। এজন্য আইনি সংস্কার, বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।

‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে বিশেষ ইউনিট গঠনের সুপারিশ
হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে প্রশিক্ষিত একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করতে সুপারিশ প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। 

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবাগ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি আধুনিক ডিজিটাল অভিযোগ নিষ্পত্তি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে। বিএমডিসি, বিএনএমসি, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিলের আইনগত ক্ষমতা ও কাঠামো কার্যকর করতে হবে। পেশাগত অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না; তদন্ত ও সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে প্রশিক্ষিত একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করতে হবে, যা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য মেডিকেল প্রফেশনাল ইন্স্যুরেন্স চালু করতে হবে। এমবিবিএস বা বিডিএস ব্যতীত কেউ ‘চিকিৎসক’ পরিচয়ে রোগী দেখলে, বিএমডিসি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।

ঢাকা/হাসান/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র স প র শ কর ছ র প রস ত ব চ ক ৎসক ব সরক র র জন য ট গঠন গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু

দেশের সবচেয়ে পাঠকপ্রিয় সংবাদপত্র প্রথম আলো আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) উদ্‌যাপন করছে প্রতিষ্ঠার ২৭তম বর্ষপূর্তি। এ বছর ‘সত্যই সাহস’ স্লোগান সামনে রেখে নানা আয়োজনে দিনটি পালন করছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রাজধানীর খামারবাড়ির বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সারা দেশের কর্মীদের অংশগ্রহণে এক প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সূচনা হয়। সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীনের সঞ্চালনায় দিনব্যাপী এ আয়োজনে আলোচনা, কুইজ প্রতিযোগিতা ও সেরা কর্মীদের পুরস্কারসহ থাকছে নানা অনুষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলায় জেলায় চলবে নানা আয়োজন। চলছে প্রথম আলোর লেখক–সুধী পাঠক আর শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে সম্মিলনীর প্রস্তুতি। কাগজে, অনলাইনে, ভিডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে প্রথম আলোর বিভিন্ন আয়োজন।
প্রথম আলো কাগজটি মোট ৪ দিন প্রকাশিত হবে বর্ধিত কলেবরে। ৪ দিনে থাকবে ৪টি ক্রোড়পত্র। এতে লিখেছেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সেরা লেখকেরা। থাকবে দেশবরেণ্য শিল্পীদের আঁকা প্রচ্ছদ।
৪ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার বের হয়েছে ‘বৈষম্য পেরিয়ে’।
২০২৪ সালের বিপুল অভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতা পথে এসেছিল বৈষম্যের বিলোপ চেয়ে। এই ক্রোড়পত্রে লেখকেরা খুঁজে দেখেছেন রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামোয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও রাজনীতির অঙ্গনে বৈষম্যের রূপ। খোঁজার চেষ্টা করেছেন উত্তরণের উপায়।
৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার প্রকাশ পাবে ‘বৈষম্যের অন্দরে’
সমাজ আর জনগোষ্ঠীর গভীরে থেকে যাওয়া বৈষম্য প্রতিফলিত হয় রাষ্ট্রে। আবার রাষ্ট্রীয় বৈষম্য সামাজিক বৈষম্যকে ভিত্তি দেয়। দেশের নারী–লেখক ও ভাবুকেরা উন্মোচন করে দেখিয়েছেন সমাজে ছড়িয়ে থাকা নানা বৈষম্যের চেহারা।
৬ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার আসছে ‘তারুণ্যের দিগন্ত’

তরুণদের সামনে নতুন পৃথিবীর আহ্বান। কিন্তু সে আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পথে শত বাধা ও বৈষম্যের প্রাচীর। আবার তরুণেরাই সেসব বৈষম্যের বাধা উপড়ে ফেলে এগিয়ে চলেন। তরুণদের পথের সেসব বাধা আর বাধা পেরোনোর গল্প নিয়ে এই ক্রোড়পত্র।
৭ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার প্রকাশিত হবে ‘আলোর গল্প’
সাংবাদিকতা শেষ পর্যন্ত জনমানুষের জন্য। সত্য ও তথ্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য প্রথম আলো সেসব মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। প্রথম আলোর নানা উদ্যোগের লক্ষ্যও মানুষ। এই ক্রোড়পত্র গত একটি বছরে প্রথম আলোর সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গল্পের সমাবেশ।
অনলাইনে থাকছে আকর্ষণীয় আয়োজন
লেখা, ছবি, ভিডিও, পডকাস্টসহ নানা কনটেন্ট দিয়ে সাজানো হবে প্রথম আলো ডটকম। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দালোকিত দিনগুলোতে প্রথম আলো ডটকম থাকবে জমজমাট। পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রথম আলোর ফলোয়ারদের জন্য থাকবে বাড়তি কিছু, উৎসবের উপহার।

প্রথম আলো বন্ধুসভার একটি করে ভালো কাজ

এরই মধ্যে সারা দেশে প্রথম আলোর শতাধিক বন্ধুসভা ‘একটি করে ভালো কাজ’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সুধী সম্মিলনী আয়োজনের জন্য প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বন্ধুসভা কাজ করে চলেছে উৎসাহের সঙ্গে। ঢাকা বন্ধুসভাও ১৩ নভেম্বর আয়োজন করতে যাচ্ছে বন্ধুদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব।
২০২৩ সালে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্লোগান ছিল ‘হারবে না বাংলাদেশ।’ গত বছর প্রথম আলো বলেছিল ‘জেগেছে বাংলাদেশ’। সত্যে তথ্যে ২৫, সত্যে তথ্যে ২৬ পেরিয়ে এল ২৭ বছর পূর্তির উৎসব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ