রাবিতে বিভাগের জুনিয়রদের টানা ৫ ঘণ্টা র্যাগিং, বিচার দাবি
Published: 5th, May 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একই বিভাগের জুনিয়র দুই শিক্ষার্থীকে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে র্যাগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় তাদের অশ্লীল কবিতা আবৃত্তি ও কুকুরের মতো হয়ে যৌন অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করা হয় বলে জানা যায়।
শনিবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অ্যাকাডেমিক ভবনের ছাদে এ র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। রবিবার (৪ মে) দুপুরে মানসিক চাপ, লজ্জা ও নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযুক্তরা হলেন, হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মুকমিনুল ইসলাম চৌধুরী, গোলাম রাব্বী, মাহাবুব হোসেন, মেহেদী হাসান মিঠু, শাহ পরান এবং শাহাদাত হোসেন। র্যাগিং চলাকালে ওই ব্যাচের আরো ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
বহিরাগতদের নিয়ে রাবি ছাত্রদলের মিছিল, সাইকেল চুরির অভিযোগ
রাবিতে স্টুডেন্টস অ্যাচিভমেন্টস ফেয়ার
অন্যদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন- একই বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আব্দুল্লাহ শেখ, মেজবাহ দেওয়ান ও তাদের কয়েকজন সহপাঠী।
লিখিত অভিযোগে শুধু দুজনের নাম থাকার বিষয়ে তারা জানান, অন্যরা ভয়ে প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ দিতে আসেনি। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে এবং ঘটনার বিচার চেয়ে তারাই শুধু সাহস করে এসেছেন।
লিখিত অভিযোগপত্রে তারা উল্লেখ করেছেন, ‘শনিবার (৩ মে) সন্ধ্যায় আমাদের বিভাগের সদ্য সিনিয়র কয়েকজন ভাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ছাদে আমাদের কয়েকজন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সামনে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। এ সময় তারা আমাদের বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে গালিগালাজ এবং আমাদের দিয়ে বিভিন্ন অশালীন অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করেন। সেই সঙ্গে আমাদের দিয়ে অশ্লীল কবিতা আবৃত্তি করার পাশাপাশি কুকুরের মতো হয়ে যৌন অঙ্গভঙ্গি দেখানোর জন্য বাধ্য করেন। এতে আমরা অনাগ্রহ প্রকাশ করলে তারা মা–বাবা তুলে গালিগালাজ করেন, যা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য চরম অবমাননাকর।”
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে জানিয়ে তারা বলেছেন, “সিনিয়র ভাইয়েরা আমাদের মোবাইল ফোন জমা রেখে এসব কর্মকাণ্ড করেছে, যাতে কেউ কোনো প্রমাণ রাখতে না পারে। তারা এ-ও বলেছে, এগুলো নিয়ে অভিযোগ দিয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না। গতকালের বিষয়টির জন্য আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এ ঘটনাটি আমাদের জন্য চরম লজ্জাজনক ও ভীতিকর অভিজ্ঞতা।’ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
ঘটনা সম্পর্কে অভিযুক্ত ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের গোলাম রাব্বী বলেন, “র্যাগিংয়ের মতো কোনো ধরনের ঘটনা সে সময় হয়নি। একটি টুর্নামেন্টে আমাদের বিভাগ জয়ী হয়। সে উপলক্ষে জুনিয়রদের সঙ্গে আমাদের খাওয়া দাওয়ার একটি আয়োজন ছিল। আপনি ওদের (ভুক্তভোগীদের) ব্যাচের অন্য কারো থেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, আমাদের তরফ থেকে এ ধরনের কিছু হয়নি।”
আরেক অভিযুক্ত মাহাবুব হোসেন বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলোর কোনোটিই সত্য নয়। গতকাল একটি খাবারের আয়োজন ছিল। এর বেশি কিছুই হয়নি। আমাদের কাছে খাবারের ভিডিও, নিজেদের একসঙ্গে তোলা ছবি সবই আছে। অভিযোগগুলো সবই মিথ্যা।”
অভিযুক্ত মেহেদী হাসান মিঠুও একই সুরে কথা বলে অভিযোগ অস্বীকার করেন। আরেক অভিযুক্ত মুকমিনুল ইসলাম চৌধুরীর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং শাহাদাত হোসেন ফোন রিসিভ করেননি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবর রহমান বলেন, “র্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলে দুইজন শিক্ষার্থী অভিযোগ জমা দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া ওই ব্যাচের ক্লাস ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে সে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।”
তিনি বলেন, “এ নিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলে মূল ঘটনা জানার চেষ্টা করা হবে। যদি র্যাগিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, সে যে–ই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র ব ব যবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
হিথরো বিমানবন্দরে থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা খালেদা জিয়ার
লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা শেষে প্রায় চার মাস পর ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে রানওয়ে থেকে খালেদা জিয়াকে বহন করা কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
আজ রাত ৯টা ৪০ মিনিটে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
এর আগে সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১০ মিনিটে খালেদা জিয়া দেশে ফেরার উদ্দেশে ছেলে তারেক রহমানের লন্ডনের বাসা থেকে বের হন। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এছাড়া বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিএনপি মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া ঢাকার উদ্দেশে লন্ডনের বাসা থেকে বের হয়েছেন। তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে গাড়ি চালিয়ে মাকে বিমানবন্দর নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, গাড়িতে সামনের আসনে আছেন খালেদা জিয়া। আর পেছনের সিটে আছেন দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান।
জানা যায়, লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ উড়োজাহাজে করে স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে রওনা করবেন তিনি। আগামীকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পোঁছানোর কথা রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার। তার সঙ্গে দুই পুত্রবধূ ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্যসহ মোট ৯ জন আসছেন।
লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ নানা রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে যান বিএনপি চেয়ারপারসন।
লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। পরে ২৫ জানুয়ারি থেকে তিনি তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।